ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সুচিকে দেয়া ইউনিসনের সম্মাননা স্থগিত

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সুচিকে দেয়া ইউনিসনের সম্মাননা স্থগিত

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ায় মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির সমালোচনার মধ্যেই এক যুগ আগে তাকে দেয়া সম্মাননা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন- ইউনিসন। এছাড়া আরও কয়েকটি ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান সুচিকে দেয়া সম্মাননার বিষয়ে পর্যালোচনা শুরু করেছে। যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের আন্দোলনের কারণে দীর্ঘদিন গৃহবন্দী থাকা সুচিকে ২০০৫ সালে সম্মানসূচক সদস্যপদ দিয়েছিল ইউনিসন। এ সংগঠনের সভাপতি মার্গারেট ম্যাককি বলেছেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের দুর্দশার মধ্যে দিয়ে দিন যাচ্ছে। এই অবস্থায় ইউনিসনে আউং সান সুচির সম্মানসূচক সদস্যপদ স্থগিত করা হয়েছে। আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বানে তিনি সাড়া দেবেন। ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও জানিয়েছে, গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনে থাকার দিনগুলোতে সুচিকে দেয়া সম্মাননা তারা স্থগিত করার কথা ভাবছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতো ব্রিস্টল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষও উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, আমরা ১৯৯৮ সালে আউং সান সুচিকে সম্মানসূচক ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী দিয়েছিলাম। তিনি সে সময় মিয়ানমারে মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সেই বিবেচনায় এখনই তার সম্মাননা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ত সমীচীন হবে না। তবে আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরিস্থিতি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস স্টুডেন্টস ইউনিয়নও এক সময় সুচিকে তাদের সম্মানসূচক প্রেসিডেন্ট পদ দিয়েছিল। মিয়ানমারের বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই সম্মাননা তারা প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়েছে। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতির পাশা বলেছেন, রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধে সুচির নিষ্ক্রিয়তা এবং তার বর্তমান অবস্থানের সঙ্গে যে ইউনিয়ন একমত নয়, সেজন্যই এ প্রতীকী পদক্ষেপ। গ্লাসগো, বাথ, কেমব্রিজসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় গত ৩০ বছরে মিয়ানমারের গণতন্ত্রের প্রতীক সুচিকে সম্মানসূচক ডিগ্রী দিয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি শহর ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও তাকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে। গত মাসের শেষে রাখাইন রাজ্যে নতুন করে সেনা অভিযান শুরুর পর চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। সেনাবাহিনী কীভাবে গ্রামে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে মানুষ মারছে, ঘরের ভেতরে আটকে রেখে কীভাবে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে, লুটপাট চালিয়ে কীভাবে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেই বিবরণ পাওয়া যাচ্ছে শরণার্থীদের কথায়। সেনাবাহিনীর মতো সুচির দলও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মেনে নিতে রাজি নয়। রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধের কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচিত হতে হচ্ছে সুচিকে। ১৯৬৭ সালে অক্সফোর্ডেও সেন্ট হিউজ কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রী নেন তখনকার তরুণ সুচি। তার স্বামী ড. মাইকেল এ্যারিস এক সময় ওই কলেজে শিক্ষকতাও করেছেন। সুচি গৃহবন্দী হওয়ার পর ১৯৯৩ সালে তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট দেয় অক্সফোর্ড। ওই ডিগ্রী তিনি গ্রহণ করেন মুক্তি পাওয়ার পর, ২০১২ সালে। অক্সফোর্ড শহর কর্তৃপক্ষ ১৯৯৭ সালে মিয়ানমারের এই নেত্রীকে যে ‘ফ্রিডম অব দি সিটি অব অক্সফোর্ড এ্যাওয়ার্ড’ দিয়েছিল, তা এখন প্রত্যাহার করার কথা ভাবছেন কাউন্সিলররা।
×