ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

৪০০ শিশুর জন্ম নো-ম্যান্স ল্যান্ডে

প্রকাশিত: ১৮:৩০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

৪০০ শিশুর জন্ম নো-ম্যান্স ল্যান্ডে

অনলাইন ডেস্ক ॥ সীমান্তের ৫০০ গজ দূরের একটি কর্দমাক্ত স্থানে আরো অনেক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুর সাথে বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ছিলেন সুরাইয়া। সে সময় তার প্রসব বেদনা শুরু হলে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি তাকে একটি নৌকায় ওঠায়। নৌকার চার দিকে শাড়ি দিয়ে ঘিরে দেয়া হয়। সেখানেই একটি কন্যাসন্তানের জন্ম দেন সুরাইয়া। শিশুটির নাম রাখা হয় আয়েশা। দুদিন ধরে সদ্যোজাত মৃত সন্তানকে নিয়ে পথ চলেছেন আরেক রোহিঙ্গা নারী। মৃত সন্তানকে দাফন করার মতো অবস্থাও তার ছিল না। একপর্যায়ে তিনি বাধ্য হয়ে মৃত সন্তানকে নাফ নদীতে ফেলে দিয়ে সমাধিস্থ করেন। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় এভাবে জন্ম নিয়েছে চার শতাধিক নবজাতক। নোম্যান্স ল্যান্ড আটকা পড়েছে আরও অনেক রোহিঙ্গা। তাদের মধ্যে রয়েছে গর্ভবতী বহু রোহিঙ্গা নারী। এ নিয়ে দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট ও গার্ডিয়ান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাদের হিসাবে, গত ১৫ দিনে রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত সহিংসতার মুখে পালিয়ে আসা চার লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে যোগ হচ্ছে এসব শিশু। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ৮০ শতাংশই নারী আর শিশু। আর পালানোর মুখে জন্ম হচ্ছে নতুন নবজাতকের। খাদ্য, পুষ্টি ও চিকিৎসার অভাবে মা-নবজাতক মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকেই মৃত্যুবরণও করেছে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাচ্ছেন মা, আবার মা অসহায় হয়ে দেখছেন সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুর অসুস্থতা কিংবা আশ্রয় নেওয়া ক্যাম্পের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মারা যাচ্ছে নবজাতক। শরণার্থী গর্ভবতীদের করুণ পরিণতি বর্ণনা করেন জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের হাইকমিশনার ভিভান তান। তাকে নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পের চিকিৎসাকেন্দ্র ঘুরিয়ে দেখান সেখানকার এক লোক। এরপর ভিভান তান বলেন, ‘ওই লোক আমাদের ছোট একট ঝুড়ির কাছে নিয়ে যান। সেখানে কম্বল দিয়ে ঢাকা ওই ঝুড়ি খুলে তিনি আমাদের দুটি শিশু দেখালেন। অল্প সময় আগেই যমজ ওই শিশুদের মধ্যে একটি এরই মধ্যে মারাও গেছে।’ এ বিষয়ে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দুই পাশেই নারী ও শিশুদের জরুরি সাহায্য ও নিরাপত্তা দরকার। যদিও মিয়ানমার তাদের অংশে যেকোনো সাহায্যকারী সংস্থার কর্মীদের প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে।
×