ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কে নেবেন স্পটকিক?

প্রকাশিত: ১৮:৫১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কে নেবেন স্পটকিক?

অনলাইন ডেস্ক ॥ এক বনে নাকি দুই বাঘ থাকতে পারে না। মেসি-নেইমার একসঙ্গে ছিলেন, দুনিয়া জয় করেও একসঙ্গে থাকা আর হলো কই? ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলবদল ফিতে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে এসেছেন ব্রাজিলীয় ফুটবল জাদুকর। কিন্তু এখানেও কি বনের রাজা হতে পেরেছেন নেইমার? পিএসজির পরশুর ম্যাচটি তো চোখ কপালে তুলে দিল। পেনাল্টি আর ফ্রি কিক কে নেবেন, এ নিয়ে অপ্রীতিকর দৃশ্যের জন্ম দিলেন নেইমার-কাভানি। ম্যাচের পরিসংখ্যান বলবে, চলতি মৌসুমে পিএসজির শিরোপা অভিযান পুরোপুরি নেইমার-কেন্দ্রিক। লিগে ৪ ম্যাচ খেলে নেইমারের গোল আর অ্যাসিস্ট সমান ৪টি করে। চ্যাম্পিয়নস লিগেও গোল করেছেন একটি। নেইমার-জাদুতে ভর করেই পিএসজি এই মৌসুমে এখনো অপরাজিত। এই মৌসুমে কাভানির গোল ৭টি। এর দুটি পেনাল্টি থেকে। লিওঁর ম্যাচে মিসসহ এই তিনটি পেনাল্টি নেইমার নিলে গোলসংখ্যা আরও বাড়তে পারত। এর মধ্যেই কাভানিকে দিয়ে এক গোল করিয়েছেন নেইমার। উরুগুয়ের ফরোয়ার্ডও এক গোল করিয়েছেন নেইমারকে দিয়ে। তবে নেইমার যতগুলো সুযোগ তৈরি করেন কাভানির জন্য, ততটা গোল হয় না। কাভানিও নেইমারকে সে পরিমাণ সুযোগ বানিয়ে দেন না। বলা উচিত দিতে পারেন না। কারণ, কাভানির পজিশনটা নিখাদ নাম্বার নাইনের। গোল বানানো নয়, বরং গোল করাটাই তাঁর মূল কাজ। এ কারণেই জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ থাকতেও বেশ কয়েকবার পেনাল্টি নিয়েছেন কাভানি। কিন্তু নেইমার পিএসজিতে কারও ছায়া হয়ে থাকতে আসেননি। কাউকে দিয়ে গোল করিয়ে প্রথম প্রথম বাহবা কুড়ালেও শেষ বিচারে গোলদাতার ওপরই ছড়িয়ে পড়বে আলো। নেইমার পিএসজিতে রাজা হতে এসেছেন। পেনাল্টি, ফ্রি কিক, এমনকি কর্নারও নিতে চান। ওদিকে কাভানি ছাড় দিতে রাজি নন। নেইমারই–বা তাহলে এত নিঃস্বার্থ কেন হবেন? স্বার্থের সংঘাত অবশেষে দেখাই দিল। প্রশ্নটা জোরালো হয়েছে লিঁওর বিপক্ষে ম্যাচে। কাভানিকে ফ্রি কিক নিতে দেননি নেইমার আর আলভেজ। কাভানি এর শোধ তুলেছেন, নেইমারকে পেনাল্টি নিতে দেননি। তবে দুই ঘটনারই ফলাফল একই। গোল করতে পারেননি নেইমার-কাভানির কেউই। তাই আখেরে ক্ষতিটা পিএসজিরই। এর আগে তুলুজের ম্যাচেও পেনাল্টি নিতে চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন নেইমার। ক্লাবটা বার্সেলোনা নয় যে নিঃস্বার্থভাবে বল বানিয়ে দেবেন মেসি। নিজের হ্যাটট্রিক সামনে রেখেও নেইমারকে পেনাল্টি নিতে দিয়েছেন মেসি। এমএসএন যুগের শেষ দিকে স্পটকিকে নেইমারের প্রাধান্য ছিল। সিংহভাগ শট নিজে নিলেও কোনো পজিশনে নেইমার বেশি ভালো শট নিতে পারবেন বুঝলে মেসি জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন। মেসি ছাড় দিতে পারলে কাভানি একদম নাছোড় হয়ে থাকবেন কেন! ব্রাজিলের হয়েও ফ্রি কিক এবং পেনাল্টি নেন নেইমার। পিএসজিতে এসেও সেটাই চাইবেন, এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। দ্রুত এর সমাধান খোঁজা জরুরি। সেই তাগিদ দিয়েছেন কোচ উনাই এমেরিও। প্রশ্নটা হলো, দুজনের কে ভালো স্পটকিক নেন? ক্যারিয়ারে ৫৬টি পেনাল্টি নিয়েছেন কাভানি, গোল করেছেন ৪৬টি। সফলতার হার ৮২.১৪ শতাংশ। অন্যদিকে ৪০টি পেনাল্টির ৩২টিতে গোল করেছেন নেইমার। সফলতার হার ৮০ শতাংশ। দুজনই ক্যারিয়ারে ৭টি ফ্রি কিক গোল করেছেন। তাই পার্থক্যটা খুবই নগণ্য। কিন্তু কাভানির ক্যারিয়ারে ৩২টি অ্যাসিস্টের বিপরীতে নেইমারের রয়েছে ৬২টি অ্যাসিস্ট। ম্যাচও কম খেলেছেন নেইমার। ফ্রি কিকে নেইমার থাকলে পিএসজির গোলের সম্ভাবনা বাড়বে, এ নিয়ে কাভানি-ভক্ত ছাড়া আর কেউ তর্ক করবেন বলে মনে হয় না। আর পেনাল্টি যে নাম্বার নাইনকেই নিতে হবে, এমন কোনো কথা নয়। মেসি এখনো বার্সার প্রতিটি পেনাল্টি নেন। এই কর্তৃত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলার সাহস পর্যন্ত পাবে না। নেইমার তো পিএসজির এমনই এক নেতা হবেন বলেই বার্সার মতো ক্লাব ছেড়েছেন। এখন সেখান থেকে বেরিয়ে যদি কাভানির ছায়া হয়ে থাকতে হয়; এর চেয়ে তো মেসির ছায়াই ঢের ভালো ছিল। এখন স্পট কিক নেওয়ার দায়িত্ব কার কাঁধে বর্তাবে, সেটিই দেখার। পেনাল্টি বা ফ্রি কিক নিয়ে এই বল কাড়াকাড়ির দৃশ্য যে মোটেও সুখকর কিছু নয়। সূত্র: ইএসপিএন এফসি।
×