ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

এসডিজি, আমাদের সমস্যা এবং রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৩:০৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

এসডিজি, আমাদের সমস্যা এবং রোহিঙ্গা

উন্নত পাশ্চাত্য দেশ থেকে এক এক সময় এক এক উন্নয়ন সূত্র এসে পৌঁছায়। অবশ্য সব উন্নয়ন সূত্র বা কৌশলের সবই যে আমাদের দেশের জন্য মন্দ তা নয়, তবে অন্তত এখন এই একবিংশ শতকে আমাদের দেশের উন্নয়নের সব ক্ষেত্রেই বিশেষজ্ঞ গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে অথবা উঠবার কথা যারা স্বদেশের কৃষি, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবহন, রাজপথ, সেতু, নগর, বিল্ডিং ও বৃক্ষসহ পরিবেশ পরিকল্পনা, সবকিছুতে নিজস্ব দেশীয় কৌশলের সঙ্গে উন্নত আধুনিক কৌশলের সমন্বয় ঘটিয়ে উন্নয়ন কাজের নির্দেশনা দেবে, নীতি কৌশল প্রণয়ন করবে- এটাই কাক্সিক্ষত। এ কারণে আমার ব্যক্তিগত মতো হচ্ছে- এ দেশটি নদীবাহিত পাহাড় থেকে বয়ে আনা পলিমাটি দিয়ে কয়েক হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে গড়ে উঠেছে। কিন্তু দেশটি হচ্ছে সমভূমি এবং সমুদ্রে মিলিত হওয়া নদীগুলোর মোহনায় অবস্থিত। সে কারণে এ দেশের সঙ্গীতেই আছে, এ নদীগুলো একবার এ কূল ভাঙ্গে, আবার ওকূল গড়ে, এই দুই পাড় শত শত বছরে কতবার যে ভাঙ্গে আর কতবার যে গড়ে, সঙ্গে সঙ্গে ভাঙ্গে শত শত বসত, মানুষের বাড়ি, শস্যক্ষেত, বন, মাঠ এবং বার বার জন্ম নেয় নদীভাঙ্গা জনমানুষ। আবার যখন ও কূলে চর জেগে ওঠে, তখন নদী ভাঙ্গা বসত জমিহারা মানুষ সে চরে বসতি গড়তে যায়, সবাই ভূমি গ্রাসীদের লাঠিয়াল, গুন্ডাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না, তখন বড় শহরে শ্রমজীবী বস্তিবাসী হতে হয় তাদের। অনেককে ভিখারীও হতে হয়। এই পরিবেশগত পরিপ্রেক্ষিতটি সমুদ্র উপকূলের ব-দ্বীপগুলোর প্রকৃত বাস্তবতা। এরই মধ্যে জলবায়ুর বৈশি^ক উষ্ণায়নের পরিণতি- সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, সে সঙ্গে ঝড়, সাইক্লোন, দুর্যোগ, বন্যা, অতিবৃষ্টি, ঢল- ইত্যাদির মাত্রা বৃদ্ধির কবলে পড়েছে আমাদের দেশ। তাই, নতুন করে ভাবতে হচ্ছে- বৈশি^ক উন্নয়ন ফর্মূলা- সাসটেইনেবল ডেভেলাপমেন্ট গোল (এসডিজি) কিভাবে আমাদের এই নিত্য পরিবর্তনশীল ভূগোলবিশিষ্ট দেশে বাস্তবায়ন করা সম্ভব? কতগুলো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- ১. সমুদ্র মোহনায় সমুদ্রপৃষ্ঠ উচ্চ হবার ফলে সৃষ্ট ঝড়, ঝাঞ্চা, দুর্যোগে, উচ্চ মাপের জোয়ার ও ঢেউয়ের আঘাতের মধ্যে কি বর্তমান সুন্দরবন বেঁচে থাকবে? ২. পদ্মা, যমুনা, ধলেশ^রী, যে নদীগুলো বার বার এপাড়, ওপাড় ভাঙ্গে, তাদের ওপরে বহু অর্থে তৈরি হওয়া ব্রিজ, সেতুগুলোকে কি রক্ষা করা সম্ভব হবে? আগামী ৫০/৬০ বছর পর বড় নদীগুলো হিমালয় পর্বতের বরফ-হিমবাহ গলন পর্যায়ের অন্তিম অবস্থায় পৌঁছালে তখন কি অবস্থায় সেতু ব্রিজগুলো থাকবে? জল শুকিয়ে পার হয়ে যায় গরু, পার হয় গাড়ি, এমন অবস্থা যদি হয়, তখন বিশুদ্ধ জলের যে তীব্র অভাব হবে, তা পূরণের পরিকল্পনাই কি স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের জন্য দরকার হবে না? আমার বিশ্বাস, এসডিজি বা উন্নয়নের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার উপকূলবর্তী দেশগুলো, বাংলাদেশের জন্য প্রধান প্রধান নদীর উৎসগুলো যে দেশগুলোতে রয়েছে, ভারত, নেপাল, ভুটান-এর সঙ্গে, প্রয়োজনে চীনের সঙ্গে একটি যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা ও নদীর জলের বণ্টন, ভাগাভাগির জন্য একটি যুক্তিপূর্ণ চুক্তি প্রণয়ন অত্যন্ত জরুরী। এটিকে সরকার এসডিজি বা টেকসই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হিসেবে গণ্য করে বিশ্ব নেতৃত্বের কাছে উপকূলবর্তী, নদীনির্ভর দেশগুলোর জন্য ভিন্ন সূচক যুক্ত করে দেশোপযোগী এসডিজি উপস্থাপন করলে তা হবে যথার্থ টেকসই উন্নয়নের প্রথম লক্ষ্য পূরণের দলিল। ৩. সাসটেইনেবল উন্নয়নের জন্য শুধুমাত্র সরকারকে করণীয় দায়িত্বের সম্পূর্ণ ভার দেওয়া সঠিক পন্থা নয়। বরং এতে অন্য রাজনৈতিক দল, তাদের রাজনৈতিক এজেন্ডা, কার্যক্রম, বেসরকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের দেশের সামাজিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অংশীদার হবার দায়িত্ব দিতে হবে। সাসটেইনেবল উন্নয়ন আর যাই হোক, শাপলা চত্বরে অবস্থান করে জনগণের সম্পদ ধ্বংস, সরকার বিরোধী আন্দোলনের নামে পেট্রোল বোমা মেরে নিরীহ বাস-ট্রাক চালক, যাত্রী হত্যা, যানবাহন পুড়িয়ে ধ্বংস করা, ট্রেন লাইনচ্যুত করে যাত্রী হত্যা, সর্বোপরি জঙ্গীতোষণ, জঙ্গীদের অর্থ, অস্ত্র, প্রশিক্ষণের সুযোগ দিয়ে জঙ্গীদের দ্বারা দেশী-বিদেশী হত্যা করে চরম বর্বরতা সংঘটনের দায় ঐসব অপরাজনীতিকদের ওপর ফেলে তাদের স্বদেশ-স্বজাতি বিরোধী কার্যক্রমের জন্য গণতন্ত্র হত্যাকারী অপরাজনীতি চর্চার জন্য, এর শাস্তি- ‘নিষিদ্ধ ব্যক্তি’, ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি’ হিসেবে গণ্য করার রীতি চালু করার প্রয়োজন রয়েছে। একই সঙ্গে তাদের নাগরিক অধিকারে কতগুলো সীমাবদ্ধতা আরোপ করার ব্যবস্থা থাকা দরকার। এটা তো বলা বাহুল্য, টেকসই উন্নয়ন ও জঙ্গীবাদী কার্যক্রম পরস্পরবিরোধী। সহিংসতা, নাশকতা করাই হয় সরকার এবং জাতির উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে যা একই সঙ্গে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে। সুতরাং তাদেরকে বিশ্ব পরিকল্পনায়ও দন্ডিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে- নতুবা এই অপরাজনীতির ব্যাধি, সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদের উৎস যতদিন বন্ধ হবে না ততদিন দেশে দেশে টেকসই উন্নয়ন, শান্তি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হওয়া কঠিন। এ সমস্যা বি্শ্বজনীন, সব দেশকেই সন্ত্রাসবাদ, নাশকতার অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, বিশেষ করে সহিংসতা ও জঙ্গী প্রশ্রয়দাতাদের ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণা করার ব্যবস্থা রাখতে হবে, তবেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। ৪. জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বাংলাদেশের মতো ছোট আয়তনের নদী, হাওড়, নদীর ঢল, বন্যার দেশে একবার খাদ্যশস্য বিনষ্ট হলে খাদ্যাভাব যে পূরণ যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে, তা এবারের বন্যা, ঢল, অতিবৃষ্টি, হাওড়ের বাঁধ ভাঙ্গার পর ভালভাবে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। চোখে পড়ছে বড় সমস্যা এত মানুষকে এতটুকু ভূমি কিভাবে খাদ্য দিয়ে বাঁচিয়ে রাখবে? ২০০৯ থেকে শুরু হওয়া কৃষি বিপ্লব বছর বছর যে আশ্চর্যজনক, উচ্চহারে ধান, গম, ডাল, আলু ও নানারকম নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি, ফল, এমনকি বিদেশী ফল চাষেও সফলতা লাভ করেছে, তাতে আমরা ভুলেই ছিলাম যে একবার বন্যা, পাহাড়ী ঢল, অসময়ে অতিবৃষ্টি আমাদের কত লাখ টন খাদ্য ঘাটতি তৈরি করতে পারে! ষোলো কোটি জনমানুষকে তিন বেলা খাওয়াতে পারা অতি আশ্চর্য ক্ষমতা ও উদ্ভাবনী শক্তির মালিক আমাদের কৃষক ও কৃষিবিজ্ঞানীরা প্রকৃতপক্ষে মার খেল পানি উন্নয়নের পানির ঢল রোধকারী ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তাদের, ঠিকাদারদের চরম উদাসীনতার কাছে! দুঃখ হয় আমাদের সর্বস্বহারা কৃষক পরিবারকে ত্রাণের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, যারা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য জোগায়! ইচ্ছা করে নূরুল দীনের মতো ডাক দেই, ‘জাগো বাহে, কুণ্ঠে সবায়, উঠো, তোমাক শত্রুকে শ্যাষ করি দ্যাও’ ভাঙ্গা চোরা রাস্তার হাল দেখেও, ঐ ঠিকাদাররা, তাদের দোসররা তো নূরলদীন নয়, আমাদের সবার, জাতির, সরকারের শত্রু, ওদের বিচার কবে হবে? শুধু সারাজীবন টাকার বস্তার ওপরই কি ওরা বসে থাকবে? এ কেমন বিচার? কেউ কেউ কংক্রিটের রাস্তার কথা বলেছেন, আমার ধারণা অত অর্থব্যয় না করে পৃথিবীর সব দেশের মতো এ্যাশফল্টের রাস্তা সঠিক পরিমাপ মেনে তৈরি করা গেলে তা বন্যার পানিতে ধুয়ে সাফ হয়ে যাওয়ার কথা নয়। তাছাড়া ৫ টনি ট্রাককে ৫ টনই বহন করতে হবে, বেশি নয়। পরিবহন ব্যবসায়ীরা অনৈতিক ব্যবসার ফল ভোগ করবেন, ক্ষতির দায় নেবেন না, তা হবে না। ছোটবেলায় দেখতাম রাস্তায় গনগনে চুল্লিতে আলকাতরা জ¦ল হচ্ছে, রাস্তায় পিচ চালা হচ্ছে, পরদিন সুন্দর কালো রাস্তা দেখতে পেতাম এখন এ দৃশ্য দেখি না কেন? মন্ত্রী সাহেব, রাজধানী এমন করুন ভাঙ্গাচোরা রাস্তা এসডিজি বা উন্নয়নের সূচকে পর্বত প্রমাণ বাধা নয় কি? ৫. নিরবিঘ্ন পরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নের একটি বড় শর্ত ও সূচক? দুঃখের বিষয় মেয়র আনিসুল হক হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, কিন্তু তাঁর উদ্যোগে রাজধানীর সব বাস মালিককে ছয়টি প্রধান রুটভিত্তিক ছয় রঙের বাসের মালিকানায় অংশীদার করে নতুন ছয়শ’ বাস যুক্ত করে নাগরিকদের যাতায়াত ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খল ও সহজ করবার কাজটি তাঁর অনুপস্থিতিতে দক্ষিণের মেয়র ও উত্তরের করপোরেশনের কর্মকর্তারা মিলে বাস্তবায়ন করছেন না কেন- ভেবে অবাক হচ্ছি। ড্রেনেজ, স্যুয়ারেজ, খাল উদ্ধার, রাজপথ ও সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা করে নিজেদের সফল করতে ইচ্ছা করে না কেন? এভাবে পৃথিবীর কোন দেশে একজন ব্যক্তির অনুপস্থিতিতে সব কাজ বন্ধ করে দিতে দেখা যায় কি? এটি খুবই লজ্জাজনক। টেকসই উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে- মানসম্পন্ন রাজপথ এবং পরিবহন ব্যবস্থা। এর সঙ্গে অবশ্যই যুক্ত আছে ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির ব্যবহার। অবশ্যই উন্নত, উন্নয়নশীল সব রকম দেশের জন্য এটি প্রয়োজনীয় শর্ত যে ব্যবস্থা আফ্রিকার অনুন্নত, উন্নয়নশীল সব দেশেই চালু আছে, এশিয়ার দেশগুলোতে তো চালু আছেই। তা হলে আমরা কেন তা অনুস্মরণ করছি না? আমাদের এ তথ্য জানা আছে যে ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের অনিচ্ছা বাংলাদেশের রাজধানীর ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থার উন্নতি না হওয়া এবং এ প্রাচীন ব্যবস্থা চালু থাকার প্রধান কারণ! বেতন ডবল হলেও ওরা রাজপথে চাঁদাবাজির সুযোগ বন্ধ করতে অনিচ্ছুক! তেমনি রাজপথে সঠিক ত্র্যাশফল্ট, আলকাতরা ইত্যাদি দিলে নাকি ঐ মন্ত্রণালয়ের প্রকৌশলীদের ভয়ানক অসুবিধা হবে, কেননা বারবার রাস্তা না ভাঙ্গলে বার বার ঠিকাদার নিয়োগ, টেন্ডারে অনেক আয়ের এই লোভ সংবরণ তাদের জন্য অসম্ভব। ওদেরও বেতন ডবল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীকে বলতে চাই, এই ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বাদ দিয়ে উন্নত দেশ ও রাজধানীর তালিকায় কি প্রবেশ করা যায় কখনো? ট্রাফিক সিগন্যাল, রাজপথ ও সুষ্ঠু পরিবহন ব্যবস্থা আগামী যথাক্রমে দু’সপ্তাহে, ছয়মাসে ও আট মাসের মধ্যে দেখতে চাই। এ জন্য যা করার করেন। বদলি করুন, বরখাস্ত করুন, দুদকে সোপর্দ করুন, মামলায় যাবজ্জীবন হোক, আমরা খুশী হব, হাততালি দেব। শুধু নিরক্ষর, অল্পশিক্ষিত চোর-ডাকাতরা শাস্তি পাবে কেন? উচ্চ শিক্ষিত চোর ডাকাতরা শাস্তি পাবে না কেন? তফাৎ কি, একজন ছোট চোর, আরেকজন বড় চোর, এই তো। প্রধানমন্ত্রী দিল্লী, টোকিও, পিকিং, হ্যানয়, নমপেন, ব্যাঙ্কক দেখেছেন। ওদের রাজধানীরগুলোর সঙ্গে ঢাকা শহরের মানের কোন তুলনা হয় কি? উন্নয়নশীল দেশের বা উন্নত দেশের রাজধানী হিসেবে এই দুর্দশাগ্রস্ত, ড্রেনের পানিতে ডোবা ভাঙ্গাচোরা রাজপথ, সিগন্যাল বাতি হীন যান চলাচল, অনিয়ন্ত্রিত, অপ্রশিক্ষিত খুনী চালক দ্বারা চালিত পরিবহন, মফস্বলে ভাঙ্গা সেতু, ব্রিজ, কালভার্ট নিয়ে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি সাধন হতে পারে না। বিগত দশ বছরেও যখন এসবের উন্নতি হয়নি, তখন বিদেশী, জাপানী বা ভারতীয় কোম্পানিকে দিয়ে রাজপথ, ড্রেনেজ, সুয়ারেজের উন্নয়ন কাজ করুন এবং ইলেকট্রিক লাইন ও ক্যাবল ডিসের কুৎসিত তারের জটলাগুলো দয়া করে মাটির নিচে স্থানান্তর করুন। কাজটা শুরু করে বন্ধ করা হলো কি কারণে? নৌ পরিবহন মন্ত্রীকে বলব- যে চালক বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে মানুষ খুন করে তাদের শাস্তি বা দ- সাধারণ খুনীর মতই তো হবে? নাকি একদেশে খুনের শাস্তি দু’রকম হবে? প্রতিদিন রাজপথে জীবন্ত যাত্রীদের যম ঐ বাস-ট্রাক চালকরা। ওদেরকে কৃতকর্মের ফলভোগ করতে দিন। নৌপরিবহন অধিদফতরের অফিস ঢাকার কেন্দ্রে করবেন না প্লিজ। এই সুন্দর গাছগাছালিতে ভরা ফেয়ারলি হাউসকে কোন মন্ত্রণালয়ের অফিস করবেন না। নৌপরিবহন অফিস হবে নদীর কাছাকাছি কোন স্থানে। এখানে নয়। একমাত্র রেলপথে সফলতা দেখতে পাচ্ছি। রেলগাড়ির সংখ্যা, বগি, রুট এবং মানের সন্তোষজনক উন্নতি হয়েছে, রেলমন্ত্রীকে এ সাফল্যের জন্য ধন্যবাদ। ৬. বলতেই হয়, ডিজিটাল বাংলাদেশে এত দুর্নীতি হতে পারে না, ফাইলগুলোর ই-ফাইলিং দ্রুত করুন। ই-ফাইলিং ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত এবং ব্যাংকগুলোর ঋণগ্রস্ত ধনীদের ঋণের ওপর ঋণ দেওয়া ব্যাংকে রাখা আমাদের টাকাকে নিজেদের টাকা গণ্য করে তারা লুটেপুটে খাচ্ছে- এসব বড় বড় দুর্নীতির রাশ টেনে ধরতে না পারলে বিদেশীরা নয়, জনগণই বাংলাদেশকে উন্নত দেশ মনে করবে কিভাবে, কেন? এই পর্যন্ত লিখার পর বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীর ঢল কক্সবাজারে প্রবেশ করছে জানতে ও টিভিতে দেখতে পাচ্ছি। বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশে নির্বাচন আসছে, সৌদি আরব, পাকিস্তানে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা আছে, তাদের কোন কোন নেতা লাদেন হতে চাচ্ছে, এ দিকে সুচির ঘাড়ের ওপর আর্মির নিশ^াস, চীনারা বৌদ্ধ, ভারত হিন্দু-দু’জনার স্বার্থ জড়িত বর্মার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে অথচ রোহিঙ্গারা সুচিকে বিপুলভাবে ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে! ওদের আশা ছিল, সুচি ওদের নাগরিকত্ব দেবে, গণতন্ত্র ও শান্তি দেবে। কোফি আনান কমিশন বর্মা সরকারের উদ্যোগে গঠিত কমিশন প্রতিবেদনে তার সুপারিশে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবার কথা, অধিকার বঞ্চিত, নির্যাতিতরা যে ক্ষোভ ও ক্রোধ থেকে জঙ্গী হয়ে ওঠার সম্ভাবনার সাবধান বাণী উল্লেখ করেছেন। সুচি নিজেই নোবেল বক্তৃতায় জোর দিয়ে বলেছিলেন অসন্তোষ, ক্ষোভকে চাপা দিয়ে রাখলে তা ক্রোধে রূপ নিতে পারে। আপাতত ওদেরকে বন্যা কবলিত বাংলাদেশ আগ্রহী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যা- এবং দেশের একটি নির্দিষ্ট চরাঞ্চলে সাময়িক বসবাস করবার ব্যবস্থা করতে পারে। মনে রাখতে হবে- মাস দুয়েক আগে চীন বলেছিল বাংলাদেশের ডিপ সি পোর্ট সফল হবে না। দেখা যাচ্ছে, তারা এখন মিয়ানমারে ডিপ সি পোর্ট করতে চলেছে। এর ফলে আমাদের সিঙ্গাপুরের মতো একটি আন্তর্জাতিক বন্দর তৈরিতে তারা মত পাল্টেছে। সরকারের উচিত হবে- ডিপ সি পোর্ট তৈরিতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যা-স ইত্যাদি রাষ্ট্রকে অথবা কয়েকটি রাষ্ট্রকে যৌথভাবে এই ডিপ সি পোর্ট করবার কাজটি দেওয়া এবং কাজটি শুরু করা যা আমাদের লাখো তরুণকে জীবিকা প্রদান করবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে ইন্দিরা গান্ধীর মতো পাশ্চাত্য দেশে দেশে ঘুরে ঘুরে, জাতিসংঘে, চীন, ভারতে এদের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করুন- আপনি শান্তির নোবেল না পান, শান্তির দূত হয়ে উঠবেন- আমি নিশ্চিত। লেখক : শিক্ষাবিদ
×