ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চতুর্থ বারের মতো চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন মার্কেল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চতুর্থ বারের মতো চ্যান্সেলর হতে যাচ্ছেন মার্কেল

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর জার্মানিতে নির্বাচন। সেই নির্বাচনে চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মার্কেল ও তার দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়নের যে বিজয় ঘটবে তা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায়। আর সেটা হবে মার্কেলের চতুর্থ মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় থাকা। ভক্তদের কাছে মার্কেল হলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভøাদিমির পুতিনের যোগ্য সমকক্ষ। তিনি এমন ঔদার্যের অধিকারী যিনি উদ্বাস্তুর জন্য জার্মানির দুয়ার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আবার অন্যদের কাছে তিনি একজন খলনায়ক। অভিবাসন প্রশ্নে তার অবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ জার্মানিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে তারা মনে করেন। স্বয়ং ট্রাম্পও একদা মন্তব্য করেছিলেন যে তার কৃচ্ছ্রতার নীতির কারণে দক্ষিণ ইউরোপের সর্বনাশ ঘটছে। তবে তার ভক্ত-সমর্থকদের ধারণা সত্যের কাছাকাছি। তার নেতৃত্বে জার্মানির অগ্রগতি হয়েছে শুধু নয়, বিশ্ব রাজনীতিক অঙ্গনে দেশটির ভাবমূর্তি ও অবস্থানও জোরদার হয়েছে। অনেকে তাকে পাশ্চাত্যের উদারপন্থীদের শেষ দুর্গ বলে আখ্যায়িত করে থাকে। তিনি ইউরোপে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করছেন। জার্মানিতে এসে ঢোকা ১০ লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে তাদের জীবধারণের ব্যবস্থা করছেন। মার্কেলকে কখনও কখনও ইউরোপের ডি ফ্যাক্টো নেতা বা ভাগ্যনির্ধারণকারী আখ্যা দেয়া হয়। ইউরোপের বাজারগুলোকে অর্থ ঢেলে সয়লাব করে দেয়ার নিয়ত চাপের কাছে নতি স্বীকার না করে তিনি জার্মান স্টাইলের যে ব্যয়সঙ্কোচ ব্যবস্থা ও সংস্কার চাপিয়ে দিয়েছেন তাতে দক্ষিণ ইউরোপে তার বন্ধু তেমন জোটেনি বটে তবে অন্য সবার কাছে তিনি এই সঙ্কট মোকাবেলায় দৃঢ় ভূমিকার জন্য প্রশংসিত হয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে তার বিজয় যে অনিবার্য তার একটা কারণ ২০০৫ সালে তিনি জার্মানির কা-ারী হিসেবে হাল ধরার পর থেকে দেশটি সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। বেকারত্ব ১১.২ শতাংশ থেকে ৩.৮ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। মজুরি বাড়ছে। ভোক্তাদের আস্থা উঁচুতে আছে। শ্রমবাজার সংস্কারে অটল থেকেছেন মার্কেল। দেশকে তিনি এক স্থিতিশীল ও আদর্শ বিযুক্ত রাজনৈতিক নেতৃত্ব যুগিয়েছেন। জার্মান সমাজ আরও বেশি উন্মুক্ত হয়েছে। ইউরো সঙ্কট এবং মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা উদ্বাস্তুর ঢল মার্কেল যেভাবে সামাল দিয়েছেন তাতে তিনি নিজেকে ইউরোপের অপরিহার্য অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবরোধ ও প্যারিস জলবায়ু চুক্তি সংক্রান্ত শীর্ষ বৈঠকে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। আন্তর্জাতিক বোঝাও জার্মানি নিজের কাঁধে নিয়েছে। আফগানিস্তান, মালি ও লিথুয়ানিয়ায়ও সৈন্য পাঠিয়েছে এবং যে পরিসরে পাঠিয়েছে এক দশক আগে তার কল্পনাও করা যেত না। ন্যাটোর প্রতিরক্ষা ব্যয় মেটাতে জিডিপির ২ শতাংশ বরাদ্দের টার্গেটের প্রতি তার অঙ্গীকার থেকে বোঝা যায় জার্মানির প্রবৃদ্ধি কিভাবে ঘটে চলেছে। জার্মানি এখনও এমন কিছু জিনিস তৈরি করছে বা উদীয়মানদের মধ্যে পরাক্রান্ত দেশ চীনও তৈরি করতে পারে না এবং সেগুলো জার্মানি থেকে আমদানি করে। জার্মানি এখন প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের স্বর্ণযুগের মধ্য দিয়ে চলেছে। এসব অর্জন সত্ত্বেও মার্কেলের অনেক কিছু কাজ অসমাপ্তই রয়ে গেছে। দেশকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন। কিন্তু সে সুযোগ তিনি হেলায় হারিয়েছেন বলে সমালোচকরা মনে করেন। অবকাঠামোর উন্নয়ন তিনি খুব সামান্যই বিনিয়োগ করেছেন। ২০১২ সাল থেকে জার্মান অবকাঠামোর নিট মূল্য হ্রাস পেয়েছে। ২০তম স্থান থেকে দেশের ব্রড ব্যাংকদের স্পিড বিশ্বে ১২তম স্থান থেকে নেমে এসেছে ২৯তম স্থানে। ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্যের ও ইলেকট্রিক পণ্যের নতুন শিল্পগুলো অনুন্নত। জার্মানির মহাশক্তিধর অটোমোবাইল শিল্প এখনও ডিজেল নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। মার্কেল পিছিয়ে পড়ে থাকা জার্মানদের জন্য তেমন কিছুই করেননি। সমাজে অসাম্য বাড়ছে এবং তেমনি বাড়ছে ফুড ব্যাংকের ব্যবহার। জ্বালানির প্রচলিত উৎস বাদ দিয়ে নবায়নযোগ্য এনার্জিতে বিতরণ এত বেশি মন্থর হবে ও ব্যয়বহুল হয়েছে যে জার্মানিতে কয়লার ব্যবহার ও তার পরিণতিতে কার্বন নির্গমন বাড়ছে। হঠাৎ করে দেশের পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দেয়ায় পরিস্থিতি আরও কঠিন রূপ নিয়েছে। তার পরেও এবারের নির্বাচনেও যে মার্কেল জিতবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে তাকে কোয়ালিশন করতে হবে এবং সেটা সম্ভবত মধ্য বাম সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের (এসপিডি) অথবা এফডিপির সঙ্গে কিংবা উভয়ের সঙ্গে। চলমান ডেস্ক সূত্র : টাইম
×