ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মুন্সীগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে আগুন ॥ ৫ পুরুষ ও এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মুন্সীগঞ্জে টেক্সটাইল মিলে আগুন ॥ ৫ পুরুষ ও এক নারী শ্রমিকের মৃত্যু

মীর নাসিরউদ্দিন উজ্জ্বল, চর মুক্তারপুর ঘুরে এসে ॥ মুন্সীগঞ্জের চর মুক্তারপুরের আইডিয়াল টেক্সটাইল মিলে অগ্নিকাণ্ডে ছয় শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পুলিশ কারখানাটির জিএমসহ পাঁচ জনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। লাশগুলো ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। কারখানাটির পরিবেশের ছাড়পত্র নবায়ন ছিল না এবং পরিবেশ অধিদফতরের অবজারবেশন অমান্য করেই চলছিল। আগুনে কারখানার কেমিক্যাল থেকে সৃষ্ট গ্যাস সকলের মৃত্যুর কারণ বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মু. ছিদ্দিকুর রহমান। জেলা প্রশাসক সায়লা ফারজানা জানিয়েছেন, এই অগ্নিকা-ের সঠিক কারণ চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। মৃতদের প্রত্যেক পরিবারকে তাৎক্ষণিক ২৫ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এদিকে কেমিক্যালের বিষাক্ত গন্ধে এলাকার পরিবেশ মারত্মকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, কেমিক্যালে আগুনের কারণে যে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে এতে আমাদেরই এখানে টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। তাই আশপাশের সাধারণ মানুষের সমস্যাতো হবেই। এদিকে কারখানাটির আশপাশে বসবাসরত মানুষের নানারকম সমস্যা হচ্ছে। প্রতিবেশী সেতারা বেগম এবং সায়মা বেগম জানান, তাদের শিশুদের নিয়ে ঘরে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সদর উপজেলার ধলেশ্বরী তীরের এই টেক্সটাইল মিলের কেমিক্যালের গুদামে আগুন থেকে বিষাক্ত গ্যাসে ৬ শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় কারখানার জিএমসহ ৫ জন আটক করা হয়েছে। সকাল পৌনে ১০টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট দুই ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ওই মিলের গুদামে রাখা কারখানার বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল পুড়ে গেছে। ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শওকত আলী মজুমদার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তার সঙ্গে কমিটির অন্যান্য সদস্যগণও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বলে তিনি জানান। মজুমদার বলেন, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, কারখানাটির ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগেছে। এখানেই কেমিক্যালের গুদাম। টেক্সটাইল মিলের জন্য নানা রকম কেমিক্যাল ব্যবহার করা হতো। এই গুদামেই ওয়েলডিং করা হচ্ছিল। এই ওয়েলডিংয়ের স্ফূলিঙ্গ গিয়ে কেমিক্যালের ওপর পড়তেই আগুন ধরে যায়। পরে পুরো এলাকা অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ফলে সবাই বিষাক্ত গ্যাসে দম বন্ধ হয়ে মারা যায়। গুদামে কেমিক্যাল আগুন থেকে বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার পর ওই কারখানার ৬ তলা ভবনের দো, তিন এবং চারতলা থেকে আরও তিনজনসহ মোট ছয়জনের লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ। আগুনের কারখানার বিপুল পরিমাণ কেমিক্যাল পুড়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ সদর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন বলেন, কারখানার কেমিক্যাল গুদামে ওয়েলডিংয়ের কাজ করার সময় অগ্নিকা-ের এই ঘটনা ঘটে। এটি নিছক দুর্ঘটনা। এই ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারখানার জিএম গিরিশ সরকারসহ ৫ জনকে আটক করেছে। এই ঘটনায় রাতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল। মৃতদের পরিচয় ॥ নিহত শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছেন চুয়াডাঙ্গা জেলার রহিম বক্সের ছেলে ইস্রাফিল (২৩), সিরাজগঞ্জ জেলার সাহাদাতগঞ্জের আমির হামজার ছেলে নাজমুল (২২), সিরাজগঞ্জ জেলা বড় মাথা থানার হানিফ বেপারীর ছেলে বাবু মিয়া (২২), ঝিনাইদাহের কালিগঞ্জ থানার মৃত সাহেদ আলীর ছেলে সজিব (২৩), মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানার কলিমউদ্দিনের ছেলে রতন মিয়া (২২) এবং বরগুনা জেলার বাবনা থানার চারাখালি গ্রামের রশিদের স্ত্রী কারখানার বাবুর্চি হাসিনা (৫০)।
×