ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে মিয়ানমারের বাঙ্কার খনন, মাইন পোঁতা চলছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সীমান্তে মিয়ানমারের বাঙ্কার খনন, মাইন পোঁতা চলছে

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সীমান্তে অস্থিতিশীলতা বাড়ছে। মিয়ানমার বাহিনীর বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্তে স্থলমাইন পোঁতার ঘটনার পর এখন বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার খনন করা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা অনাহূত যুদ্ধংদেহী মনোভাব প্রদর্শন করে চলেছে। সীমান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক সকল আইনকানুন লঙ্ঘন করে মিয়ানমার সরকারের নির্দেশে সেদেশে সেনাবাহিনী প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের প্রতি ক্রমাগত অনাকাক্সিক্ষত, অবৈধ এবং সব ধরনের উস্কানিমূলক আচরণ অব্যাহত রেখেছে। সেনা তা-বে রাখাইন রাজ্যে গণহত্যার যে বর্বরতম ও হিং¯্র ছোবল হানা হয়েছে তা জাতিসংঘসহ সারা বিশ্বকে প্রতিবাদী করে তুলেছে। জাতিসংঘ মহাসচিব সর্বশেষ গত রবিবারও সুনির্দিষ্টভাবে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে দিয়েছেন, মিয়ানমারের এনএলডি নেত্রী আউং সান সুচির জন্য এটা চূড়ান্ত ও শেষ সুযোগ। এ হুঁশিয়ারির ২৪ ঘণ্টা অতিক্রম করার পরও রোহিঙ্গা ইস্যু ও সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কোন উন্নতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। উল্টো সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতিতে প্রতীয়মান হচ্ছে মিয়ানমার বাহিনী ক্রমাগত শক্তি সঞ্চার করে রণসাজে সজ্জিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্ব সংস্থাগুলো এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের পথে এগোচ্ছে। গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর পরিস্থিতি দিন দিন অবনতিশীল। নির্বিচারে গণহত্যার পাশাপাশি বিতাড়নের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর আগমন ঘটেছে সীমান্ত অঞ্চল সংলগ্ন টেকনাফ থেকে নাইক্ষ্যংছড়ি তুমব্রু এলাকা পর্যন্ত। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য অনুযায়ী রাখাইন রাজ্যে ৫ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে, বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও ইতোমধ্যে বাংলাদেশে গত বছরের অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গা আগমন শুরু হওয়ার পর তা ১০ লক্ষাধিক ছাড়িয়ে যাবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। এবার সীমান্তের ওপারে বাংকার খনন ॥ মিয়ানমার বাহিনীর পক্ষে দফায় দফায় বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন, সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন পয়েন্টে হাজার হাজার স্থলমাইন পোঁতা অব্যাহত রাখা, জিরো পয়েন্ট ছাড়িয়ে কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত সেনা টহলের পর এবার ওপারের বিভিন্ন পয়েন্টে বাংকার খনন করা হচ্ছে। সীমান্তের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ বরাবর মিয়ানমারের কুল্লং থেকে শুরু করে বান্দরবানের রুমা উপজেলার রেমাক্রি পানসা এলাকা পর্যন্ত সীমান্ত জুড়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পুলিশ ফোর্স ও আধাসামরিক বাহিনী তথা মিয়ানমার পিপলস মিলিশিয়া ইউনিটস এ্যান্ড ফ্রন্টিয়ার ফোর্স (নাসাকা) সদস্যরা এসব বাংকার খনন করে চলছে বলে ওপারের সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের জিরো লাইনে এ ধরনের বাংকার খনন করতে এখনও দেখা যায়নি। সূত্রসমূহ জানিয়েছে, মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর বাংকার খনন কাজে দক্ষিণ ও উত্তর রাখাইনে সেদেশের উপজাতীয় বহু শ্রমিক নিয়োজিত করা হয়েছে। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, ব্যাপক নজরদারির মাধ্যমে বহু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদেরও বাংকার খনন কাজে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োজিত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এদের কোন মজুরিও দেয়া হচ্ছে না। যৎসামান্য খাদ্যের বিনিময়ে এদের এ কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। জানা গেছে, সন্দেহজনকভাবে আটক রাখা রোহিঙ্গা যুবকদের এ কাজে লাগানো হয়েছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংকার খনন কাজ শেষে রাতেরবেলা নির্দিষ্ট স্থানে আটকে রাখা হয় যাতে তারা পালিয়ে যেতে না পারে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত রয়েছে ২৭১ কিলোমিটার। এরমধ্যে ৬৩ কিলোমিটার জলসীমা এবং বাকি ২০৮ কিলোমিটার রয়েছে পার্বত্য বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি অরণ্য ও বিচ্ছিন্ন জনপদ। বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম, থানচি ও রুমা চারটি উপজেলাজুড়ে রয়েছে ২০৮কি.মিটারের এ স্থল সীমান্ত। সূত্র আরও জানায়, বাংলাদেশ সীমান্তের টেকনাফ শাহপরীর দ্বীপ বরাবর মিয়ানমারের মংডুর দক্ষিণে কুল্লং, হাইচ্যুরাতা, মেরুংলা ও শীতপুরিক্যা, মংডুর উত্তরে সিকদারপাড়া, বলিবাজার, কুয়ারবিল, কুমিরখালী, সাহাববাজার, মৌলবির জায়গা, কোয়াংচিবং, চাকমাকাটা, মেদাই, তুমব্রু রাইটস এবং তুমব্রু লেফ্ট এলাকায় ইতোমধ্যে বহু বাংকার খনন করেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ওসব বাংকারে রীতিমতো সশস্ত্র সেনা পাহারা বসানো হয়েছে। কিছু কিছু বাংকার কনক্রিটও সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ বাংকারজুড়ে বালি ও মাটির বস্তা জড়ো করা হচ্ছে। এদিকে বর্ডার গার্ড (বিজিবি) বাংলাদেশের জওয়ানরা সীমান্ত এলাকাজুড়ে সতর্ক অবস্থা আরও জোরদার করেছে। দিবারাত টহলদান অব্যাহত রাখা হয়েছে সীমান্তের সকল পয়েন্টে। মিয়ানমারে বাংকার খননের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এএসএম আরিফুল ইসলাম সোমবার জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, মিয়ানমার অভ্যন্তরে বাংকার খনন কাজের তথ্য তাদের কাছে এসেছে। তবে তা বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো লাইনে নয়। দেশটির অভ্যন্তরে কেন বাংকার খনন করা হচ্ছে তা এখন জানা যায়নি। বিষয়টি বিজিবির সদর দফতর থেকে অবহিত করা হয়েছে। এছাড়া এর আগে মিয়ানমারের হেলিকপ্টারের আকাশসীমা লঙ্ঘন, ড্রোন প্রেরণ এবং গুলি বর্ষণের ঘটনা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতকে তলব করে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে কয়েক দফায়। মিয়ানমারে আরও ৫ লাখ রোহিঙ্গা ॥ গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। মিয়ানমারের উত্তর ও দক্ষিণ রাখাইন রাজ্যে বসবাস করছিল ১১লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। এদের মধ্যে গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে বাংলাদেশে। গত ২৬ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত আরও নতুন করে অনুপ্রবেশ এবং আশ্রয় নিয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। হাতির আক্রমণে ৭ রোহিঙ্গা হতাহত ॥ কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বন্য হাতির আক্রমণে ৭ রোহিঙ্গা হতাহত হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন নিহত ও ৫ জন আহত হয়েছে। নিহতরা সম্পর্কে পিতা-পুত্র। রবিবার মধ্যরাতে উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- শামশুল আলম (৫৫) ও তার দু’বছর বয়সী পুত্র ছৈয়দুল আমিন। নিহত শামশুল আলম মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বলিবাজার ফকিরের ডেইল এলাকার নুরুল আলমের পুত্র। তারা সম্প্রতি আশ্রয়ের আশায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন উখিয়া থানার ওসি (তদন্ত) কিসলু। প্রসঙ্গত, মধুরছড়া নামক স্থানে বন্যহাতির পাল প্রায় সময় চলাচল করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এরা লোকালয়ে হামলে পড়ে। সাধারণত খাদ্যের সন্ধান হাতির দল লোকালয়ে প্রবেশ করে থাকে। বর্তমানে ঐসব এলাকায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের ব্যাপক অবস্থান হয়েছে। রবিবার রাতে এ ধরনের একটি হাতির দল চলাচলের সময় রোহিঙ্গা অবস্থানকারী শিবিরে হামলে পড়ে। এতে হাতির পায়ে পৃষ্ট হয়ে হতাহতের এ ঘটনা ঘটে। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ ॥ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিরূপ প্রভাবে টেকনাফের উপকূলীয় বাহারছড়ায় কয়েক হাজার জেলের সাগরে মাছ শিকার সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে জেলেও ফিশিং বোট মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে জেলেরা ব্যাপকভাবে আর্থিক ক্ষতির শিকার। কেননা, মৎস্য শিকারই এদের প্রধান কাজ এবং তা থেকে জীবিকা নির্বাহ করে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকে। কিন্তু গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর স্থল নদী ও সীমান্ত পথে রোহিঙ্গাদের ঢল নেমেছে। এছাড়া সাগরজুড়ে অব্যাহতভাবে ভেসে আসছে রোহিঙ্গাদের লাশ। স্থানীয় প্রশাসন প্রথমে নাফ নদে এবং পরবর্তীতে নদের মোহনা সংলগ্ন সাগর এলাকায় মাছ শিকার বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে মৎস্য শিকারিরা এখন বেকার জীবন যাপন করছে। তবে মৎস্য শিকারে নিয়োজিত নৌযানের একটি অংশ সীমান্তের ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের পারাপারের কাজে লিপ্ত হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থও হাতিয়ে নিচ্ছে। বিজিবি ও কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে নাফ নদ ও মোহনা সংলগ্ন সাগর এলাকায় মৎস্য শিকার কার্যক্রম বন্ধ রাখার বিষয়টি সাময়িক। টেকনাফ শামলাপুর বোট মালিক সমিতির সভাপতি বেলাল উদ্দিন এবং সেক্রেটারি জাহেদুল আলম জানিয়েছেন, সমিতির অধীনে ১২০টি ফিশিং বোট রয়েছে। এসব ফিশিং বোট নিয়ে কয়েক হাজার জেলে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। কিন্ত এখন তাদের আয়-রোজগারের পথ সম্পূর্ণ বন্ধ থাকায় অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ মাওলানা আজিজ উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করায় মাইকিং করে ফিশিং বোটগুলোকে সাগরে নামতে সাময়িকভাবে নিষেধ করা হয়েছে। এতে সাগরে মাছ শিকার বন্দ হয়ে গেছে। সাধারণ জেলে পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা ক্রমাগতভাবে বেড়ে যাচ্ছে। প্রধান সড়ক জুড়ে পুরনো কাপড়ে পরিবেশ দূষণ ॥ টেকনাফ এবং উখিয়ার প্রধান সড়কজুড়ে এখন রোহিঙ্গা ত্রাণের পুরনো কাপড়ে পরিবেশ দূষিত করে তুলেছে। এমনিতেই কয়েক লাখ লাখ রোহিঙ্গা খোলা স্থানে অবস্থান নিয়ে মলমূত্র ত্যাগসহ বিভিন্নভাবে পরিবেশকে দূষিত করছে। তার ওপর ত্রাণ হিসেবে এলাকার বা অন্যান্য স্থান থেকে আসা পুরনো কাপড় ফেলে দেয়ায় পরিবেশকে আরও অবনতিশীল করছে। ত্রাণ সহায়তা কাজে নিয়োজিত কর্মীরা জানিয়েছেন, রোহিঙ্গারা পুরনো কাপড় গ্রহণ করে না। নতুন কাপড় ত্রাণ এবং অর্থ বিতরণ দেখলেই এরা হামলে পড়ে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট ॥ নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির তীব্র সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। রান্নাবান্না বা গোসলের পানির জন্য বিভিন্ন পয়েন্টে রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুদের লাইন পড়ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে দূষিত পানি ব্যবহার করছে। ফলে রোগব্যাধিরও প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। এবং তা বিস্তার লাভ করছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে যে চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আর রোহিঙ্গাদের মাঝে সচেতনতা না থাকায় রোগব্যাধি সৃষ্টি হচ্ছে সহজে। মূলত এরা সর্বহারা হয়ে মিয়ানমার থেকে এদেশে পালিয়ে এসেছে। এদের হারানোর আর কিছুই নেই। জীবন বাঁচার যুদ্ধই এদের কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। টেকনাফ ও উখিয়ায় লাখ লাখ নতুন রোহিঙ্গা ॥ মিয়ানমার থেকে গত ২৫ আগস্ট রাতের পর থেকে সোমবার পর্যন্ত লাখ লাখ রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এদের রয়েছে বাসস্থান সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, স্বাভাবিক জীবনযাপনের সঙ্কট। সরকার পক্ষে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়োগ করা হয়েছে। বিশেষ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিবন্ধন করতে রোহিঙ্গাদের খুব বেশি আগ্রহ নেই। এছাড়া সীমান্ত পেরিয়ে আসার পর এরা কক্সবাজার অঞ্চল ছাড়িয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও চলে যাচ্ছে। আবার চলে যাওয়ার পথে ধরাও পড়ছে। তবে সকলকে আটকে দেয়া অসম্ভব একটি বিষয়। বিশেষ করে চট্টগ্রামের সঙ্গে এদের চেহারাগত এবং ভাষাগতভাবে ব্যাপক মিলামিল থাকায় সহজে রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কঠিন। সরকারী পর্যায়ে উখিয়ায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। বিজিবির তত্ত্বাবধানে এ আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। এদেরকে স্থায়ীভাবে নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এনে রাখার আগেই অনেকে ইতোপূর্বে আসা রোহিঙ্গাদের ইঙ্গিতে সটকে পড়ছে। বিশেষ ইপিআই কর্মসূচী চালু ॥ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ ও নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমে আশ্রয় নেয়া বেশিরভাগ রোহিঙ্গা রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে। মৌসুমী বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রায় অধিকাংশ নারী ও শিশু অসুস্থ হচ্ছে। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চাহিদা অনুযায়ী সেবাদান তৎপরতা এখনও পুরোপুরিভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে চেষ্টা চলছে। রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য সরকারের স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে বিশেষ ইপিআই কর্মসূচী চালু করা হয়েছে। আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ কর্মসূচী চলবে। প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হবে। শিশুদের হাম, পোলিও, রুবেলা টিকা ও ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর কর্মসূচী প্রতিদিন জোরদার করা হচ্ছে। এদিকে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো সর্বত্র পানিবাহিত রোগ ডায়রিয়া, আমাশয়, নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব এত বেশি যে তা ক্রমশ ব্যাপকতা হচ্ছে। বিভিন্ন সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী মিয়ানমার থেকে আসা সাড়ে ৫ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে দুই লাখের বেশিই শিশু। এদের মধ্যে অনেক শিশু বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় তারা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া দুই লাখ রোহিঙ্গা শিশুর ঝুঁকিতে থাকার তথ্য ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছে।
×