ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভিক্ষুক মায়ের অনুমতি পেলেই সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ ডিআইজি

প্রকাশিত: ০২:৩৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

ভিক্ষুক মায়ের অনুমতি পেলেই সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ॥ ডিআইজি

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ প্রতিষ্ঠিত সন্তানদের মায়া মমতা, আদর-যত্ন আর ভালবাসা বঞ্চিত সত্তরোর্ধ্ব অসহায় অসুস্থ্য মা মনোয়ারা বেগমকে দেখতে বুধবার শেবাচিমে ছুঁটে এসেছেন বরিশালের রেঞ্জ ডিআইজি মোঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম। তিনি শেবাচিমে চিকিৎসাধীন ওই মাকে দেখে তাৎক্ষণিকভাবে চিকিৎসারর জন্য নগদ ১৫ হাজার টাকা প্রদান করেন। এসময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, এই অসহায় নারীর চিকিৎসার ব্যয়ভার পুলিশের পক্ষ থেকে বহন করা হবে। তার (ভিক্ষুক মা) অনুমতি ও তদন্ত সাপেক্ষে প্রচলিত আইনে তার সন্তানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সূত্রমতে, জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামের দরিদ্র কৃষক মৃত আইউব আলীর স্ত্রী অসহায় বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের ছয় সন্তানের সকলেই পেশাজীবী হওয়া স্বত্বেও ভরণপোষনের অভাবে তিনি ভিক্ষা করছেন। তার ছয় সন্তানের বিলাসিতার আড়ালে ভিক্ষাবৃত্তি ছিলো মনোয়ারা বেগমের শেষ সহায়। তার ছয় সন্তানের মধ্যে তিন পুত্র পুলিশ বাহিনীর সদস্য, একমাত্র মেয়ে স্কুল শিক্ষিকা, এক ছেলে ব্যবসায়ী এবং আরেক ছেলে ইজিবাইক চালক। ছয়জন সন্তান থাকার পরেও অসহায় মনোয়ারা বেগমকে জীবনের জন্য হাত পাততে হয়েছে মানুষের দ্বারে দ্বারে। কিছুদিন আগে ভিক্ষা করতে গিয়ে পা পিছলে পরে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙ্গে যায় মনোয়ারার। সেই থেকে তিনি বিনাচিকিৎসায় একটি ঝুপড়ি ঘরে মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় সংসদ সদস্য (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) এ্যাডভোকেট শেখ মোঃ টিপু সুলতানের নজরে আসে। সাংসদ উদ্যোগ নিয়ে বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করান। এরপর মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান শেবাচিমে চিকিৎসাধীন অশীতিপর বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমকে দেখতে ছুটে আসেন। এ সময় তার সাথে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক বৃদ্ধা মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসাসহ সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তার (মনোয়ারা) হাতে নগদ ১২ হাজার টাকা তুলে দিয়েছেন। এছাড়াও মনোয়ারা বেগমের ভরণপোষণ ও সেবা যতেœর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনোয়ারা বেগমের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র সমাজসেবা কার্যালয়ের পক্ষ থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে। একইদিন শেবাচিম হাসপাতালে মনোয়ারা বেগমের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে ছুটে এসেছিলেন জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম। তিনিও চিকিৎসাধীন মনোয়ারা বেগমের সব দায়িত্ব নেয়ার কথা জানিয়ে নগদ ১০ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। একইসাথে বৃদ্ধ মাকে অবহেলার কারণে পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত তার তিন ছেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দরা মনোয়ারার চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে শেবাচিমে এসেছিলেন।
×