ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

অস্থির ভোগ্যপণ্যের বাজার

চট্টগ্রামে ক্রমশ অস্থির হয়ে উঠছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। এ অঞ্চলে এবারে প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ী ঢল, পাহাড়ী ধস সর্বোপরি প্রায় নিত্য জোয়ার-ভাটাসহ তীব্র জলাবদ্ধতা ছিল বেশ কিছুদিন। যোগাযোগ ব্যবস্থাও হয়েছে বিপর্যস্ত, যা এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক হয়ে উঠেনি সর্বত্র। বিরূপ আবহাওয়া ও জাহাজজটে আমদানিকৃত মালামালও খালাস করা যায়নি সময়মতো। দেশের বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জেও প্রায় জলমগ্ন হয়েছিল কিছুদিন। কিছু পণ্য পানি ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্টও হয়েছে। ফলে নিত্য ভোগ্যপণ্যের বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজমান ছিল। অবশ্য এ অবস্থা শুধু চট্টগ্রামেই নয়, দেশের দক্ষিণ-উত্তরাঞ্চলসহ সংক্রমিত হয়েছে রাজধানীতেও। বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয় জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন দেশ থেকে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, চিনি, লবণ ইত্যাদি আমদানি করে বাজার স্বাভাবিক রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সার্বিক পরিস্থিতি রয়েছে নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলো, বর্তমান অবস্থায় রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যা সেখানে সৃষ্টি করেছে বাড়তি চাপ। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আরাকান রেভিলিউশন্যারি আর্মির হঠকারিতায় সেদেশের সেনাবাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর রোহিঙ্গা উৎখাত কর্মসূচী শুরু হলে ২৫ আগস্ট থেকে দলে দলে তারা ঢুকতে থাকে বাংলাদেশের টেকনাফ, শাহপরী দ্বীপ, কক্সবাজার, উখিয়া ও অন্যত্র। নিষ্ঠুর ও হিংস্র মিয়ানমার সেনাবাহিনী একরকম পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করায় নিতান্ত বাধ্য হয়েই উন্মূল উদ্বাস্তু রোহিঙ্গারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশে। সরকারকে মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় ও সহায়তা দিতে হচ্ছে তাদের। এ পর্যন্ত ঠিকই আছে। তবে বাস্তবতা হলো, হঠাৎ করে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয়-বাসস্থানসহ খাদ্য সংস্থান করতে গেলে তার এক অনিবার্য বাড়তি চাপ পাইকারি ও খুচরা বাজারে পড়তে বাধ্য। পড়ছেও। এত বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর খাদ্য সংস্থান করতে গিয়ে অনিবার্যভাবে বেড়ে গেছে চাল, আটা, চিনি, চা, ভোজ্যতেল, গুঁড়াদুধ, লবণ, শিশুখাদ্য, আলু-পেঁয়াজ, চাল ও অন্যান্য পণ্যের দাম। এর পাশাপাশি অন্যবিধ উপকরণের দামও বাড়ছে ক্রমশ। সত্য বটে, ইতোমধ্যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে ত্রাণসামগ্রী এসে পৌঁছেছে এবং প্রতিশ্রুতিও পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোর মধ্যে প্রধানত রয়েছে শুকনা খাবার, বিস্কুট, খেজুর, পানি, তাঁবু, ওষুধ ইত্যাদি। বাস্তবে রোহিঙ্গারা প্রায় বাঙালীদের মতোই ভাত-মাছসহ দৈনন্দিন জীবনযাপনে অভ্যস্ত। ফলে তাদের সিংহভাগ চাহিদা অন্তত পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকেই। বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ভরণপোষণের নিমিত্ত মাত্রাতিরিক্ত চাপ স্থানীয় বাজারে পড়বেই। বাংলাদেশ নিতান্ত মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের সাময়িক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। জরুরী পরিস্থিতি সামাল দিতে সমর্থও হচ্ছে। বন্দর ও বাণিজ্যনগরী চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেই রয়েছে বৃহত্তম পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাজার। চট্টগ্রাম বন্দরেও রয়েছে একাধিক খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যবাহী জাহাজ। সুতরাং চাপ থাকলেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হবে নিশ্চয়ই। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দিতে বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি সঙ্কটের কারণ তুলে ধরে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেয়ার আহ্বান জানাবেন বিশ্ব নেতাদের রোহিঙ্গাদের সেদেশে ফেরত নিতে। কিছু সময় লাগলেও রোহিঙ্গাদের সে দেশে ফিরে যেতে হবেই। ততদিন পর্যন্ত নিতান্ত মানবিক কারণে এই বাড়তি চাপ মেনে নেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে বাংলাদেশকে।
×