ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের চাঞ্চল্যকর ধীরেন হত্যা মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বরিশালের চাঞ্চল্যকর ধীরেন হত্যা মামলা ভিন্নখাতে নেয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ জেলার উজিরপুর উপজেলার সাতলা ইউনিয়নের শিবপুর গ্রামের চাঞ্চল্যকর ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের হত্যা মামলাটি ভিন্নখাতে নিয়ে প্রকৃত হত্যাকারীরা পার পেতে নানা কৌশল অবলম্বন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত দশদিন থেকে পুলিশের গ্রেফতার আতংকে ওই গ্রামটি পুরুষ শূণ্য হয়ে পরেছে। সূত্রমতে, অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় প্রথমে দায়ের করা মামলার পর এবার ওই প্রভাবশালী মহলের ইঙ্গিতে আদালতে দায়ের করা দ্বিতীয় মামলায় এলাকার শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, সমাজসেবক ও দিনমজুরদের আসামি করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি সিআইডিতে থাকায় এলাকাবাসী সঠিক তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি করেছেন। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, শিবপুর নবীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধানশিক্ষক নিয়োগকে কেন্দ্র করে মোটা অংকের টাকার লেনদেন নিয়ে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তির সাথে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ধীরেন্দ্রনাথ রায়ের তুমুল বিরোধের সৃষ্টি হয়। বিরোধ নিস্ফত্তির জন্য গত ১৭ আগস্ট গভীররাত পর্যন্ত স্কুল সংলগ্ন মাখন রায়ের গৃহে বৈঠক চলে। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ধীরন্দ্রনাথ রায় তার কাছে গচ্ছিত টাকার হিসেব দিতে না পেয়ে বসতঘর বিক্রি অথবা জমি বিক্রি করে টাকা পরিশোধের অঙ্গীকার করেন। এসময় ধীরন্দ্রনাথের সাথে তার পুত্রদের বাগ্বিতন্ডা হয়। পরবর্তীতে ধীরেন্দ্রনাথ তার পুত্র দিলীপ রায়ের বাড়িতে ঘুমাতে যায়। প্রতিদিন ওই গৃহে ধীরেন্দ্রনাথের স্ত্রী ও তার এক সহদর রাত্রিযাপন করলেও রহস্যজনক কারণে ওইদিন ধীরেন্দ্রনাথ একাই ওই গৃহে রাত্রিযাপন করেন। পরে ওইরাতেই অজ্ঞাতনামা সন্ত্রাসীরা ধীরেন্দ্রনাথ রায়কে অপহরনের পর হত্যা করে পায়ে ইটের বস্তা বেঁধে নদীতে লাশ ভাসিয়ে দেয়। ১৯ আগস্ট পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহতের পুত্র দিলীপ রায় বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (যার নং-১৮/১৯-৮-২০১৭)। সূত্রে আরও জানা গেছে, স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তির পূর্ব শত্রুতার জেরে গত ১০ সেপ্টেম্বর পুলিশ নাটকীয়ভাবে সন্দেহভাজন হিসেবে ওই মামলায় স্থানীয় ইউপি সদস্য ও পল্লী চিকিৎসক মিল্টন বাড়ৈ বাবুলকে আটক করে। বর্তমানে সে জেলহাজতে রয়েছেন। এ ঘটনার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর দিলীপ রায় বাদি হয়ে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১০ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৭/৮জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে আরও একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় আটক ইউপি সদস্য মিল্টন বাড়ৈ বাবুলকে দশ নাম্বার আসামি করা হয়েছে। এছাড়াও এলাকার দুইজন শিক্ষকসহ দিনমজুরদের আসামি করা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিরা বলেন, আদালতে দায়ের করা মামলার স্বাক্ষীদের মধ্যে হত্যা মামলায় ১৪ বছরের সাজাভোগকারী সাবেক এক সর্বহারা নেতা, নির্বাচনের পরাজিত প্রার্থীসহ নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে সরাসরি জড়িত ব্যক্তিরা রয়েছে। তারা নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে কৌশলে অর্থের মিশনে নেমে নির্বাচনী শত্রুতা ও পূর্ব বিরোধের জেরে এলাকার নিরিহ ব্যক্তিদের মামলায় আসামি করিয়েছেন। এমনকি অপহরনস্থলের সন্নিকটে রাত্রিযাপন করা স্কুলের নৈশপ্রহরী বিধান রায়কে মামলার স্বাক্ষী না করার বিষয়টিও রহস্যজনক বলে মনে করছেন গ্রামবাসী। এলাকাবাসী সঠিক তদন্তের মাধ্যমে চাঞ্চল্যকর ধীরেন্দ্রনাথ রায় হত্যার প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার সন্দেহের তালিকায় তারা নিহতের পরিবার ও স্বাক্ষীদের মধ্যের কতিপয় ব্যক্তির খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন।
×