ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিশ লাখ শহীদ স্মরণ

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ত্রিশ লাখ শহীদ স্মরণ

মুক্তিপাগল বাঙালী বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছিল স্বাধীনতার জন্য, মুক্ত স্বদেশের ও স্বাধীনতা পতাকার জন্য। দেশমাতৃকার ডাকে সেদিন রণাঙ্গনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালী। কতিপয় কুলাঙ্গার সেদিন স্বাধীনতার বিরোধিতা শুধু নয়, নরঘাতক যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হয়ে বাঙালী গণনিধনে মত্ত ছিল। শুধু নিধন নয়, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটসহ হেন অপকর্ম নেই যা তারা করেনি। নৃশংসতার সঙ্গে হত্যা করেছে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে নারী, শিশু, বৃদ্ধাদেরও। নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে কিশোর-তরুণদের। চোখ, চামড়া, নখ উপড়ে ফেলা, হাত কেটে ফেলাসহ বীভৎস ও নারকীয় নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে বাঙলার মানুষকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে টানা নয় মাস লড়াই চালিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছে বাঙালী। বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে বাঙালী ঘরে ঘরে দুর্গ গড়েছিল। হানাদাররা একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ঢাকায় ব্যাপক গণহত্যা শুরু করে। এরপর তা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রত্যন্ত গ্রামও রেহাই পায়নি পাকিস্তানী হানাদার ও তাদের দোসর শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামস নামক প্রশিক্ষিত সশস্ত্র সংগঠনগুলো প্রতিদিনই দেশজুড়ে গণহত্যা চালিয়েছে। পিতা-মাতার সামনে সন্তানকে, স্ত্রীর সামনে স্বামীকে কিংবা পুরো পরিবারকে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছে। বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে ধরে নিয়ে গিয়ে বধ্যভূমিতে হত্যা করা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও আবিষ্কার হয় গণকবর। গর্ত খুঁড়ে মাটিচাপা দেয়া হয়েছে বাঙালীদের। অথচ এই হানাদাররা ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম সম্প্রদায় রক্ষার নামে ব্যাপকভাবে মুসলমানদের নিধন করেছে। আর মুসলিম ও হিন্দুদের দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। শরণার্থী শিবিরে নানা অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ দিয়েছে অনেকে, যেসব লিপিবদ্ধ হয়নি। বাংলাদেশে দখলদার পাকি বাহিনী ও তাদের দোসররা ত্রিশ লাখ বাঙালীকে হত্যা করেছে। অনেকের মরদেহ শেয়াল, কুকুর, শকুনের খাদ্যে পরিণত হয়েছে। যত নৃশংস হওয়া সম্ভব হানাদাররা তার নিদর্শন রেখে গেছে। বাঙালীর রক্তে মুক্ত স্বদেশ। পত পত উড়ছে লাল-সবুজের পতাকা। সেদিন বাঙালীর অসীম সাহস, লড়াকু অবস্থান আর আত্মত্যাগের যে নিদর্শন, তা বিশ্বে অদ্বিতীয়। বাঙালীর জীবনে একাত্তরের নয় মাসের প্রতিটি দিন শহীদ দিবস। সেই গণহত্যার বিচার হতে দেয়নি হানাদার পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী। এমনকি আজও ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। বরং বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতায় এখনও লিপ্ত। ত্রিশ লাখ বাঙালীর রক্তে বোনা দেশ মাথা উঁচু করে আজ দাঁড়াতে পেরেছে আত্মত্যাগী শহীদদের প্রেরণায়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ত্রিশ লাখ মানুষ স্মরণে নেয়া হয়েছে মহতী উদ্যোগ। যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বহমান থাকবে। ঈশ্বরদীর কৃষক দম্পতি সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ ও বেলি বেগম এমন অভূতপূর্ব ঐতিহাসিক সৃজনের মূল কর্ণধার। কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্যের জন্য বঙ্গবন্ধু কৃষি পদকপ্রাপ্ত দম্পতি আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশে এই চারা রোপণের পরিকল্পনা নিয়েছেন। প্রতিবছর ছয় লাখ তাল গাছের বীজ রোপণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের উৎসাহ ও প্রেরণা এবং সহযোগিতাদানে এগিয়ে এসেছেন এবং স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের উদ্যোগে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট ও কৃষি বিভাগ। দশ ফুট পরপর এ বীজ রোপণ করা হবে অনেক স্থানে রেললাইনের দু’পাশে। কৃষকরাই রোপণ করবেন। দেড় কোটি টাকা মূল্যের ত্রিশ লাখ বীজ বিনামূল্যে সরবরাহ করা হবে। তাল গাছ বজ্রপাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে, যা এ দেশে সাম্প্রতিককালে ব্যাপকহারে ঘটছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। তাল বৃক্ষ রোপণ এবং শহীদদের স্মৃতি স্মরণের মহতী উদ্যোগ সফল করার জন্য এবং বৃক্ষ সংরক্ষণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণই হবে সময়ের চাহিদা পূরণ। এ মহতী উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
×