ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

উঃ কোরীয় হুমকি জাপান কিভাবে ঠেকাতে পারে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

উঃ কোরীয় হুমকি জাপান কিভাবে ঠেকাতে পারে

উত্তর কোরিয়ার একের পর এক পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষায় জাপান উদ্বিগ্ন। কিছু দিন আগে উত্তর কোরিয়ার একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের হোক্কাইডো দ্বীপের ওপর দিয়ে উড়ে গিয়ে প্রায় ১২শ’ কিলোমিটার পূবে সাগরে গিয়ে পড়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেছেন পিয়ংইয়ংয়ের এই বেপরোয়া আচরণ তার দেশের নিরাপত্তার প্রতি নজিরবিহীন, গুরুতর ও মারাত্মক হুমকি। জাপানী ভূখন্ডের ওপর দিয়ে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ যে এই প্রথবার হলো তা নয়। এর আগে চারবার উত্তর কোরিয়া উপগ্রহ উৎক্ষেপণের ছদ্মাবরণে একই কাজ করেছে। তবে উত্তর কোরিয়ার দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা নিয়ে উদ্ভূত উত্তেজনার পটভূমিতে সর্বশেষ ঘটনাটি বিস্ময় না জাগিয়ে পারে না। জাপান দীর্ঘদিন ধরে উত্তর কোরিয়ার রকেটের ছায়ার নিচে বাস করছে। উদ্বেগের ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে বিশ্লেষকরা একমত যে পিয়ংইয়ং ক্ষেপণাস্ত্রে লাগানোর মতো পরমাণু বোমা তৈরি করার প্রযুক্তি সম্ভবত করায়ত্ত করে ফেলেছে। সর্বশেষ পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে জাপানের নিজস্ব নিরাপত্তা রক্ষায় তার সিভিল ডিফেন্সের প্রস্তুতি ও ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জাপানের শান্তিবাদী সংবিধান সংশোধন করা হবে কি হবে না তা নিয়েও বিতর্ক জোরদার হয়েছে। গত বছর জাপান তার নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানের সক্ষমতা সম্পর্কে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হলে কি করণীয় সে সম্পর্কিত নির্দেশিকা ছাপিয়েছে। বলা হয়েছে এমন পরিস্থিতিতে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। পরমাণু হামলা হলে বিশেষ জ্যাকেট পরতে হবে। ১২টি শহরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মোকাবেলার ড্রিল হয়েছে। হামলার সময় স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের ডেস্কের নিচে গুটিয়ে থাকতে হবে। পরমাণু হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো কিছু সংখ্যক বাঙ্কার ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। তেজস্ক্রিয় বিকীরণ থেকে রক্ষা পাওয়ার মতো এয়ার পিডরিফাইয়ার সরবরাহ করা হয়েছে। জাপানের আছে দ্বিস্তরবিশিষ্ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। একটি হচ্ছে ইজিস ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ব্যবস্থা সংবলিত ডেস্ট্রয়ার বহর যেগুলোর আওতায় আছে গোটা দেশ। দ্বিতীয়টি হলো স্থলভিত্তিক প্যাট্রিয়ট ব্যাটারি যা ছোট ছোট এলাকায় ছত্রছায়া যোগাতে পারে। তবে এই দ্বিস্তরবিশিষ্ট প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে। প্রতিরক্ষা দফতর এখন ডেস্ট্রয়ারে সংযুক্ত ইজিস ব্যবস্থা উন্নততর করতে এবং এর স্থলভিত্তিক সংস্করণ ইজিস এ্যাশোর সংগ্রহ করতে চাইছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় আমেরিকা পরিচালিত একটি ক্ষেপণাস্ত্র বর্ম আছে যার নাম ‘টার্মিনাল হাই অলটিচুড এরিয়া ডিফেন্স।’ কিন্তু এটা অত্যধিক ব্যয়বহুল বলে জাপান তা সংগ্রহ করছে না। তবে জাপান তার অন্যান্য প্রতিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন এফ-৩৫ জেট কেনার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে উত্তর কোরিয়ার দিক থেকে অত্যাসন্ন হামলার লক্ষণ দেখতে পেলেই সেখানকার উৎক্ষেপণ ক্ষেত্রগুলোতে আঘাত হানবে সেই সামর্থ্য জাপানের নেই। কারণ যতদিন জাপান তার জিডিপির ১ শতাংশের কম প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করবে ততদিন তার সামরিক শক্তি সামর্থ্য সীমাবদ্ধ থাকবে। বলা বাহুল্য, দক্ষিণ কোরিয়া জিডিপির ২.৬ শতাংশ এবং আমেরিকা ৩.৩ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে। সাড়ে ১২ কোটিরও বেশি লোকের দেশ জাপানের সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১২ হাজার। বিমানবাহিনীর মোট বিমান সংখ্যা প্রায় ১৬০০ যার মধ্যে ২৮৮টি জঙ্গী বিমান। ট্যাঙ্কের সংখ্যা ৭শ’, সাঁজোয়া যান ২৮৫০টি। রকেট প্রজেক্টর ৯৯টি, নৌবাহিনীতে বিমানবাহী রণতরী ৪টি, ডেস্ট্রয়ার ৪২, সাবমেরিন ১৭, কোন ফ্রিগেট বা করভেট নেই। সূত্র : ইকোনমিস্ট
×