ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ক্রান্তিকাল কাটবে কবে!

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ক্রান্তিকাল কাটবে কবে!

গত এক দশকের মধ্যে মারাত্মক বন্যা শেষ হতে না হতেই রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল বাংলাদেশের জন্য বড় আঘাত। এ নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনীতিও শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি তার ভাষায় নানা সমালোচনা করছে যা বহুলাংশে যুক্তিহীন এবং তথাকথিত ‘ভোটের রাজনীতি।’ কিন্তু মৌলবাদী ও ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন দল রোহিঙ্গা ইস্যুতে দেশকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভৎস ছবি ও ভিডিও ক্লিপ পোস্ট করে, বিভ্রান্তিকর তথ্য এবং নানা গুজব প্রচার করে তারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পাঁয়তারা করছে। এডিটকৃত এবং ভুয়া ছবি প্রচার করে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিকামী নিরস্ত্র মানুষের ওপর চালানো বর্বরতা অপেক্ষা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ও পৈশাচিক! এ ধরনের প্রচারণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধকে যেমন ছোট করা হচ্ছে, তেমনি পাকিস্তানের তৎকালীন বর্বর সেনাবাহিনী এবং এদেশীয় রাজাকার, আলবদর ও আল-শামস্ বাহিনীর অপরাধকে আড়াল করার চেষ্টা রয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর যে পৈশাচিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তাকে আমরা কোনভাবেই ছোট করে দেখছি না। কিন্তু একাত্তরে স্বাধীনতার জন্য আমাদের যে মূল্য দিতে হয়েছে তার সঙ্গে এর তুলনা করা বাতুলতা মাত্র। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি অংশের বিরুদ্ধে নানা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। হঠাৎ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ নানা সঙ্কটে পড়ছে। ফলে তাদের অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাংলাদেশের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল, জঙ্গী ও সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং সুযোগসন্ধানী অপরাধীরা (যেমন ইয়াবা ব্যবসায়ী) এদের দলে ভিড়াতে পারে। কক্সবাজার এবং চট্টগ্রামের স্থানীয় বাসিন্দারা বিশাল এই বাড়তি জনসংখ্যার চাপে নানা ধরনের আর্থ-সামাজিক সমস্যার মুখোমুখী হচ্ছে। এ সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাবে। রোহিঙ্গা শরণার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করছে। অসৎ উদ্দেশ্যে কেউ কেউ তাদের মদদ এবং আশ্রয়ও দিচ্ছে। কক্সবাজার/চট্টগ্রামের নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে কোন ক্রমেই তাদের ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ দেয়া সমীচীন হবে না। এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। নির্ধারিত এলাকার বাইরে কোন রোহিঙ্গা শরণার্থী দেখা গেলে অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে খবর দেয়া উচিত। জনসংখ্যার বিশাল চাপ, আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কেবল মানবিক কারণে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়দানের নৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিকতার এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি বিশাল ঝুঁকিও নিয়েছেন। গত ৪৬ বছরে আমরা বিহারিদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠাতে পারিনি। চলমান সঙ্কটের আগে থেকে যে চার লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অবস্থান করছে তাদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রেও কোন অগ্রগতি নেই। উল্টো আরও ছয় লাখ যুক্ত হলো! কবে এরা নিজ দেশে, নিজের ভিটেয় ফিরে যাবে? মিয়ানমার সরকার নানাভাবে বাংলাদেশকে উস্কানি দিচ্ছে। রাখাইনের বিভিন্ন অঞ্চলকে তারা ‘বাঙালিমুক্ত’ ঘোষণা করছে। এ পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে আমরা কি পারব এসব শরণার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে? রোহিঙ্গাদের জাতিগত পরিচয়, নাগরিকত্ব এবং মৌলিক মানবাধিকারের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহমর্মিতা রয়েছে। আমরা মানবিক হব। কিন্তু কতটা? বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর থেকে
×