ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গী কমান্ডার জিব্রিল ৪ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গী কমান্ডার জিব্রিল ৪ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ র‌্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গী কমান্ডার হওয়া ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে জিব্রিলের চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। এর আগে বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের মামলায় তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে এগারোটায় কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩-এর অধিনায়ক (সিও) লেঃ কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, বুধবার গভীর রাতে দক্ষিণ বনশ্রী থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির কমান্ডার মেহেদী হাসান ওরফে জিব্রিলকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্টসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি জব্দ করা হয়। লেঃ কর্নেল তুহিন মাসুদ জানান, র‌্যাম্প মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশও নেন তিনি। তবে ‘১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে পাল্টে যায় তার জীবন। র‌্যাম্প মডেল থেকে হয়ে ওঠে জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’র কমান্ডার। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে র‌্যাব ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ নামে জেএমবির আরও দুটি ব্রিগেডের তথ্য পায়। গুলশানের হলি আর্টিজানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েক সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেডের ব্যাকআপ বা রিজার্ভ হিসেবে সক্রিয় হতে শুরু করে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’। সম্প্রতি বেশ কয়েক উগ্র ও জঙ্গী সদস্য গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারে এই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী থেকে এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়। লেঃ কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, মেহেদী হাসানের বাবার নাম খোরশেদ আলম। তার বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফলের রাজাপুরে। তিনি দারুল ইহসান ইউনিভার্সিটিতে পড়াশুনা করেছেন। বিবিএ সম্পন্ন করার পর কিছুদিন র‌্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ করেন। সোনারগাঁও-রেডিসনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতে র‌্যাম্প মডেলিং জিব্রিল। জেএমবিতে যোগদানের পর তার কাজ ছিল কর্মী সংগ্রহ করা ও ‘হিজরতে’ সহযোগিতা করা। সুন্দর চেহারা ও মোটিভেশন ক্ষমতার কারণে দ্রুত ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ কমান্ডারের পদ পায় আবু জিব্রিল। আবু জিব্রিল কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘আইটি এক্সপার্ট’ হিসেবে উর্ধতন জঙ্গী নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কাজ অনলাইনে পরিচালনা করত। তার বাসা থেকে এরকম যোগাযোগ স্থাপনের অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। তার সঙ্গে হলি আর্টিজানে হামলাকারী ও কল্যাণপুরের জঙ্গী আস্তানার জঙ্গীদের যোগাযোগ ছিল। জিজ্ঞাসাবাদে আবু জিব্রিল র‌্যাবকে জানায়, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় বেশ কয়েকজন নকুন কর্মীকে বাইয়াত (শপথ) করিয়েছেন সে। জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’-তে আনসার (সাহায্যকারী), মুজাহিদ (যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড ও অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে জানায় সে। সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বদর ব্রিগেড দুর্বল হওয়ার পর মূলত আবু জিব্রিলের নেতৃত্বেই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’ বিভিন্ন অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন করে। পরে যে কোন স্থানে নাশকতা করার মতো পরিকল্পনা নেয় জেএমবি।
×