ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচীতে ঘোষণা

আরাকান স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন চলবে

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আরাকান স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত হেফাজতের আন্দোলন চলবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজত নেতারা। সোমবার ঢাকায় মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচীতে তারা বলেছেন, স্বাধীন আরাকান রাজ্য গঠনের মাধ্যমেই কেবল রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধান সম্ভব। মিয়ানমার একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। তাদের দূতাবাস এ দেশে থাকার প্রয়োজন নেই দাবি করে হেফাজত নেতারা বলেছেন, রোহিঙ্গা হত্যা বন্ধ করতে না পারলে সরকার আমাদের অনুমতি দিক। আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদে যেতে প্রস্তুত আছি। কর্মসূচী থেকে মিয়ানমার দূতাবাস ও জাতিসংঘ অফিসে স্মারকলিপি দিয়েছে হেফাজত। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন, গণহত্যা বন্ধসহ ও তাদেরকে নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নেয়ার দাবিতে আগেই ঘেরাও কর্মসূচী ঘোষণা করেছিল সংগঠনটি। দুপুর ১২টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সামনে থেকে হেফাজতের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মিছিল করে গুলশানে মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাওয়ের উদ্দেশে রওনা হন। মিছিলটি শান্তিনগর মোড়ে পৌঁছলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। পুলিশের বাধার মুখে সংগঠনের নেতারা শান্তিনগর মোড়ে অবস্থান নেন। সেখানে ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক নুর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। পুলিশ সামনে যেতে না দেয়ায় সেখান থেকে সংগঠনের ১২ নেতা মিয়ানমার দূতাবাসে গিয়ে একটি স্মারকলিপি দিয়ে আসেন। স্মারকলিপিতে রাখাইন রাজ্যে গণহত্যা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের অবিলম্বে ফেরত নেয়ার দাবি জানানো হয়। এরপর ঢাকার জাতিসংঘের কার্যালয়ে গিয়ে আরেকটি স্মারকলিপি দেয় প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলে ঢাকা মহানগর হেফাজতের আমীর নূর হোসাইন কাসেমী ছাড়াও ছিলেন শাহ আতাউল্লাহ, জুনায়েদ আল-হাবীব, মাহফুজুল হক, আব্দুর রব ইউসূফী, মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী, হাকীম আব্দুল করীম, আজীজুল হক ইসলামাবাদী, ফজলুল করীম কাসেমী, নাজমুল হাসান, মুনীর হোসাইন কাসেমী ও মুফতী জাকির হোসাইন কাসেমী। এর আগে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ঢাকা মহানগর আমীর নূর হোছাইন কাসেমী বলেন, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে নিরীহ রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর যে নির্মম গণহত্যা চলছে, তা ইতিহাসের সব বর্বরতাকে হার মানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ধিক্কারের পরেও মিয়ানমারের সামরিক জান্তা তাদের নিষ্ঠুরতা বন্ধ করেনি। তাই রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সরকারকে কূটনৈতিকভাবে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। কূটনৈতিক পথে সফলতা না এলে আরাকানকে স্বাধীন করার জন্য সামরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে দেশের মানুষ সরকারের পাশে থাকবে। হেফাজত সংগ্রাম চালিয়ে যাবে ঘোষণা দিয়ে এ হেফাজত নেতা বলেন, আরাকান স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলবে। প্রয়োজনে মিয়ানমার অভিমুখে লংমার্চ কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। রোহিঙ্গারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। রোহিঙ্গাদের অধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক জোর তৎপরতা চালাতে হবে। এ সঙ্কট সমাধানের একমাত্র পথ আরাকানের স্বাধীনতা। হেফাজত নেতা আরও বলেন, মিয়ানমার একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র তাদের দূতাবাস এ দেশে থাকার কোন প্রয়োজন নেই। মিয়ানমার শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান না করলে বাংলাদেশ সরকারকে সামরিক অভিযান চালিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে হবে। শাহ আতাউল্লাহ বলেন, রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্মম গণহত্যা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। মাহফুজুল হক বলেন, সরকারকে এই গণহত্যার প্রতিবাদে বন্ধ করে দিতে হবে মিয়ানমার দূতাবাস। মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের সাহায্যে বাংলাদেশী মুসলমানদের আনসারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হবে এবং সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, খাদ্য, ওষুধ, পানিসহ যাবতীয় বিষয়ে কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে। আজীজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এ যাবত একাধিকবার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছে। সরকার এ বিষয়ে তেমন কোন পদক্ষেপ না নিয়ে নতজানু পররাষ্ট্র নীতি প্রদর্শন করেছে। মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, সন্ত্রাসী বাবার সন্ত্রাসী মেয়েই হচ্ছেন আউং সান সুচি, তার বাবাও রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ত নিয়ে হোলি খেলা খেলে গেছেন। আউং সান সুচির এই হোলি খেলা বন্ধ না হলে আরাকান স্বাধীন করতে এদেশের মুসলমানরা মিয়ানমার যেতে প্রস্তুত রয়েছে। আব্দুর রব ইউসূফী বলেন, মিয়ানমারের রোহিঙ্গা গণহত্যা বন্ধ করতে না পারলে সরকার আমাদের অনুমতি দিক। আমরা এদেশের গণমানুষ দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে আরাকান স্বাধীন করতে জিহাদে যেতে প্রস্তুত আছি। মুজিবুর রহমান পেশোয়ারী প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি রাশিয়া, চীন ও ভারতকে ভয় করবেন না। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এদেশের জনগণ আপনার সঙ্গে আছে। জোনায়েদ আল হাবিব কর্মসূচীতে বাধা দেয়ার অভিযোগ তুলে বলেন, নিরাপত্তার অজুহাতে আমাদের শান্তিপ্রিয় বিক্ষোভ মিছিলটি পুলিশ আটকে দিয়েছে। তবে আমরা থেমে থাকব না। সমস্যা সমাধান করতে হলে আরাকান স্বাধীন করতে হবে। আর এর জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। ইসলামী ফ্রন্টের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ঢাকা মহানগেরর উদ্যোগে ‘রোহিঙ্গা মুসলিমের উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ, নির্বিচারে হামলা, ধর্ষণের’ প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবদুল হাকিমের সঞ্চালনায় কর্মসূচীতে প্রধান অতিথি ছিলেন ইসলামী ফ্রন্টের সাংগঠনিক সচিব আ ন ম মাসউদ হুসাইন আলকাদেরী। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ঘর-বাড়িতে আগুন, নারী, শিশু ধর্ষণসহ যেভাবে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে তা দেরিতে হলেও বিশ্ব বিবেককে নাড়া দিয়েছে। রোহিঙ্গাদেরকে নিজ ভূমি থেকে বিতাড়িত করে অন্য দেশে পুশইনে বাধ্য করা আন্তর্জাতিক আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন দাবি করে তিনি হত্যাকা-ের ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার জন্য বাংলাদেশকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। মানববন্ধন শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে দৈনিক বাংলা মোড়ে এসে শেষ হয়। কর্মসূচীতে আরও ছিলেন এ্যাডভোকেট হেলাল উদ্দীন, সোলাইমান খান রব্বানী, আবু নাসের মুহাম্মদ মুসা, ইঞ্জিনিয়ার শামসুর রহমান কাজল, বদরুল আলম কাদেরী, শাহেদুল আলম চৌধুরী, আবদুল হাই, ইমরান হুসাইন তুষার, আব্বাস উদ্দীন, কাওসার আহমদ রুবেল, মুহাম্মদ শাহজালাল, আনোয়ার হোসেন, মুজাহিদুল ইসলাম
×