ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

হুমকির মুখে চলনবিল

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হুমকির মুখে চলনবিল

খাল, বিল, নদী-নালার বিচিত্র সমারোহ এ দেশের মূল্যবান সম্পদ। প্রকৃতির অফুরন্ত ভাণ্ডারে পূর্ণ এই দেশের প্রবহমান নদ-নদী আজ তাদের নিজস্ব গৌরব হারিয়ে যেন সঙ্কটের আবর্তে পড়েছে। বহু নদী বিলুপ্তির পথে। বাকিগুলো শীর্ণকায় অবস্থায় কোনমতে টিকে আছে। পাবনার চলনবিলও এক সময় পানিতে ছিল টইটম্বুর। এই অঞ্চলের জনগণের জীবন ও জীবিকার অন্যতম অবলম্বন এই চলনবিল এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে। প্রকৃতি যেমন অফুরন্ত দানে ভরিয়ে দেয় সেই প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে মানুষ যখন তার ওপর অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে, সেটার ফলভোগও মানুষকেই করতে হয়। এক সময় চলনবিলে যে পানি প্রবাহিত হতো তা আজ ক্রমশ শুকিয়ে গেছে। ফলে এই চলনবিলে যে পরিমাণ প্রজাতির মাছ উৎপাদন হতো তাও আজ বিলুপ্তির পথে। শুধু তাই নয়, এই চলনবিলের মধ্য দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল উল্লেখ করার মতো। তবে সড়ক-মহাসড়কের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন সেভাবে হয়নি। এই ক্ষেত্রে উন্নয়নের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞদের যথাযথ মতামতও নেয়া হয়নি। পরিবেশের ভারসাম্য বিঘিœত করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এই ধরনের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রকৃতির নিজস্ব গতির ওপর অনেকটা বিরুদ্ধাচরণ বটে। ফলে চলনবিল শিকার হয়েছে হরেক রকম বিপর্যয়ের। মৎস্য সম্পদের ওপর পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। জীববৈচিত্র্যকে করেছে হুমকির মুখোমুখি। পরিণামে অস্তিত্ব সঙ্কটে আজ চলনবিল। নদীমাতৃক এবং বৃষ্টিস্নাত বাংলাদেশে পানির ঘাটতি হবার কথাই নয়। তারপরেও পানি শূন্যতায় চলনবিলের বেহাল অবস্থা। আর যারা এই বিলের সঙ্গে তাদের জীবন ও জীবিকাকে অবিচ্ছেদ্য করে রেখেছিল তাদেরও আজ বিপন্ন অবস্থা। যে চলনবিলে এক সময় বিভিন্ন প্রজাতির জলজ সম্পদ ছিল সেসব আজ ধ্বংসের মুখে। বিভিন্ন খাল বিলে পানি চলে যাওয়াতে পাবনার এই চলনবিলে সারাবছরেও পানি থাকে না বললেই চলে। ধারণা করা হচ্ছে অন্তত ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। বিভিন্ন কারণে বিলের আয়তনও সঙ্কুচিত হয়েছে। অপরিকল্পিত স্থাপনা এবং সড়ক, মহাসড়ক বিনির্মাণ চলনবিলের আয়তন কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ। ২০০১ সালে চলনবিলের ওপর দিয়ে দীর্ঘ ৫৫ কি.মি, বনপাড়া সড়কের কারণে এর স্বাভাবিক পরিবেশকে বিঘিœত করেছে বলে পরিবেশবিদদের ধারণা। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় গতি আনলেও স্থায়ী প্রভাব ফেলেছে চলনবিলের পরিবেশ ও প্রকৃতির ওপর। প্রকৃতির সঙ্গে বৈরী আচরণ করা হলে তার আশপাশের জনগোষ্ঠীর জীবন সুস্থির আর স্বাভাবিক থাকে না। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রকৃতির নিজস্ব নিয়মে তার সৃষ্ট উপাদানের ওপর কিছু রদবদল ঘটবেই। এর ফল ইতিবাচক বা নেতিবাচক যাই হোক তাকে মেনে নেয়া ছাড়া কোন বিকল্পপথ থাকেও না। কিন্তু মানুষ যদি অপরিকল্পিত কর্মযোগে উন্নয়নের নামে প্রকৃতির বিপর্যয় ঘটায় সেটা হবে সত্যিকারের বিপর্যয়। এ ব্যাপারে সবার সচেতনতা থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে। চলনবিলের এমন বেহাল অবস্থায়ও চলনবিলকে যদি তার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেয়া যায় বিভিন্ন সংস্কার প্রকল্পের মাধ্যমে, তাহলে সম্ভাবনাময় মৎস্য সম্পদের উৎপাদন বহুগুণ বেড়ে যাবে।
×