ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সুচির বক্তব্য ১৪ দলের প্রত্যাখ্যান ॥ রোহিঙ্গা ফেরত নিন

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সুচির বক্তব্য ১৪ দলের প্রত্যাখ্যান ॥ রোহিঙ্গা ফেরত নিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি দেয়া এবং সেনাবাহিনীর নির্যাতনের বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না আসায় মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচি’র সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন ১৪ দলীয় জোট। সুচির ভাষণের একদিন পর বুধবার ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ কথা বলেন। আসন্ন দুর্গা পূজা ও প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে হিন্দু ও বৌদ্ধ নেতাদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আউং সান সুচি তার ভাষণে রোহিঙ্গা শব্দটিই উচ্চারণ করেননি। বারবার তিনি রোহিঙ্গাদের বাঙালী বলে আখ্যায়িত করেছেন। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেন্দ্রীয় ১৪ দল তার বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ আবাসভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তার হাতে নির্যাতিত হয়ে দেশ ছেড়ে রোহিঙ্গাদের বাস্তুহীন জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের অবশ্যই নিজ দেশে ভোটাধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ফিরিয়ে নিতে হবে। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ব জনমত গড়ে তুলছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, যারা মিয়ানমারের নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে, আমরা ১৪ দলের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা করছি। আমরা নিন্দা করি সুচির আজকের এই ভূমিকাকে। তিনি শান্তিতে নোবেল পেয়ে কীভাবে এই নির্যাতনকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন? শরণার্থীদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে চাপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা অনুরোধ করব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ বিশ্বের বড় শক্তিধর দেশকে, তারা যেন এই ইস্যুতে এগিয়ে আসে। লাখ লাখ নিরীহ মানুষের দিকে তাকিয়ে মিয়ানমারের ওপর যেন চাপ সৃষ্টি করে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বব্যাপী এখন প্রশংসিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানাই, অভিনন্দন জানাই যে আজকে বাংলাদেশের জনপদে লাখ লাখ নির্যাতিত অসহায় রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছেন। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বিএনপির পক্ষ থেকে যে জাতীয় ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সফলতার কারণে আজকে সমগ্র বিশ্ব জেগে উঠেছে। ওরা (বিএনপি) কী বলছে, সেটা দেখার বিষয় না। বিশ্ব বিবেককে রোহিঙ্গা ইস্যুতে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই সভাপতিম-লীর সদস্য বলেন, যেখানে অহিংস নীতিই হচ্ছে বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি, সেখানে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনে ১৪ দল মর্মাহত। অতীতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও হত্যা করেছে। তারা এখন রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে। তাদের নির্মমতা সবাই জানে। মতবিনিময় সভায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নেতা অশোক বড়ুয়া রোহিঙ্গা পরিস্থিতির কারণে এদেশের বৌদ্ধ সম্প্রদায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখানে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী বৌদ্ধদের ওপর হামলা-নির্যাতন ও নানা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। জবাবে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশাসহ ১৪ দল নেতারা বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিতে এনে বৌদ্ধদের নিরাপত্তা রক্ষায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণের আশ^াস দেন। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান সবাই আমাদের দেশে সম্মিলিতভাবে বসবাস করে আসছি। আগামীতেও আমাদের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় থাকবে। যে কোন মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা হবে। আমরা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস করতে চাই। তিনি বলেন, আমাদের সম্প্রীতির মধ্যে কেউ যদি ভাঙ্গন ধরানোর চেষ্টা করে তাহলে তাদের যে কোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, হিন্দুদের দুর্গাপূজা, বৌদ্ধদের প্রবারণা পূর্ণিমা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে প্রবারণা পূর্ণিমায় ফানুস উৎসব বন্ধ রেখে সাশ্রয়কৃত অর্থ এদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কল্যাণে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় ১৪ দলের পক্ষ থেকে মোহাম্মদ নাসিম বৌদ্ধদের ধন্যবাদ জানান। বৌদ্ধ প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক সুধানন্দ মহাথেরো বলেন, আউং সান সুচির বক্তব্য শুনে খুব উত্তেজিত হয়ে গেছি। তিনি জানেন না, এটা কিভাবে হতে পারে? দেশের প্রধান যিনি, তাকে দেখতে হবে, জানতে হবে; এই দশ লাখ রোহিঙ্গাও মানুষ। আমাদের দেশে মুসলিম-হিন্দু বৌদ্ধ-খ্রীস্টান; আমরা সবাই এদেশের নাগরিক। রোহিঙ্গারা মুসলিম হোক এরাও মানুষ। তাই এই মানুষদের শান্তিপূর্ণভাবে ফিরিয়ে নিতে হবে। শেখ হাসিনার জন্মদিন ‘মানবতা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন ‘মানবতা দিবস’ হিসেবে পালনের প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ প্রস্তাব করেন। সভায় উপস্থিত নেতারা তা সমর্থনও করেন। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারাবিশ্বে মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করায় শেখ হাসিনার জন্মদিনকে মানবতা দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব করছি। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭১তম জন্মদিন। মোহাম্মদ নাসিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় ১৪ দল নেতাদের মধ্যে দিলীপ বড়ুয়া, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, নজিবুল বাশার মাইজভা-ারী, ফজলে হোসেন বাদশা, ডাঃ শাহাদাৎ হোসেন, শেখ শহিদুল ইসলাম, এসকে সিকদার, ডাঃ অসীত বরণ রায়, ইসমাইল হোসেন, আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। হিন্দু ও বৌদ্ধ নেতাদের মধ্যে অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক, সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরো, এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, মনিন্দ্র কুমার দেবনাথ, অশোক বড়ুয়া, রঞ্জিত বড়ুয়া, পিয়ার বড়ুয়া, সুমন বড়ুয়া প্রমুখ বৈঠকে যোগ দেন।
×