ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রোহিঙ্গারা খাদ্য সঙ্কটে পড়বে না ॥ ত্রাণমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গারা খাদ্য সঙ্কটে পড়বে না ॥ ত্রাণমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ দেশে কোন খাদ্য সঙ্কট নেই। আর প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোন রকম খাদ্য সঙ্কটে পড়বে না বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। তিনি বলেন, একটি মানুষও না খেয়ে মারা যাবে না। আমরা সেভাবেই আমাদের কাজ করে যাচ্ছি। রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিস্থিতি জানাতে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন ত্রাণমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল বলেন, এ পর্যন্ত না খেয়ে মারা গেছে এমন দৃষ্টান্ত কোথাও নেই, এটাই বাংলাদেশের সাফল্য। প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-পীড়নের শিকার হয়ে তিন সপ্তাহে ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে এসেছে। কক্সবাজারে আগের ৪ লাখের সঙ্গে নতুন শরণার্থীদের রাখতে ১৪টি আশ্রয় কেন্দ্র করেছে সরকার। বিশাল সংখ্যার এই শরণার্থীর জন্য নানা উদ্যোগে ত্রাণ সরবরাহ করা হলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল কি না জানতে চাইলে মায়া বলেন, আপনাদের বুঝতে হবে, এই অল্প সময়ে চার থেকে পাঁচ লাখ লোক হঠাৎ করে চলে এসেছে। যেসব জায়গায় তারা রয়েছেন, সেই জায়গা থাকার উপযোগী না। অতিবৃষ্টি চলছে, মানুষ কিন্তু স্থির থাকতে পারছে না, সেখানে কিছুটা সমস্যা তো থাকবেই। তবে এখন ৮০ ভাগ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে দাবি করে তিনি বলেন, খাদ্য সহায়তা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছাচ্ছে, বিলি-বণ্টন হচ্ছে, কোন বিশৃঙ্খলা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বান বিশ্ববাসীর মন ছুঁয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সব দেশ এগিয়ে আসছে, যারা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলেন তারাও কিন্তু অনেক দূর এগিয়ে এসেছেন, অন্যরাও এগিয়ে আসবেন। শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসন কাজে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর বিষয়ে মায়া বলেন, বিরাট কাজে সহযোগিতা করার জন্য সেনাবাহিনীকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছি। ইতোমধ্যেই তারা কাজও করছেন। রাস্তা করা, শেল্টার তৈরি করা। পাহাড়ে তাৎক্ষণিকভাবে রাস্তা করা সাধারণের পক্ষে সম্ভব না। এই শরণার্থীদের অস্থায়ীভাবে রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এরা মিয়ানমারের নাগরিক, তাদের ফিরে যেতে হবে। না যাওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার সহযোগিতা আমরা দেব, এটা আমাদের প্রতিজ্ঞা। এ সময় সচিব বলেন, প্রথম দিন থেকেই ত্রাণ গ্রহণের কাজটি সেনাবাহিনী করছে। মন্ত্রী বলেন, বিশাল সংখ্যার শরণার্থীদের অবস্থানের সময় নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনীর পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিজিবি কেউ কিন্তু বসে নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দায়িত্ব ভাগ করে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করছে, একটু সময় দরকার। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়ে সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার প্রতিশ্রুত সহায়তা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল এবং ২০ টন আটা এসেছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ত্রাণ বিতরণের কাজ বাংলাদেশ সরকার সমন্বয় করছে বলে জানান সচিব শাহ কামাল। তিনি বলেন, অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের সঙ্গে থাকছে। ত্রাণ আসা অব্যাহত আছে, আমরা মনে করছি আমাদের সমস্যা উত্তরণে দেশী-বিদেশী ত্রাণ সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। চট্টগ্রাম বন্দরের পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিমান বন্দর দিয়ে ত্রাণ গ্রহণ করা হচ্ছে। যারা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তারা পররাষ্ট্র এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ত্রাণ দিচ্ছেন। এটা ইএফডি রিসিভ করছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর শ্রমিক ও ট্রাক দিচ্ছে ত্রাণ পৌঁছাতে। এরপর তা কক্সবাজার নিয়ে পাঁচটি গুদামে রাখা হচ্ছে। সেখান থেকে স্থানান্তর করতে উখিয়ার কুতুপালংয়ে ১৪টি গুদাম ঘর নির্মাণ করছি, ইতোমধ্যে ছয়টি হয়ে গেছে, বাকি আটটি হচ্ছে। ত্রাণ ১৪টি গুদামে রেখে প্রয়োজন অনুযায়ী বিতরণ করা হবে। সচিব আরও বলেন, তুরস্ক প্রতিদিন ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে খাবার দিচ্ছে, বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচী (ডব্লিউএফপি) দিচ্ছে ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষকে। এছাড়া জেলা প্রশাসন এক লাখ মানুষকে খাবার দিচ্ছে। প্রতিনিয়ত ত্রাণ আসছে। কেউ কেউ অর্থ, কেউ চাল, ডাল, গম, চিড়া, কেউ তাঁবু, কেউ কেউ প্রয়োজনীয় অন্যান্য জিনিসপত্র দিয়ে সহায়তা করছে। দুই মাসের মধ্যে নিবন্ধন আগামী দুই মাসের মধ্যে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব শাহ কামাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিবন্ধন শেষ করতে আরও দুই মাস সময় লাগবে। আগে ১০টি পয়েন্ট থেকে নিবন্ধনের কাজ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে ৩০টি পয়েন্টে এই নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে। এই সংখ্যা দিন দিন বাড়বে। পাসপোর্ট অধিদফতর সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন করাচ্ছে। ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছেন, এদের মধ্যে বায়োমেট্রিক নিবন্ধন হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৫ রোহিঙ্গার।
×