ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাডভোকেট চিত্রা রায়;###;সুপ্রীমকোর্ট, বাংলাদেশ

আইনী পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আইনী পরামর্শ

প্রশ্ন : আমরা পাঁচজন খুবই ভাল বন্ধু। এর ভেতর তিনজন ছেলে এবং আমরা দু’জন মেয়ে। একই ইউনিভার্সিটির সহপাঠী। এ বন্ধুত্ব প্রায় দু’বছরের। ক্লাস আড্ডা, পড়াশোনা এই নিয়ে সারাদিন মেতে থাকি। একজন ছাড়া আমরা সবাই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। সময় পেলেই প্রায়ই সবাই মিলে বন্ধু ও বান্ধবীর বাসায় বেড়াতে যাই। আমার বন্ধদের সবার আম্মা, আব্বা ও ফ্যামিলির অন্য মেম্বারদের সবার সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। যার কারণে কোন বাসায় বেড়াতে আমাদের কোন দ্বিধা বা সঙ্কোচ নেই। এমতাবস্থায় একদিন আমাদের সবার ‘একজন বন্ধু’র বাসায় যাওয়ার কথা। আমরা সবাই মোবাইলে যোগাযোগ করে ওই বন্ধুটির বাসায় রওনা দেই। আমার যাওয়ার রাস্তা ফাঁকা থাকার কারণে আমি সবার আগে ওদের বাসায় পৌঁছে যাই। কিন্তু ওই সময় আঙ্কেল বা আন্টি কেউ বাসায় ছিল না। এ রকম আগেও দু-একবার হয়েছে। কিন্তু এতদিনের সম্পর্কের ভেতর আমার বন্ধুদের কাউকে কখনও অন্য রকম মনে হয়নি। কিছুক্ষণ গল্প করার পর আমার বন্ধুটি হঠাৎ আমাকে জোর করে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করে। আমিও জোর করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে তাড়াতাড়ি ওদের বাসা থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসি। বাসায় এসে ঘরের দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কাঁদি। এখন আমি কি করব। আমি অন্য বন্ধুদের সঙ্গে কিছু শেয়ারও করতে পারছি না এবং গত দু’দিন ক্লাসেও যাইনি। অন্য বন্ধুরা সবাই মোবাইলে যোগাযোগ করছে কেন ক্লাসে যাচ্ছি না। কিন্তু ক্লাসে আমি ওই বন্ধুটির সামনে মুখ দেখাব কি করে। এক সঙ্গে ক্লাস করব কিভাবে? না আমি কি কোন আইনী পদক্ষেপে যাব। আইনী পদক্ষেপে গেলে কি আমি কোন প্রতিকার পাব? শিউলি, ঢাকা থেকে উত্তর : শিউলি আপনার জীবনে যে ঘটনাটি ঘটে গেছে এটা একটা মেয়ের জীবনের জন্য খুবই লজ্জা এবং অপমানের। এখন আপনি মানসিকভাবে খুবই খারাপ অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন। ধৈর্য ধরুন। আপনার জীবনের ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে বোঝা যাচ্ছে আপনার সহপাঠীর অপরাধটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ধারা ১০ এর যৌন পীড়নমূলক অপরাধের আওতায় পড়বে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ ধারা ১০ এ যৌন পীড়নকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ধরা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ ধারা ১০ উপধারা (১) এ বলা হয়েছে কোন পুরুষ অবৈধভাবে তার যৌন কামনা চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তার শরীরের যে কোন অঙ্গ বা কোন বস্তু দ্বারা কোন নারী বা শিশুর যৌন অঙ্গ বা অন্য কোন অঙ্গ স্পর্শ করেন তাহলে তার এই কাজ হবে যৌন পীড়ন এবং উক্ত পুরুষ দশ বছর কিন্তু অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদ-ে দন্ডনীয় হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ডেও দন্ডনীয় হবেন। আপনি যদি আইনী পদক্ষেপে যেতে চান তাহলে আপনার এলাকাধীন থানায় অথবা নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল ১-৫টির যে কোন একটিতে পিটিশন মামলা দায়ের করতে পারেন। অভিযোগ গঠনের পর আদালতের নিকট যদি বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া প্রমাণিত হয়। আপনার বন্ধুটি ধারা-১০ উপধারা (১) অনুসারে আপনাকে জড়িয়ে ধরে যৌন কামনা চরিতার্থ করার চেষ্টা করছিল, এই অভিযোগটি যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে সে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ এর ধারা-১০ উপধারা ১ অনুসারে যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে সে অনধিক দশ বছর কিন্তু অন্যূন তিন বছর সশ্রম কারাদ-ে দ-নীয় হবে এবং অতিরিক্ত অর্থদন্ডে ও দন্ডনীয় হবে। উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে যে, ‘যৌন পীড়ন মামলায় কেবলমাত্র নিপীড়িত বালিকার সাক্ষ্য যাহা আদালতের নিকট বিশ্বাসযোগ্য বলিয়া প্রতীয়মান হয়, উহার ভিত্তিতে অন্য কোন সমর্থনাত্মক সাক্ষ্য ব্যতিরেকেই অভিযুক্তকে শাস্তি প্রদান করা যাইবে যদি না অন্য কোন রকম কোন বাধ্যকর কোন অবস্থা বিদ্যমান না থাকে। মিষ্টি এবং অন্যান্য বনাম রাষ্ট্র ৬ বিসিএল ১৩৮
×