ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

একান্ত সাক্ষাতকারে বিসিবির স্পোর্টস ফিজিসিয়ান ডাঃ দেবাশীষ চৌধুরী

সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার তৃপ্তি অন্যরকম

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার তৃপ্তি অন্যরকম

সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করার তৃপ্তি অন্যরকম মজিবর রহমান ॥ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের প্রধান ফটকের নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরিয়ে কিছুদূর অগ্রসর হলেই ডানদিকে মেডিক্যাল রুম। এখানে ঢুকতেই চোখে পড়ল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে তীরন্দাজ মাথুই প্রু মারমা। কুশল বিনিময়ের পর নিজেই বললেন, পিঠে প্রচন্ড ব্যথা। মেরুদ-ের নানা এক্সরে-প্রেসক্রিপশন হাতে ডাক্তারের অপেক্ষায়। মিনিট কয়েকের মধ্যে চলে এলেন চিকিৎসক। আগে থেকেই সম্ভবত সময় নেয়া ছিল। তাই ডাক্তার এক্সরে আর প্রেসক্রিপশন দেখে ওষুধের সিøপ হাতে ধরিয়ে দু’দিন পরে আসতে বললেন। তার আগে নাকি চার ফুটবলারও এসেছিলেন ইনজুরি নিয়ে। কর্মস্থল ক্রিকেটে হলেও বাংলাদেশের প্রায় সব খেলার খেলোয়াড়ই সমস্যায় পড়লে ছুটে আসেন তার কাছে। কারণ তো একটাই, তিনি যে চিকিৎসা দেবেন তা এদেশে আর দিতে পারবে কে? স্বচক্ষে দেখার পর মনে হলো সবার পাশে দাঁড়িয়ে চিকিৎসাসেবার, উদারতার এক একটা প্রতীকী ছবি তৈরি করে যাচ্ছেন তিনি প্রতিদিন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মেডিক্যাল রুমের দরজা-জানালা বন্ধ থাকলেও সবার জন্য খোলা থাকে একটি দিক। আর সেটা ডাক্তারের মন। সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য জরুরী শরীরের স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন। আর শরীর সুস্থ থাকলে মন এনিতেই ভাল থাকে। খেলাধুলার মূলমন্ত্র হচ্ছে সুস্থ শরীর, সুন্দর মন। খেলোয়াড়দের মানসিকতা, দেহঘড়ি মেরামতের অন্যতম এই কারিগর আর কেউ নন সবার প্রিয় ডাঃ দেবাশীষ চৌধুরী। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) স্পোর্টস ফিজিসিয়ান। মাশরাফি, মুশফিক, সাকিব, তামিম, মুস্তাফিজদের ডাক্তার হিসেবেই বর্তমানে তার পরিচিতি একটু বেশি। কিন্তু ক্রিকেটের বাইরে ক্রীড়াঙ্গনের বড় একটা সাম্রাজ্যেরও সেবক তিনি। কোন কার্পণ্য নেই। যে কেউ ছুটে আসুক, সবার পাশে দাঁড়িয়ে উদারতার অনন্য এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে হয়ে উঠেছেন সবার প্রিয়। এখানেই ব্যতিক্রম তিনি দেশের অন্য ডাক্তারদের তুলনায়। যুগ বদলেছে, সঙ্গে পছন্দও। সময়ের বিবর্তনে প্রযুক্তি দখল করে নিয়েছে উন্নত চিকিৎসাও। যদিও এক ক্রিকেট বাদে বাংলাদেশের সম্প্রতি সময়ের খেলাধুলার ইতিহাস তেমন গৌরবোজ্জ্বল নয়। আর্থিক সঙ্কটের দোলাচলের পাশাপাশি পরিকল্পনা আর উদ্যোগের অভাব তো আছেই। নীতি চিন্তায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার অভাবের যে ছাপ দেখা যাচ্ছে তা অবাক করার মতোই। একজন ক্রীড়াপ্রেমী হিসেবে ব্যথিত ডাঃ দেবাশীষও। যা হোক, খেলাধুলায় স্পোর্টস ফিজিসিয়ান হচ্ছে এক প্রকা- ছাঁকনি, যা সফলদের ছেঁকে নেয়ার জন্য তৈরি। আবার পিছিয়ে পড়াদের হাত ধরে এগিয়ে নেয়ারও এক জিয়নকাঠি। সুচিকিৎসার মাধ্যমে ইনজুরি আক্রান্তদের কেবল সুস্থ করে তোলাই তাদের একমাত্র দায়িত্ব নয়। একজন নবীন খেলোয়াড়কে মানসিকভাবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও অবদান অনস্বীকার্য। খেলার মাঠে সাফল্যের কৃতিত্ব খেলোয়াড়দের। কিন্তু এই সাফল্য ছিনিয়ে আনতে নেপথ্যে যারা সাপোর্ট দিয়ে যান বা কাজ করেন তাদের অবদান অস্বীকার করা সুযোগ নেই। যদিও অর্জনের যত হৈহুল্লোড় বা মাতামাতি খেলোয়াড়দের নিয়েই। সাফল্যের পুরস্কারটাও জুটে কোচ-খেলোয়াড়দের ভাগ্যে। ফলে অনেকটা পর্দার অন্তরালেই থেকে যান নেপথ্যের আরও অনেক নায়ক। পরিষ্কার অর্থে ব্যাকফুটে চলে যান দলের স্পোর্টস ফিজিসিয়ান ও তার সহকর্মীরা। যদিও এ নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই সদালাপী ডাঃ দেবাশীষের। তার কথায়, আমি সৎ ব্যক্তিদের সঙ্গে জড়িত। একজন ক্রিকেটার বা যে কোন ইভেন্টের খেলোয়াড়ের অর্জিত অর্থে কলঙ্ক নেই। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জন করছেন তারা অর্থ। ক্রীড়াবিদরা সমাজের যে আসনটা দখল করে আছেন তা অনেক মর্যাদার। মোদ্দাকথা সৎ, সম্মানিত ব্যক্তিদের পাশে থাকাটা আমি দারুণভাবে উপভোগ করি। তাদের সেবা দেয়ার মধ্যেই আমার তৃপ্তি। কথায় আছে, ‘সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস-অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।’ স্বর্গবাসের বিষয়টাই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। হৃদয়ে দাগ কাটার মতো এমন যার অভিব্যক্তি তাকে সমাজ তথা চিকিৎসা জগতের মহান ব্যক্তি বললে বোধ হয় ভুল হবে না। আলাপে বললেন, স্পোর্টস এ্যান্ড এক্সারসাইজ, ইনজুরি ম্যানেজমেন্ট, ফিটনেস, নিউট্রিশন, পারফর্মেন্স এনহেন্সম্যান্ট- এই বিষয়গুলো নিয়ে বিসিবিতে কাজ করি। পাশাপাশি এ্যান্টি ডোপিং, নিষিদ্ধ ড্রাগ সেবনে খেলোয়াড়দের বিরত থাকার পরামর্শ দেই। বিসিবির এই গন্ডির বাইরে বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ট্যালেন্টহান্ট কর্মসূচী থাকে সেখানে খেলোয়াড়দের বয়স নির্ধারণের দায়িত্বও পালন করতে হয়। বিসিবির বড় একটা মেডিক্যাল টিম আছে, যেখানে ডাক্তার, ফিজিও, ফিটনেস ট্রেনার সমন্বয়ে ক্রিকেটারদের দেখভাল করা হয়। জাতীয় দলসহ বিসিবির অধিনে প্রায় শতাধিক ক্রিকেটার রয়েছেন যাদের নিয়ে প্রতিমাসে মিটিং হয়। যার মাধ্যমে কার কি কাজ, আমরা দায়িত্ব ভাগ করে নেই। এ ছাড়া দেশব্যাপী লীগ, জাতীয় পর্যায়ের বয়সভিত্তিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রথম শ্রেণীর ঘরোয়া ক্রিকেট যেমন বিপিএল, প্রিমিয়ার লীগ, এনসিএলসহ বিসিবির সব ধরনের টুর্নামেন্টে মেডিক্যাল সাপোর্ট দিয়ে থাকি। এ তালিকায় রয়েছে নারী ক্রিকেটাররাও। ডাঃ দেবাশীষের ভাষ্য, ফুটবল কিংবা হকির মতো বড় ইনজুরির ঘটনা ক্রিকেট ম্যাচে সচরাচর ঘটে না। তারপরও ইনজুরি খেলার একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। ক্রিকেটে হাত-পা ভেঙ্গে যাওয়ার ঘটনা খুবই নগণ্য। ক্রিকেটে যে ধরনের ইনজুরি হয় তা আমরাই চেষ্টা করি ভাল করার। একান্তই প্রয়োজন হলে বিদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি। বিসিবির পুলে থাকা ক্রিকেটারদের সমস্যা আমরা সমাধান করতে না পারলে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত ও থাইল্যান্ডে পাঠানো পরামর্শ দিয়ে থাকি। কোন দেশে পাঠানো হবে সেটা নির্ধারণ করা হয় আঘাতের গভীরতা যাচাইয়ের পর। অর্থাৎ অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা। এটা বিশাল খরচের হলেও বিসিবির ফান্ড আছে। কাজেই যে দেশেই হোক চিকিৎসার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হয় না। এটা বড় প্লাস পয়েন্ট, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা সৌভাগ্যবান অন্য ইভেন্টগুলোর তুলনায়। তিনি বললেন, আমি এক সময় বিকেএসপিতে ছিলাম। সেখানকার তিক্ত-মধুর দুই অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে। সেখানে একজন খেলোয়াড়কে চিকিৎসার জন্য চিঠি লিখতে হতো। ধাপে ধাপে ফরমালিটিজ মেন্টেইন করে সেটা পাস হয়ে আসতে প্রায় মাস পেরিয়ে যেত। কিন্তু বিসিবিতে আমলাতান্ত্রিক এই জটিলতা নেই। উদাহারণ টানতে গিয়ে বললেন, চোখের সমস্যায় বয়স ভিত্তিক দলের দুই ক্রিকেটার বর্তমানে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ক্রিকেটার বলেই তারা এই সুবিধাটা পাচ্ছে। অন্য কোথাও হলে সেটা সম্ভব হতো কিনা সন্দেহ। পাশাপাশি বিকেএসপির মতো ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান দেশের জন্য গৌরবের। এখানকার পরিবেশে কাজের মধ্যে অনন্দও আছে। যা এক সময় আমি পেয়েছি। প্রশ্ন ছিল, ক্রিকেটের এত ব্যস্ততার মধ্যে ছুটে আসা দেশের প্রায় সব খেলার খেলোয়াড়কেই আপনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। এতে কখনও বিরক্তবোধ করেন কী? সদা হাস্যোজ্জ্বল দেবাশীষ চৌধুরীর উত্তর, মানুষকে সেবা দেয়ার ভাগ্য ক’জনের হয়ে থাকে। ওরা আমাকে ভালবাসে, আমার প্রতি আস্থা রাখে বলেই তো আসে। আমাদের দেশের অন্য ইভেন্টের বেশিরভাগ ক্রীড়াবিদ অসচ্ছল। আমার চেম্বারে (দেশের স্বানাম খ্যাত হাসপাতাল) গেলে দেখা যাবে একটা ইনজেকশন পুশ করতেই ৪/৫ হাজার টাকা বিল আসবে। এই টাকাটা যাতে না লাগে সেজন্যই এখানে চিকিৎসা, পরামর্শ দিয়ে থাকি। তার আদর্শ আর নীতিবোদ, মানুষের সেবার মধ্যে দিয়ে নিজের আত্মতৃপ্তির এই অনুভূতি, সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। শুধুই কি খেলোয়াড়? বিসিবির প্রায় শতাধিক স্টাফের পাশাপাশি অন্য ফেডারেশনের লোকরাও তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। মিরপুর শেরেবাংলায় একটি অত্যাধুনিক জিম রয়েছে। যা অন্য কোন ফেডারেশনের নেই। এই জিম কেবল ক্রিকেটারদের জন্য। এখানে যেসব যন্ত্রপাতি রয়েছে তা বডি বিল্ডিং বা ফুটবলারদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। ফিটনেসের জন্য ক্রিকেটারদের যে ধরনের অনুশীলন দরকার এই জিমে কেবল সেগুলোই আছে। ডাঃ দেবাশীষ আক্ষেপের সুরে বললেন, আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে ক্লাব দূরের কথা জাতীয় ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোর কোন জিমন্যাসিয়াম নেই। খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্স ধরে রাখতে বা তা আরও উন্নত করতে জিমের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু মানসম্পন্ন জিম না থাকায় ফিটনেস ঘাটতির কারণে যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও খেলোয়াড়রা ঠিকমতো পারফর্মেন্স করতে পারে না। খেলাধুলার উন্নতির জন্য জিমের গুরুত্ব অপরিসীম। একই সঙ্গে স্পোর্টস সাইন্সকেও গুরুত্ব দিতে হবে। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মেডিক্যাল বোর্ড আছে। আছে এ্যান্টি ডোপিং উইং। ওরাই আমাদের মাদার বডি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ও বিওএ’র যৌথ উদ্যোগে একটি স্পোর্টস মেডিসিন ইনস্টিটিউট গড়ে তুলতে পারে। খেলাধুলার জন্য এটা খুবই অপরিহার্য। এ ধরনের ইনস্টিটিউট করতে না পারলে মানসম্পন্ন খেলেয়াড় সৃষ্টি করা অসম্ভব। ট্যালেন্টহান্টের মাধ্যমে যতই খেলোয়াড় সংগ্রহ করা হোক, কোন কাজে আসবে না। সুফল বয়ে আনবে না। ভাল ক্রীড়াবিদ হতে শুধু মাঠের অনুশীলন যথেষ্ট নয়। জিমসহ স্পোর্টস মেডিসিন সেন্টার না থাকলে ফিটনেস ঘাটতি থেকে যাবে। বিকেএসপির সুযোগ আছে। তারা ইচ্ছা করলে করতে পারে। কষ্ট হয় এত বড় একটা ক্রীড়া ইনস্টিটিউট, কিন্তু কোন স্পোর্টস মেডিক্যাল নেই। আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে, প্রয়োজনীয় মেডিসিন, স্পোর্টস ফিজিসিয়ান সমন্বয়ে ক্রীড়া চিকিৎসা সেন্টার নেই। জাতীয় ক্রীড়া ইনস্টিটিউট হিসেবে বিকেএসপি এ বিষয়ে বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু সুযোগ থাকার পরও কোন উদ্যোগ নেই। স্পোর্টস মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। তা না হলে সারা বছর ট্রেনিং দিয়ে খেলোয়াড় তৈরি করলেও ফিটসেনের অভাবে একটা পর্যায়ে গিয়ে তারা থেমে যাবে। কাজেই আমি মনে করি খেলাধুলার বৃহত্তর স্বর্থে এ বিষয়টার দিকে সরকারের নজর দেয়া উচিত। বিসিবির মেডিক্যাল কমিটি আছে। কমিটির চেয়ারম্যান আছে। চিকিৎসার জন্য আলাদা বরাদ্দ আছে। ফলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া যায়। এখানে কিছুটা পেশাদারিত্ব আছে বলেই এটা সম্ভব। বিসিবি ছাড়া ক্রীড়াঙ্গনের কোথাও ন্যূনতম পেশাদারিত্ব নেই। ইংল্যান্ড থেকে স্পোর্টস মেডিসিনের ওপর মাস্টার্স করে যে খেলাকে ঘিরে বিশ্ব চেনে বাংলাদেশকে সেই ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন ডাঃ দেবাশীষ। বিসিবিতে তার সঙ্গে আছেন ডাঃ মনিরুল আমিন শাম্মি। স্পোর্টস মেডিসিনের ওপর উচ্চতর ডিগ্রী নিয়েছেন তিনি মালয়েশিয়া থেকে। বিসিবির বরাদ্দ আছে বলেই নিজেদের আরও পরিণত করতে বিদেশে ট্রেনিং, সভা-সেমিনারে অংশ নেয়ার সুযোগ পাচ্ছি। এটা একটা বড় সুবিধা। তিনি জানালেন, প্রতিবছর ঘরোয়া টুর্নামেন্ট শুরু আগে এ্যান্টি ডোপিং টেস্ট করা হয়। ক্রিকেটারদের সতর্ক রাখতেই এ উদ্যোগ। এটা বাংলাদেশে শুধু ক্রিকেটেই আছে। অন্য কোন ইভেন্টে নেই। বিগত তিন বছর ধরে চলছে এই কার্যক্রম। ডাঃ দেবাশীষ জানালেন, খরচ অনেক। এক একটা টেস্টের জন্য ৬০০ থেকে ৮০০ ডলার খরচ হয়। তবু বিসিবিতে এটা চালু রয়েছে ক্রিকেটারদের বাজে নেশা থেকে বিরত রাখতে। এই টেস্টের রিপোর্ট পাঠানো হয় ওয়াল্ড এ্যান্টি ডোপিং এজেন্সির (ওয়াডা) কাছে। সেখান থেকে আবার রিপোর্ট/পরামর্শ আসে। সব মিলিয়ে একটা গোছালো পরিবেশ রয়েছে বিসিবিতে। তারই ফসল ক্রিকেটের এই ঈর্ষণীয় সাফল্য। ডাক্তার দেবাশীষের স্ত্রী তাহিয়া হেসেইন ব্র্যাকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। আর একমাত্র সন্তান জারিফ চৌধুরী ‘এ লেভেল’ শেষ করছে। ক্রীড়া নিবেদিতপ্রাণ ডাঃ দেবাশীষ মনে করেন ঢালাওভাবে সব খেলায় পৃষ্টপোষকতা করলে আন্তর্জাতিক সাফল্য অধরাই থেকে যাবে। উদাহারণ টানতে গিয়ে বললেন, মেধা খাটিয়ে দাবায় আমরা ব্রাজিলকে হারাতে পারব। কিন্তু ফুটবলে সম্ভব নয়। গলফে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের প্রত্যেক ক্যান্টনমেন্টে গলফ মাঠ রয়েছে। যার সংখ্যা ১২টির মতো। রয়েছে অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুবিধা। গলফ মধ্যবিত্তরা খেলেন না। সমাজের ধনী এবং একেবারে নিচের সারির (ক্যাচার বা বলবয়) ব্যক্তিরা এই খেলার সঙ্গে জড়িত। অনুশীলনই সাফল্যের চাবিকাঠি। প্রমাণ গলফার সিদ্দিকুর রহমান। সামান্য বলবয় থেকে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সেরা তারকা ক্রীড়াবিদ তিনি। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইভেন্ট বাছাই করতে হবে। যেসব খেলায় সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিলে আন্তর্জাতিক সাফল্য অর্জন সম্ভব। পরিশেষে তিনি বললেন, ছোটবেলা থেকে খেলাধুলা ভালবাসি। চিকিৎসাসেবার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনের জড়িত থাকতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করি। প্রসঙ্গত, ডাঃ দেবাশীষ দেশের জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের সঙ্গেও এক সময় সরাসরি জড়িত ছিলেন। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে বিদেশেও দেখা গেছে। ২০০৪ সালে মিয়ানমারের চার জাতি আন্তর্জাতিক ফুটবলে, পরের বছর পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে তিনি জাতীয় দলের ফিজিসিয়ান ছিলেন। এছাড়া বিওএ’র অধিনস্থ আন্তর্জাতিক ক্রীড়া আসরে অংশ নেয়া বাংলাদেশ কন্টিনজেন্টের চিকিৎসক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। মোদদ্দাকথা জীবনটাই কাটাচ্ছেন খেলাধুলা বুকে আগলে ধরে। উদারতার এমন নজির আগামীতে কবে কে দেখাতে পারেন সেটাই দেখার।
×