ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুভ দেবীপক্ষ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

শুভ দেবীপক্ষ

মঙ্গলবার অতি প্রত্যুষে শুভ মহালয়ার মাধ্যমে দেশব্যাপী সূচনা হয়েছে দেবী পক্ষের। প্রকৃতপক্ষে এর মাধ্যমেই শুরু হয়ে থাকে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার। তবে সপরিবারে দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমন ঘটে শুভ মহালয়ার মাঙ্গলিক আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। আনুষ্ঠানিকভাবে ২৬ সেপ্টেম্বর মহা ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে পাঁচ দিনব্যাপী উৎসব শুরু হয়ে মহাসমাপ্তি ঘটবে ৩০ সেপ্টেম্বর শুভ বিজয়া দশমীতে। প্রাথমিক তথ্যে জানা যায়, এবার ৩০ হাজারেরও বেশি ম-পে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে, যা গত বছরের তুলনায় বেশি। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক আনন্দ সংবাদ। কেবল রাজধানীতেই প্রায় আড়াই শ’ ম-পে পূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর পরেই অবস্থান বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের। এবার অনেক নতুন স্থানেও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দুর্গাপূজা। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর পারস্পরিক ধর্মীয় সহাবস্থান ও সম্প্রীতির ওপর সর্বদাই সবিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করেছে। প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং একাধিকবার বলেছেন, ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’। দুর্গাপূজাও দিনে দিনে উৎসবমুখর ও সর্বজনীন হয়ে উঠেছে। ধর্ম-বর্ণ-মত ছোট-বড়-ধনী-গরিব নির্বিশেষে দেশ ও সমাজের প্রায় সর্বস্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে সার্বজনীন দুর্গোৎসবে। বাংলাদেশ যে সুমহান যুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত একটি অসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, তা এর মাধ্যমেই স্বতঃপ্রমাণিত। প্রায়াসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে স্বভাবতই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ঘরে ঘরে সাজ সাজ রব। পূজায় ছোট-বড়-আবালবৃদ্ধবণিতা নির্বিশেষে সবার জন্য চাই নতুন জামাকাপড়-জুতা-শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ-ফতুয়া-প্যান্ট-শার্ট-ধুতি-পাঞ্জাবি ইত্যাদি। হাট-বাজার-মার্কেট-সুপারশপ-সুপারমলগুলোও হয়ে উঠেছে রমরমা আলোকোজ্জ্বল ঝলমলে। নিত্যনতুন ডিজাইন ও ফ্যাশনদুরস্ত জামা-কাপড়-জুতায় ভরপুর। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে কেনাকাটা। সত্যি বলতে কি, গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন উৎসবকে কেন্দ্র করে ফ্যাশনমার্কেটকে ঘিরে সুবিশাল একটি ব্যবসাবাণিজ্য গড়ে উঠেছে। আর শুধুই কি ফ্যাশনদুরস্ত জামাকাপড়! এমনকি জুয়েলারি থেকে শুরু করে তামা-কাঁসা, তৈজসপত্র, সাজের ডাক, পূজার উপকরণ, ফলমূল শাকসবজি, ধান-পাট-শন-পাটখড়ি, রঞ্জকদ্রব্য কিছুই বাদ যায় না। প্রধানত কৃষিজীবী সম্প্রদায় ও জীবন-জীবিকাভিত্তিক অন্যতম উৎসব বিধায় দুর্গাপূজাকে ঘিরে প্রায় সর্ববিধ পণ্যদ্রব্যের ব্যবসাবাণিজ্য হয়ে ওঠে জমজমাট ও অপরিহার্য। ফলে তা প্রতিবছর জাতীয় অর্থনীতিতে তথা জিডিপিতে যোগ করে এক বাড়তি মাত্রা। এবারও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না। সিলেটসহ হাওড়াঞ্চলের যেসব স্থান এবার বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে ফসলহানির কবলে পড়েছে সেসব বন্যাকবলিত উত্তর-দক্ষিণের কিছু এলাকায় আনন্দের কিছু ঘাটতি হলেও হতে পারে। তবে সরকার ও দাতাগোষ্ঠীর আনুকূল্য পেলে তা অনেকটা পুষিয়ে যাবে নিশ্চয়ই। সত্যি বটে, দেশে বেশ কিছুদিন ধরে জেএমবি, নব্য জেএমবির নামে কতিপয় জঙ্গী সংগঠন আত্মঘাতী ও সশস্ত্র সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনহানি ও সম্পদ ধ্বংসের পাঁয়তারা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের কঠোর হাতে দমনও করেছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বর্তমানে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তপথে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীও বড় একটা সমস্যা সৃষ্টি করেছে। তাদের মধ্যেও সমাজবিরোধী সন্ত্রাসী ও জঙ্গী ঢুকে পড়া বিচিত্র নয়। পুলিশ প্রধান সে সম্পর্কে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ইতোমধ্যে। সে অবস্থায় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত পূজাম-পগুলোতে প্রয়োজনে নিরাপত্তা আরও বাড়াতে হবে নিশ্চয়ই।
×