ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নেত্রকোনায় উসমান গনির ‘রামবুটান বিপ্লব’

প্রকাশিত: ০৫:০৭, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নেত্রকোনায় উসমান গনির ‘রামবুটান বিপ্লব’

বিদেশী সুস্বাদু ফল ‘রামবুটান’ চাষ করে ব্যাপক সারা ফেলেছেন নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামের বাসিন্দা উসমান গনি। প্রথমে শখের বসে চারা রোপণ করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে রামবুটানের চাষ করছেন তিনি। এতে উসমান গনি নিজে যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি তার সহযোগিতায় দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এ বিদেশী ফলটি। জানা গেঝে পল্লী চিকিৎসক উসমান গনি এক সময় মালয়েশিয়ায় থাকতেন। ১৯৯৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। আসার সময় পরিবারের সদস্যদের জন্য দুই কেজি রামবুটান ফল কিনে নিয়ে আসেন। ফল খাওয়ার পর বীজগুলো উচ্ছিষ্টের সঙ্গে বাড়ির আঙিনায় ফেলে দেন। কিছুদিন পর ওই বীজ থেকে অঙ্কুরিত হয়ে দুটি চারা জন্মে। বাড়ির আগাছা পরিষ্কার করতে গিয়ে চারা দুটি নজরে পড়ে তার। তখন আগ্রহী হয়ে চারাগুলো ভাল জায়গায় রোপণ করে পরিচর্যা করতে থাকেন। আস্তে আস্তে চারা দুটো বড় হয়। ১৯৯৮ সালের জুলাই মাসে গাছগুলোতে প্রথম ফলন দেখা দেয়। পরে কলম করে আরও চারটি চারা রোপণ করেন তিনি। বর্তমানে তার বাড়িতে ছয়টি রামবুটানের গাছ রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গাছ ফল দিচ্ছে। বাকি চারটি গাছ আগামী বছর ফলবে বলে আশা করছেন তিনি। উসমান গনি জানান, এ বছর ৩শ’ কেজি রামবুুটান বিক্রি করতে পেরেছেন তিনি। প্রতি কেজি ৩শ’ টাকা দরে তার মোট বিক্রয়মূল্য এসেছে ৯০ হাজার টাকা। ফলটি বিক্রির জন্য বাজারে নিতে হয় না তার। বিভিন্ন এলাকার লোকজন এসে বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া প্রথমবার ফলন হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর তিনি কলম করে ২-৩শ’ চারা বিক্রি করছেন। একেকটি চারার দাম রাখেন ৫শ’ টাকা। সব মিলিয়ে রামবুটান থেকে বছরে প্রায় লাখ দুয়েক টাকা আয় হচ্ছে তার। উল্লেখ্য, রামবুটান ফল দেখতে অনেকটা কদম ফুলের মতো। কাঁচা অবস্থায় এই ফলটি দেখতে সবুজ বর্ণের। কিন্তু পাকলে টকটকে লাল রং ধারণ করে। খোসা ছাড়িয়ে খেতে হয়। খোসার ভেতরের অংশটি দেখতে ও স্বাদে অনেকটা লিচুর মতো। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও মিনারেল রয়েছে। মালয়েশিয়া ছাড়াও থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, লাউস ও কম্বোডিয়ায় রামবুটান ফল চাষ হয়। এসব দেশে রামবুটান অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ফল। সাধারণত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত রামবুটান ফল পাওয়া যায়। রোপণের পাঁচ-ছয় বছরের মধ্যেই গাছে ফলন আসে। এদিকে উসমান গনি শুধু রামবুটানই নয়। এর পাশাপাশি তিনি তার বাড়িতে আরও শতাধিক ধরনের ফল চাষ করছেন। নিজ বাড়ি ও বাড়ির আঙ্গিনাটিকে রীতিমতো বাগান বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। রামবুটান চাষে তিনি এলাকার অন্যান্য কৃষকদেরও উৎসাহিত করছেন। তার দেখাদেখি একই এলাকার আব্দুল ওয়াহেদ, বিনোদ মিয়া, আব্দুল মতিন, দুলাল মিয়া, কামরুল মিয়া, মঞ্জিল হক, সাইকুল মিয়া ও কামাল মিয়া রামবুটান চাষ করছেন। কলমাকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বিদেশী ফল রামবুটান চাষ করে উসমান গনি এলাকায় বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা এলাকার অন্যান্য বাগান মালিকদেরও রামবুটান চাষে উৎসাহিত করছি। রামবুটান চাষে ঝুঁকি কম এবং এটি লাভজনক একটি ফল। জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে এর ফলন ভাল হয়। কলমের চারা লাগালে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে। উসমান গনির বদৌলতে রামবুটান এখন দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি। সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে
×