ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীর মনি রানীর ঠাঁই হল নেত্রকোনার অনাথালয়ে

প্রকাশিত: ২০:৩১, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাজশাহীর মনি রানীর ঠাঁই হল নেত্রকোনার অনাথালয়ে

নিজস্ব সংবাদদাতা, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) ॥ অবশেষে রাজশাহীর ১৫ বছরের কিশোরী মণি রাণী মোহন্তের ঠাঁই হল নেত্রকোণা জেলার দুর্গাপুর উপজেলার মানব কল্যাণকামী অনাথালয় আশ্রমে। আজ বৃহস্পতিবার মানব কল্যানকামী অনাথালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়নের সাথে কথা বলে জানা যায়, মনি রানী মোহন্ত (১৫) রাজশাহী জেলায় বাঘমারা উপজেলার হুলি গ্রামের স্বপন কুমার মোহন্তের মেয়ে। ২০০৮ সালে তার মা বুলবুলি রাণী মোহন্ত স্বামী সন্তানকে ছেড়ে ধর্মান্তরিত হয়ে অন্য এক জনকে বিয়ে করে। লজ্জায়, ক্ষোভে মনির বাবা নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। তখন মনির বয়স ৫ বৎসর। মনি অনাথ হয়ে যায়। এই সময় নওগাঁ শহরের তেল ব্যবসায়ী উত্তম রায় মেয়েটিকে নিয়ে গৃহ কর্মে নিয়োজিত করে। উত্তম রায়ের ব্যবসায় ক্ষতি গ্রস্থ হওয়া মনিকে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে হুলি গ্রামে পাঠিয়ে দেন। হুলি গ্রামে এসে মনি তার মা বাবাকে খোঁজ করতে আরম্ভ করে। পরে মনি জানতে পারে লাউবাড়িয়া গ্রামে তার মা আছে। ওই দিন বিকেলে তার মার কাছে গেলে তার মা তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানায়। সন্ধ্যায় পুনরায় তার হুলিখালী গ্রামে এসে তার দাদীর কাছে এসে আশ্রয় চায়। তার দাদীও অন্যের আশ্রয়ে থাকে । যার জন্য দাদীও মনিকে আশ্রয় দিতে রাজী হয় নি। এ বিষয়ে ১৩ ই সেপ্টেম্বর একটি গনমাধ্যমে ”মেয়েটি এখন যাবে কোথায় ?” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পর মাইনোরেটি ওয়াচ নামের সংগঠনের সভাপতি এ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ এই প্রতিবেদনটি দেখে তিনি এবং সংগঠনের সহ সভাপতি তপন কুমার পান্ডে রাজশাহী জেলায় হুলি গ্রামে যেয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় মনিকে উদ্ধার করে এনে নেত্রকোনা জেলায় দুর্গাপুর উপজেলায় চন্ডিগড় গ্রামে মানব কল্যাণকামী অনাথালয়ে মঙ্গলবার ভর্তি করিয়ে দেন। আশ্রিতা মনি‘র সাথে কথা বলে জানা যায় , এই আশ্রমে এসে তার খুবই ভাল লাগছে। সে বলল এখানে আমি মা পেয়েছি, বাবা পেয়েছি, ভাই-বোন পেয়েছি। এখন আমার কোন চিন্তা নেই। আপনারা আমার জন্য আশির্বাদ করবেন আমি যেন ভাল থাকি। মাইনোরেটি ওয়চের সহ সভাপতি তপন কুমার পান্ডে বলেন, মেয়েটি এখানে এসে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অল্প সময়ের মাঝে আশ্রমের অন্যান্য শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ সবার সাথে মিশে গেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা নিত্যানন্দ গোস্বামী নয়ন বলেন, ১৯৯৬ সালে অসহায়, বিপদাপন্ন, অনাথ, অনাশ্রিত মানবের কল্যাণের জন্য তার নিজস্ব ৩৩৭ ডিসিমেল জমি দান করে মানব কল্যাণকামী অনাথালয় স্থাপন করেন। বর্তমানে ১১২ জন অনাথ ছেলে মেয়ে অধ্যয়ন রত আছে। এর মধ্যে ৫৭ জন মেয়ে। মনিকে নিয়ে ৫৮ জন হল। সবারই এখানে লেখাপড়ার সাথে সাথে নাচ-গাণ, অভিনয়, টেইলারিং ট্রেনিং, মৎস চাষ, গো পালন ট্রেনিং দেওয়া হয়। মনিকেও আমরা লেখাপড়ার সাথে সাথে কর্মমুখি ট্রেনিং দিয়ে স্বাবলম্ভী করে তুলব।
×