ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মিয়ানমারের ওয়েবসাইটে সাইবার হানা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মিয়ানমারের ওয়েবসাইটে সাইবার হানা

ফিরোজ মান্না ॥ রোহিঙ্গা নিধন ও দেশত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদে বাংলাদেশের হ্যাকার গ্রুপ ‘সাইবার-সেভেন্টি-ওয়ান-বাংলাদেশী হ্যাকার’ প্রতিনিয়ত মিয়ানমারের বিভিন্ন সরকারী দফতরে হামলা চালাচ্ছে। এ পর্যন্ত মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দফতর, কাস্টমস বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করে দিয়েছে। আক্রমণের পর ওই সব সাইটে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবিসংবলিত ব্যানার সাঁটা হয়েছে। পরে অবশ্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ ওই সব দফতরের সাইটগুলো মেরামত করে পাল্টা আক্রমণ চালিয়েছে বলে সাইবার-৭১ গ্রুপটি জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত দেশের কোন সাইট তারা হ্যাক করতে পারেনি। সাইবার-সেভেন্টি-ওয়ান-বাংলাদেশী হ্যাকার গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যতদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ না হবে ততদিন পর্যন্ত তাদের আক্রমণ চলতে থাকবে। এ গ্রুপের এক সদস্য জানিয়েছেন, প্রতিদিন মিয়ানমারের বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী দফতরে হামলা চালানো হচ্ছে। শনিবার মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের দফতর, কাস্টমস বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয় ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট কিছু সময়ের হ্যাক করে রাখা হয়েছিল। বরিবারও আক্রমণ অব্যাহত রাখা হয়েছে। সাইবার-৭১ তাদের অফিসিয়াল পেজে জানিয়েছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞ বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত এ হামলা চলতেই থাকবে। ইন্দোনেশিয়ার হ্যাকারদের সঙ্গে মিলে এ হ্যাকিং গ্রুপটি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট (যঃঃঢ়://িি.ি ঢ়ৎবংরফবহঃ-ড়ভভরপব.মড়া.সস), তথ্য মন্ত্রণালয় (যঃঃঢ়://িি.ি সড়র.মড়া.সস), কেন্দ্রীয় ব্যাংক (যঃঃঢ়://িি.ি পনস.মড়া.সস) এবং প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এম কে গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (যঃঃঢ়://িি.িসশমৎড়ঁঢ়.পড়স.সস) আক্রমণ চালিয়ে সাইটগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। হ্যাক করা অন্য ওয়েবসাইটগুলো বন্ধ থাকলেও পরে এম কে গ্রুপের ওয়েবসাইট হ্যাক করার পর সাইবার-৭১ সেটি চালু রাখে। সাইটটিতে গেলেই এক রোহিঙ্গা নারীর ছবিসহ কিছু লেখা দেখা যাচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘সাইবার-৭১ হ্যাক করেছে। প্রতিদিন মিয়ানমারের মুসলিমরা মিয়ানমারের সরকারের হাতে মারা যাচ্ছে। একই সঙ্গে তাদের সবার থেকে আলাদা করে ফেলা হচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি, স্থাপনা ও মসজিদ ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। সরকার শুধু দর্শকের মতো এসব দেখে যাচ্ছে। দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর এমন জুলম নির্যাতন মিয়ানমার সরকার শুধু তাকিয়ে দেখছে। আমরা মিয়ানমার সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য হ্যাকিংয়ের পথ বেছে নিয়েছি।’ যেসব ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে, ওই ওয়েবসাইটগুলোর ওপর কিছু সেøাগান ও নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের ছবি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘মুসলিম হত্যা বন্ধ করো, নইলে আমরা প্রতিদিনই তোমাদের ওয়েবসাইট হ্যাক করব।’ মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতন ও হত্যার প্রতিবাদে সাইবার-৭১ তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে লিখেছে, ‘মিয়ানমার প্রেসিডেন্ট অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের পর এবার মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও মিয়ানমারের প্রভাবশালী কোম্পানি এম কে গ্রুপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ডিডস আক্রমণের শিকার।’ আরেক পোস্টে লিখেছে, ‘একটাই পরিষ্কার সতর্কবার্তা, তারা যতক্ষণ পর্যন্ত রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের সাইবার স্পেসে আক্রমণ পরিচালনা করব। রোহিঙ্গাদের আশ্রয় এবং নির্যাতন বন্ধ না করলে আমাদের আক্রমণ চলতেই থাকবে।’ এর আগে এক পোস্টে জানায়, ‘তারা লঙ্ঘন করেছিল আমাদের আকাশসীমা, আমরা লঙ্ঘন করলাম তাদের সাইবার স্পেসের সীমা। মিয়ানমার কেন্দ্রীয় ব্যাংক, প্রেসিডেন্ট অফিসিয়াল, তথ্য মন্ত্রণালয়, কোম্পানি, মিডিয়ার ওয়েবসাইট আক্রান্ত... খেলা চলছে, চলবে।’ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানের প্রতিবাদ করেছে বাংলাদেশী হ্যাকিং গ্রুপ সাইবার-৭১। মিয়ানমার সরকারের এ অভিযানের ফলে বাংলাদেশে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। তাদের নিজ ভূমি থেকে বিতাড়ন করা হচ্ছে। এটা মানা হবে না। উল্লেখ্য, সাইবার-সেভেন্টি-ওয়ান’-এর আগে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কে যখন উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল, তখন এ গ্রুপটি কয়েকটি পাকিস্তানী সাইট হ্যাক করেছিল। বাংলাদেশ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে বহুল আলোচিত ‘ফেলানি হত্যা’র ঘটনায় ভারতীয় কিছু সাইটেও হামলা চালিয়েছিল এ গ্রুপটি।
×