ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুতার্তে খামখেয়ালি তথাপি ফিলিপিন্সের অর্থনীতি ভাল

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দুতার্তে খামখেয়ালি তথাপি ফিলিপিন্সের অর্থনীতি ভাল

ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট রডরিগো দুতার্তে এমন অনেক কাজ করেন যাকে স্রেফ লোক দেখানো বললে অত্যুক্তি হয় না। তার অনেক প্রতিশ্রুতি অর্থনীতি নিয়ে যাদের কাজ কারবার তাদের মনে রীতিমতো শঙ্কা জাগায়। যেমন সম্প্রতি তিনি মন্ত্রিসভার অধিকাংশ সদস্যের আপত্তি সত্ত্বেও রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রদের টিউশন ফি তুলে দিয়ে একটি আইনে স্বাক্ষর দেন। সরকার কিভাবে এখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো চালাবে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন : ‘তা তো জানি না। তবে দেখতে হবে।’ একইভাবে দুতার্তে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, যে ধরনের সামরিক চুক্তির অধীনে প্রায় ৩০ শতাংশ ফিলিপিনোকে কাজে নিয়োগ দেয়া হয় তা কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ করা হবে। তিনি দেশের অবকাঠামোয় চীনের বিনিয়োগের বিনিময়ে সেই দেশটির প্রতি আনুগত্যের অঙ্গীকার করেছেন। এর আগে গত এপ্রিল মাসে তিনি দেশীয় কৃষকদের সাহায্য করার জন্য চাল আমদানি বন্ধের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। অর্থনীতিবিদদের মতে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফি তুলে দিয়ে গরিবদের চেয়ে বরং ধনীদেরই বেশি ভর্তুকি দেয়া হবে। কারণ মাত্র ১২ শতাংশ ভার্সিটি ছাত্র দরিদ্রতম ২০ শতাংশ পরিবার থেকে আগত। এতে সরকারের বছরে প্রায় ৬০ কোটি ডলার ব্যয় হবে। সরকারের এই পদক্ষেপে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শঙ্কিত বোধ করছে যে এর ফলে তাদের ছাত্র সংখ্যা কমে যাবে। দুতার্তের এ জাতীয় অন্যান্য পদক্ষেপে অর্থনীতিবিদরা উদ্বিগ্ন হলেও অর্থনীতির কিন্তু সমৃদ্ধি ঘটে চলেছে। ফিলিপিন্সের অর্থনীতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম সতেজ অর্থনীতি। গত বছর এই অর্থনীতির প্রসার ঘটেছে ৬.৮ শতাংশ। আকারে তা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে এই অর্থনীতি চলতি বছর ও আগামী বছর একই হারে প্রসারিত হবে। এই প্রবৃদ্ধিতে গতি সঞ্চার করেছে দেশের বিশাল যুব জনগোষ্ঠী। বিদেশে গৃহপরিচারিকা, নার্স, ওয়েটার ও হরেক রকম কাজে নিয়োজিতরা বছরে ৩১০০ কোটি ডলার দেশে পাঠায় যা জিডিপির ১০ শতাংশেরও বেশি। পাশ্চাত্যের ফার্মগুলোও অফিসের ফুটফরমায়েশের কাজে বিপুলসংখ্যক ফিলিপিনোকে নিয়োগ করে থাকে। কল সেন্টারগুলোতে ফিলিপিন্স ভারতের চেয়েও বড় কুশীলব। দেশটির বেসরকারী খাতের সর্ববৃহৎ নিয়োগকর্তা প্রতিষ্ঠান হলো আমেরিকান টেলিকমস ফার্ম কনভার্জিসের লাইনগুলোতে ৬৩ হাজার ফিলিপিনো নিয়োজিত। গত ১৫ বছরে আউটসোর্সিং ব্যবসা শূন্য থেকে জিডিপির প্রায় ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কেবিনেট ও আমলাতন্ত্র এ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট দুতার্তেকে বাড়াবাড়ি করা থেকে নিবৃত করতে চেষ্টা করেছে। দুতার্তে যখন বললেন চাল আমদানি বন্ধ করবেন তখন পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা ও মূল্য স্থিতিশীল রাখার দাবিতে নিয়োজিত জাতীয় খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা তাকে বোঝালেন যে সব ফিলিপিনোই ভাত খায় অথচ তুলনামূলক অল্প সংখ্যক ফিলিপিনো চাল উৎপাদন করে। সুতরাং চাল আমদানি বন্ধ করলে বিপুলসংখ্যক ফিলিপিনোর ক্ষতি হবে। শেষে দুতার্তে সুর নরম করেন। আমদানির বিধিনিয়ম পরিবর্তন করে তাতে রাষ্ট্রের ভূমিকা খর্ব করেন। একইভাবে সরকার শ্রমবাজার আমূল সংস্কারের যে প্রতিশ্রুতি গোড়ার দিকে দিয়েছিল তা থেকেও সরে এসেছে। এখন স্বল্পমেয়াদী চুক্তির চরম অপব্যবহার যারা করে শুধু তাদেরই টার্গেট করা হয়েছে। আর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার যেসব কথাবার্তা শোনা গেছে তাতে প্রত্যাশিত বিনিয়োগের অতি সামান্যই এসেছে। দুতার্তে ও তার সহকর্মীরা অবকাঠামোয় বিনিয়োগের কাজে অর্থায়নের জন্য কর সংস্কারে একমত হয়েছেন। ম্যানিলার ট্রাফিক জ্যাম এক মস্ত সমস্যা। উন্নয়নের স্বার্থে এ সমস্যার সমাধান জরুরী। রাস্তাঘাট, মহাসড়কগুলোর অবস্থাও শোচনীয় যার আশু সংস্কার প্রয়োজন। এসব সমস্যার সমাধানে দুতার্তে অবকাঠামো খাতে ব্যয় গত বছরের জিডিপির ৫.২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০২২ সালে জিডিপির ৭.৪ শতাংশে উন্নীত করতে চান। তার পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে দক্ষিণের গোলযোগ উপদ্রুত মিন্দানাও দ্বীপে নতুন রেললাইন স্থাপন ও ম্যানিলার উত্তরে ক্লার্ক বিমানবন্দরের ব্যাপক উন্নয়ন সাধন। এই ধরনের বিনিয়োগে ইতোমধ্যে বাজেট ঘাটতি জিডিপির ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে যে ২০২০ সাল নাগাদ কর সংস্কার থেকেও বিপুল অর্থ আসবে। এ্যালকোহল, সিগারেট ও অন্যান্য পানীয়র ওপর কর বাড়বে। কর্পোরেট ট্যাক্স কিছু কমানো হবে। তবে সম্পত্তি কর ও অন্যান্য কর বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে সরকারের। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×