ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জাতিসংঘে ট্রাম্পের ভাষণে বিস্মিত দ. কোরিয়া ও জাপান

উ. কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৪:৩৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উ. কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেয়া হবে

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মঙ্গলবার দেয়া ভাষণ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র উত্তর কোরিয়ার দুই মিত্র দেশ ট্রাম্পের ভাষণে কিছুটা অবাক। কারণ তিনি উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উন কেবল নয় বরং আড়াই কোটি জন অধ্যুষিত পুরো দেশটি ধ্বংস করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে এটি ট্রাম্পের প্রথম ভাষণ। তিনি কিম জং উনকে একজন ‘রকেট ম্যান’ অভিহিত করে বলেন মিত্রদের রক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনে পুরো উত্তর কোরিয়া ধ্বংস করে দেবে। মার্কিন মিত্র জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া ট্রাম্পের ভাষণে তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। তবে উত্তর কোরিয়ার অপর দুই প্রতিবেশী চীন ও রাশিয়া উত্তেজনা বাড়িয়ে তোলার জন্য ট্রাম্পের সমালোচনা করেছে। কারণ তিনি কোরীয় উপদ্বীপে যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিয়েছেন। চীনের সংবাদপত্রগুলোতে যুদ্ধের আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ট্রাম্পের ভাষণের সমালোচনা করা হয়েছে। চায়না ডেইলির বুধবার প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়, অন্য দেশের কথা না ভেবে ওয়াশিংটন আর পিয়ংইয়ং কেবল নিজেদের স্বার্থ নিয়ে পড়ে আছে। উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়ার যে হুমকি ট্রাম্প দিয়েছেন তা বিদ্যমান উত্তেজনাপূর্ণ অবস্থাকে আরও জটিল করে তুলবে। লক্ষণীয় যে, ট্রাম্পের ভাষণের পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে নীরব আছেন। তার কোন মন্তব্য না আসায় অনেকে অবাক হয়েছেন। তিনি এর আগে উত্তর কোরিয়া সম্পর্কিত ট্রাম্পের প্রতিটি কথা সমর্থন করেছেন। মঙ্গলবার ট্রাম্পের ওই ভাষণের পর আবের মুখপাত্র মোটোসাদা মাতানোর মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে তিনি কিছু বলতে অস্বীকার করেন। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইনের মুখপাত্র পার্ক সু হিউন ট্রাম্পের ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়ার’ হুমকি নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু এটিই বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়া পরিস্থিতি যে গুরুত্বপূর্ণ এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ বিষয়ে কাজ করা যে প্রয়োজন ট্রাম্প সেটাই তুলে ধরেছেন। কিম জং উনের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করে মুন পিয়ংইয়ংকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছেন বলে ট্রাম্প ইতোপূর্বে মুনের সমালোচনা করেছেন। ওই ভাষণে ট্রাম্প বলেন যে, উত্তর কোরিয়া পূর্ব এশিয়ার স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রকে হুমকি দিচ্ছে। তার প্রশাসন এখন শক্তি প্রয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল শক্তি যেমন আছে তেমনই আছে ধৈর্য। কিন্তু আমাদের নিজেদের অথবা মিত্রদের রক্ষা করতে যদি বাধ্য করা হয় তবে উত্তর কোরিয়াকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দেয়া ছাড়া আমাদের সামনে আর কোন বিকল্প থাকবে না।’ দুটি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা এবং উত্তর কোরিয়া যাকে হাইড্রোজেন বোমা বলে দাবি করছে এ রকম একটি শক্তিশালী পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর ট্রাম্প প্রশাসন ও উন সরকারের মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এখনই পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সমরিক পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী নয়। সেক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়া প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে বসতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ট্রাম্পের ভাষণকে ঘৃণাপূর্ণ মধ্যযুুগীয় ভাষণ বলে মন্তব্য করেছেন। ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে সরে আসার বিষয়ে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন সে রকম বিশ্ব বিপজ্জনক অবস্থার মুখোমুখি হবে। সুইডেনের পররষ্ট্রমন্ত্রী মারগোট ওয়ালস্ট্রোম বলেছেন, ‘এটি একটি ভুল জায়গায় ভুল লোকের সামনে ভুল ভাষণ’। ভেনিজুয়েলা ও ব্রাজিলের সরকার প্রধানও ট্রাম্পের ভাষণের সমালোচনা করেছেন।
×