ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সুচি সরকার ও সামরিক বাহিনী গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সুচি সরকার ও সামরিক বাহিনী গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি সরকার ও দেশটির সামরিক বাহিনীকে গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করেছে কুয়ালালামপুরের আন্তর্জাতিক গণআদালত। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে প্রতীকী বিচারে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা, কাচিন, কারেনসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর দুই শ’ লোকের জবানবন্দী শুনে এবং বিভিন্ন তথ্যচিত্র ও বিশেষজ্ঞ মতামত পর্যালোচনা করে রোমভিত্তিক সংগঠন পার্মানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সাত বিচারকের প্যানেল এই প্রতীকী রায় ঘোষণা করে। মালয় ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদে গত ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে পাঁচ দিন এই গণআদালতের শুনানি চলে। সূত্র জানায়, ট্রাইব্যুনালের সভাপতি আর্জেন্টিনার সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন শুক্রবার গণআদালতের প্রতীকী রায় ঘোষণা করে বলেন, তাদের বিচারে মিয়ানমারের শাসকগোষ্ঠী গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। অবশ্য এই প্রতীকী বিচারের রায় মানার কোন আইনী বাধ্যবাধকতা কারও নেই। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত আইনবিদ, অধিকারকর্মী ও গবেষকরা এই গণআদালতে মিলিত হয়েছিলেন মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান দমনাভিযান বন্ধের দাবি নিয়ে। তবে বিচার মানার বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এর মাধ্যমে মিয়ানমারের প্রতি প্রবল চাপ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পিপলস ট্রাইব্যুনালের আমন্ত্রণে বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও এই শুনানিতে বিবৃতি দেন। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখার অভিজ্ঞতা তিনি কুয়ালালামপুরে তুলে ধরেন। ইন্টারন্যাশনাল এ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলার্সের সাবেক সভাপতি ডেনিয়েল ফিয়েরেস্তেইন ছাড়াও এই ট্রাইব্যুনালের বিচারক প্যানেলে ছিলেন ইসরাইলের যুদ্ধাপরাধ তদন্ত-প্রক্রিয়ায় যুক্ত মালয়েশীয় অধিকারকর্মী জুলাইহা ইসমাইল, ঢাকার সেন্টার ফর স্টাডি অব জেনোসাইড এ্যান্ড জাস্টিসের উপদেষ্টা কম্বোডীয় আইনজীবী হেলেন জার্ভিস, অস্ট্রেলিয়ার মেকুইয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সাবেক প্রধান গিল এইচ বোয়েরিঙ্গার, ইন্দোনেশিয়ার মানবাধিকার আইনজীবী নুরসিয়াবানি কাতজাসুংকানা, ইরানের মানবাধিকার কর্মী আইনজীবী সাদি সদর এবং ইতালির সুপ্রীমকোর্টের সলিসিটর জেনারেল নেল্লো রোসি। মালয়েশিয়ার স্টার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে ১৭ দফা সুপারিশ করেছে পার্মান্যান্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল। জাতিসংঘের একটি ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’ দলকে মিয়ানমারে গিয়ে পূর্ণ তদন্ত চালানোর সব ধরনের সুযোগ দেয়ার কথাও সেখানে রয়েছে। পিপলস ট্রাইব্যুনাল বলেছে, মিয়ানমার সরকারকে তাদের সংবিধান সংশোধন করে সব জাতিগোষ্ঠীকে নাগরিকত্বের অধিকার দেয়ার পাশাপাশি সব ধরনের বৈষম্যমূলক আইন বাতিল করতে হবে। বাংলাদেশ, মালয়েশিয়াসহ যেসব দেশ লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভার বহন করছে, তাদের আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে পিপলস ট্রাইব্যুনালের সুপারিশে। গণআদালতের সুপারিশ তুলে ধরে অধ্যাপক বোয়েরিঙ্গার বলেন, গণআদালতের বিচারে উঠে আসা সমস্ত তথ্য-প্রমাণ, রায় এবং সুপারিশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হবে, যাতে তারা মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিতে পারে। এই প্রতীকী বিচার কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা মালয় ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সিভিলাইজেশন ডায়ালগের পরিচালক চন্দ্র মোজাফফর এই রায়কে মিয়ানমার সরকারের অপরাধ চিহ্নিত করার পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেন। আসিয়ান বা ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থায় এই পিপলস ট্রাইব্যুনালের তথ্য-প্রমাণ কাজে লাগানো যাবে বলেও তিনি মত দেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর ১৯৭৯ সালে ইতালির বোলোনিয়ায় যাত্রা শুরু করে পার্মান্যান্ট পিপলস ট্রাইব্যুনাল। বিভিন্ন দেশে যুদ্ধপরাধ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে এ পর্যন্ত ৪৩টি প্রতীকী বিচারের আয়োজন করেছে এ সংগঠন।
×