ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্পিন জুজু সামলাতে নতুন রণকৌশল ঠিক করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া

প্রকাশিত: ১৯:১৬, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

স্পিন জুজু সামলাতে নতুন রণকৌশল ঠিক করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া

অনলাইন ডেস্ক ॥ চায়নাম্যানের ভূত ঘাড় থেকে নামছে না স্টিভ স্মিথের অস্ট্রেলিয়ার। চেন্নাইয়ে যার ফায়দা নিয়ে গিয়েছেন কুলদীপ যাদব। ভারতের এই চায়নাম্যান বোলার ভাল সমস্যায় ফেলেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারদের। ইডেনে পা দিয়েও সে কথা ভোলেননি অস্ট্রেলিয়ার লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। বলছেন, ‘‘চেন্নাইয়ে ভারতের রিস্ট স্পিনারদের বুঝতে সমস্যা তো হচ্ছিলই।’’ ইডেনেও বৃহস্পতিবার যে সেই একই প্রশ্নপত্র আসতে চলেছে, তা বিলক্ষণ জানে অস্ট্রেলিয়া শিবির। কলকাতায় বিরাট কোহালিদের সেই স্পিন জুজু সামলাতে নতুন রণকৌশল ঠিক করে ফেলল অস্ট্রেলিয়া। তা হল পাল্টা আক্রমণের রাস্তায় হাঁটা। আর তার জন্য রিভার্স সুইপ ও স্লগ সুইপকেই বৃহস্পতিবার অস্ত্র বানাতে পারেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, মার্কাস স্টয়নিসরা। মঙ্গলবার বৃষ্টিবিঘ্নিত অনুশীলন পর্বে ইডেনের ইন্ডোরে ঘণ্টা দেড়েক অনুশীলন করল অস্ট্রেলিয়ানরা। তাতে এই রিভার্স সুইপ মারাই দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন করে গিয়েছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-রা। স্মিথদের লক্ষ্য, ইডেনে কোনও ভাবেই ভারতের স্পিন আক্রমণকে মাথা তুলে দাঁড়াতে দেওয়া চলবে না। তার জন্য এ দিন অনুশীলনে ডাকা হয়েছিল সাত স্পিনারকে। যাঁদের মধ্যে লেগস্পিনার, বাঁ হাতি স্পিনার ছাড়াও ছিলেন দুই চায়নাম্যান বোলারও। চলতি একদিনের সিরিজে যা রাতের ঘুম কেড়েছে অস্ট্রেলিয়ার। কলকাতায় এসেই তাই নেটে চায়নাম্যান চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। এ দিন লেগস্পিনার ও অফস্পিনার সামলানোর পর স্মিথ-রা দীর্ঘ সময় অনুশীলন করেন নেটে ডাকা দুই চায়নাম্যান বোলার রূপক গুহ খাসনবিশ এবং আশুতোষ শিবরাম শর্মাকে নিয়ে। বছর কুড়ির রূপক খেলেন ময়দানের দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব সাবার্বান-এ। দু’বছর আগে ছিলেন বাংলার অনূর্ধ্ব-১৭ দলে। চায়নাম্যান বোলিং করে গত মরসুমে তাঁর শিকার ১৬ উইকেট। দ্বিতীয় জন মুকুন্দপুরের আশুতোষ শিবরাম চলতি মরসুমে সই করেছেন সিটি এসিতে। অস্ট্রেলিয়া নেটে তাঁকে যে বল করতে হবে তা শুক্রবারেই জেনে গিয়েছিলেন আশুতোষ। কিন্তু রূপক খবর পান, সোমবার বিকেলে। এ দিন ইডেনের ইন্ডোর নেটে পাক্কা এক ঘণ্টা স্মিথ, স্টয়নিস ম্যাক্সওয়েল, অ্যারন ফিঞ্চ-দের সামনে এই দুই চায়নাম্যান বোলার টানা ১৪-১৫ ওভার বল করে যান। অস্ট্রেলিয়ার স্পিন বোলিং কোচ শ্রীধরন শ্রীরাম-এর ঠিক কী নির্দেশ ছিল এই দুই বোলারের উপর? রূপক বলছিলেন, ‘‘অফ স্টাম্পের বাইরে বল ফেলে তা মিডলস্টাম্পে ঢুকিয়ে আনতে বলছিলেন। আর মিডল স্টাম্পের উপর গুগলি দিয়ে তা বাইরের দিকে কাটানোর নির্দেশ ছিল।’’ আশুতোষের কথায়, ‘‘আমাদের খেলতে গিয়ে প্রথম দিকে বার বার সমস্যায় পড়ছিলেন ম্যাক্সওয়েল, স্টয়নিসরা। আর স্মিথের সমস্যা হচ্ছিল ভিতরের দিকে ঢুকে আসা বলগুলোয়।’’ তার পর? রূপক বললেন, ‘‘মিনিট দশেক খেলার পরেই শ্রীরাম স্যার-এর সঙ্গে কথা বলে রিভার্স সুইপ ও স্লগ সুইপ মারতে শুরু করেন ম্যাক্সওয়েল, ফিঞ্চ এবং স্টয়নিস। যে শট মারতে গিয়ে বেশ কয়েক বার পরাস্তও হন তাঁরা। কখনও ব্যাটের কানায় লেগে যায় বল। যা শুধরে নিতে বলা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাটসম্যানদের। স্টিভ স্মিথ মিডল স্টাম্পে ঢুকে আসা বল সামলাচ্ছিলেন স্টেপ আউট করে ফ্লিক-এ।’’ যে অনুশীলন থেকে স্পষ্ট, ইডেনে ভারতীয় স্পিনারদের বিরুদ্ধে রিভার্স সুইপ, স্লগ সুইপ বা স্টেপ আপ অস্ত্র হতে চলেছে অস্ট্রেলিয়ার। উদ্দেশ্য একটাই—এ ভাবে আক্রমণ করে ভারতীয় স্পিনারদের লাইন এবং লেংথ নষ্ট করা। তা হলেই কুলদীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চহালরা শর্ট লেংথে চলে যেতে পারেন। যা ব্যাটসম্যানকে সমস্যায় ফেলবে না। এ দিন সকাল সাড়ে এগারোটার কিছু পরে ইডেনে দলবল নিয়ে ঢুকে পড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক স্টিভ স্মিথ। আকাশ কালো করে তখন বৃষ্টি নেমেছে। গোটা মাঠ কভারবন্দি। তা সত্ত্বেও ইডেনের পিচ কিউরেটরের কাছে পিচ দেখার আবদার করেছিলেন স্মিথরা। কিন্তু তা কোনওমতেই সম্ভব নয়, তা জানতে পেরে ইন্ডোর অনুশীলনেই মনোনিবেশ করেন তাঁরা। স্মিথদের অনুশীলন করিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে রূপক, বলছিলেন, ‘‘স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল অনুশীলনের পর এসে হাত মিলিয়ে বলে গেলেন, বুধবার স্টেডিয়ামে নেট প্র্যাকটিস হলে এই বোলিংটাই করতে। শুনে মনে হচ্ছিল স্বপ্ন দেখছি।’’ অস্ট্রেলিয়া শিবির সূত্রে খবর, এ দিনের অনুশীলনের পর মোটামুটি সন্তুষ্ট তাঁরা। কলকাতায় কুলদীপদের সামলাতে রূপক-আশুতোষরা আপাতত তাঁদের সম্বল। সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×