ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহজাহান মিয়া

বার্মিজরা কত নৃশংস বর্বর!

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বার্মিজরা কত নৃশংস বর্বর!

গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর শুরু হওয়া সীমাহীন নিষ্ঠুর নির্যাতন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে নব উদ্যমে নতুন করে আরও ভয়ঙ্কররূপ নিয়ে হিংস্র হায়েনার মতো অসহায় রোহিঙ্গাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে। রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের পর এবার সীমানা সংলগ্ন এলাকাকে ‘আর্মি অপারেশন জোন’ ঘোষণা করা হয়েছে। পুরো রাখাইন রাজ্যে শুরু হয়েছে মাইকিং। বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) মাইকিংয়ের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলছে। খুব শক্ত ভাষায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলা হচ্ছে, ‘রোহিঙ্গারা এদেশ ছেড়ে চলে যাও। তোমরা বাঙালী, বাংলাদেশ তোমাদের দেশ।’ একটি দেশে শত শত বছর আগে থেকে বসবাস করা একটি জনগোষ্ঠীকে এভাবে নির্লজ্জভাবে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলা যে কতটা বর্বর নিষ্ঠুরতা এবং তার আসল উদ্দেশ্য যে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ বার্মা (বর্তমানে মিয়ানমার) ত্যাগে বাধ্য করা সে সম্পর্কে আর কিছু বলার থাকে না। সীমান্ত বরাবর স্থলমাইন বসানো ও গুলিবর্ষণসহ নানা ধরনের উস্কানিমূলক কর্মকা-ের পরও বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে কোনরূপ সংঘর্ষে জড়ায়নি। কূটনৈতিকভাবেই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলার প্রয়াস চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে অত্যন্ত আন্তরিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমারে সংঘটিত এ বর্বর ঘটনা নতুন কিছু নয়। বিগত ৩৯ বছরে বেশ কয়েকবার ব্যাপক আকারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ প্রত্যক্ষ করেছে এদেশের মানুষ। তবে শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৮ সালে সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমানের আমলে। সেটা নিয়েও মানুষের মধ্যে কিছু মুখরোচক কথাবার্তা চাউর ছিল। এর পরও মাঝে-মধ্যেই রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটতে থাকে। ১৯৯১ সালেও ব্যাপকভাবে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। গত বছরও মিয়ানমারে সেনা অভিযানের ফলে অর্ধ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এদেশে চলে আসে। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত আদিবাসী রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। পশ্চিম মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গারা ইসলাম ধর্মাবলম্বী। ওরা মিয়ানমারের আকিয়াব, রেথেডাং, বুথিডাং মংডু, কিয়ক্টাও, মাম্ব্রা ও পাত্তরকিল্লা এলাকায় বাস করে। এক সময় মিয়ানমারে প্রায় ১৫ লাখ রোহিঙ্গা বাস করত। ২০১২ সালেও এ সংখ্যা ছিল প্রায় ৮ লাখ। বিভিন্ন সময় নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। এর মধ্যে কয়েক দফায় পাঁচ লক্ষাধিক বাংলাদেশে আসে। কয়েক লক্ষ্য রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড, সৌদি আরব ও মালয়েশিয়াসহ আন্যান্য দেশে চলে যায়। রোহিঙ্গাদের কথ্য ভাষায় চট্টগ্রামের স্থানীয় উচ্চারণের প্রভাব রয়েছে। ওদের ভাষায় উর্দু, হিন্দী এবং আরবী শব্দও রয়েছে। ওরা আবার ‘মগ’ ও ‘রোহিঙ্গা’ নামে দুটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত। মগরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। দস্যুবৃত্তির জন্যই ওদের এমন নাম হয়েছে। ওদের দৌরাত্ম্য ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছেছিল। মুঘলরা তাদের তাড়া করে জঙ্গলে ফেরত পাঠিয়েছিল। বলা হয়ে থাকে, সপ্তম শতাব্দীতে বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাওয়া একটি জাহাজ থেকে বেঁচে গিয়ে উপকূলে আশ্রয় নিয়ে বলেছিল, ‘আল্লাহর রহমে বেঁচে গেছি।’ ধারণা করা হয় এই ‘রহম’ থেকেই এসেছে রোহিঙ্গা শব্দটি। যার সঙ্গে ‘রোহাং’ শব্দটি নিকট সম্পর্কযুক্ত। আরও বহু পরে আফগানিস্তানের ‘রোহা’ সম্প্রদায়ের কিছু লোক ওই এলাকায় বসতি স্থাপন করেছিল। ইতিহাসের পাঠ থেকেই সুস্পষ্টভাবে জানা যায় মুঘল সম্রাট শাহ সুজা তার আত্মীয়স্বজন ও দলবল নিয়ে তৎকালীন আরাকান রাজ্যে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সুতরাং এটা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত যে তৎকালীন বার্মা বা আজকের মিয়ানমারে মুসলমানদের উপস্থিতি ও বসবাস কমপক্ষে ১২ শ’ বছর। প্রাচীন আরাকান রাজ্যের নাম ছিল ‘ম্রোহং’ (প্রাচী শহর), বৌদ্ধ-মুসলমান নির্বিশেষে যার অধিবাসীরা বছরের পর বছর ধরে রোহিঙ্গা নামে পরিচিতি লাভ করেছে। ১৪৩০ থেকে ১৪৩৪ সাল পর্যন্ত ম্রক-ইউ রাজ্যের সম্রাট নারামেখলার শাসনকালে তিনি কৌশলগত কারণে সেলিম শাহ নাম ধারণ করে গৌড়রাজ্যের কাছ থেকে দু’বারে প্রায় ৫০ হাজার মুসলিম সৈন্যের সাহায্য গ্রহণ করে আরাকান রাজ্য পুনরুদ্ধার করে। তখন থেকে মুসলিম সৈন্যদের অধিকাংশই সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। আর ওই সময় থেকেই আরাকান রাজ্যে মুসলমান-বৌদ্ধ-রাখাইন নির্বিশেষে সবাই শান্তিতে বসবাস করতে থাকে। ১৫ শতক থেকে বর্তমান ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ শত বছরের অধিক সময় ধরে মুসলিম রোহিঙ্গারা আরাকান রাজ্যে বাস করছে। তাই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি অনুযায়ীও রোহিঙ্গা মুসলমানরা আদিবাসী জনগোষ্ঠী বলে স্বীকৃতি পেয়ে যায়। অথচ, ১৯৬২ সালে মিয়ানমারের তৎকালীন সামরিক জান্তা আইন করে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার খর্ব করে। রাখাইনরা হয়ে যায় সে দেশের শাসকদের আপন এবং রোহিঙ্গারা একদম পর। আসলে ঘর নেই, বাড়ি নেই, পরিচয় নেই, নাগরিকত্ব নেই... সবকিছু থেকেও যাদের কিছুই নেই তারাই হচ্ছে রোহিঙ্গা। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, ১৪৩০ থেকে ১৭৮৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২২ হাজার বর্গমাইল এলাকার রোহিঙ্গা স্বাধীন রাজ্য ছিল। মিয়ানমারের রাজা বোদাওয়াফা এ রাজ্য দখল করার পর বৌদ্ধ আধিপত্য শুরু হয়। ব্রিটিশরাও দখল করেছিল এ ভূখ-টি। তারা রোহিঙ্গাদের নাম বাদ রেখেই মিয়ানমারের ১৩৯টি জাতিগোষ্ঠীর তালিকা প্রস্তুত করেছিল। অনেকে মনে করেন, ধূর্ত ব্রিটিশরা ইচ্ছে করেই এ কাজটি করেছিল। ১৭৮৫ সালে বার্মিজরা আরাকান দখল করে। পরে ১৭৯৯ সালে ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষ বার্মিজদের হাতে গ্রেফতার এড়াতে এবং আশ্রয়ের জন্য আরাকান থেকে নিকটবর্তী চট্টগ্রামে চলে আসে। বার্মার বর্বর শাসকরা তখন আরাকানের হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করে এবং অনেককে আরাকান থেকে বিতাড়িত করে মধ্য বার্মায় পাঠায়। ব্রিটিশরা যখন আরাকান দখল করে তখন এলাকটি ছিল একটি মৃত্যুপুরী। দুজন ব্রিটিশ লেখক ফ্রাঞ্চিজ বুচানন ও হ্যামিলটন ‘বার্মা সাম্রাজ্য’ শিরোনামে ১৭৯৯ সালে প্রকাশিত তাদের একটি লেখায় বলেছিলেন, মুসলমানরা যারা অনেকদিন ধরে আরাকানে বসবাস করেছে তারা নিজেদের আরাকানের অধিবাসী ‘রুইঙ্গা’ বলে মনে করত। তখনকার ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলাকে আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিল। আসলে আরাকান ও বাংলার মাঝে তখন কোন আন্তর্জাতিক সীমারেখা ছিল না। এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে যাওয়ার ব্যাপারে তেমন কোন বিধিনিষেধও ছিল না। তাই ১৯ শতকে হাজার হাজার রাখাইন আরাকান থেকে বাংলায় চলে এসেছিল। ১৯৩৯ সালে রোহিঙ্গা মুসলমান ও রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে দীর্ঘ শত্রুতার অবসানকল্পে ব্রিটিশ প্রশাসন জেমস ইস্টার এবং তিন তুতের দ্বারা একটি বিশেষ অনুসন্ধান কমিশন গঠন করে। কমিশন অনুসন্ধান শেষে সীমান্ত বন্ধ করার সুপারিশ করে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটিশরা আরাকান ছাড়তে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানীরা ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনস্থ বার্মা আক্রমণ করে। ব্রিটিশরা পরাজিত হয়ে বার্মা ছাড়ে। ফলে ব্যাপক সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে বৌদ্ধ রাখাইন ও মুসলিম রোহিঙ্গাদের মধ্যে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল উল্লেখযোগ্য। রোহিঙ্গারা যুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষকে সমর্থন করেছিল এবং জাপানী শক্তির বিরেধিতা করেছিল। জাপানীরা রোহিঙ্গাদের হত্যা করেছিল। ওই সময় বাইশ হাজার রোহিঙ্গা বাংলায় চলে এসছিল। জাপানী ও বার্মিজদের দ্বারা বার বার গণহত্যার শিকার হয়ে প্রায় চল্লিশ হাজার রোহিঙ্গা স্থায়ীভাবে চট্টগ্রামে চলে আসে। আরাকানে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য রোহিঙ্গারা ১৯৪৭ সালে মুজাহিদ পার্টি গঠন করে। মুজাহিদ পার্টি লক্ষ্য অর্জনে পরবর্তী প্রায় ১৫ বছর বেশ সক্রিয় ছিল। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি মিয়ানমার স্বাধীনতা অর্জন করে। সে সময়ে পর্লামেন্টে রোহিঙ্গাদেরও প্রতিনিধিত্ব ছিল। কিন্তু ১৯৬২ সালে জেনারেল নে উইন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করলে তৎকালীন বার্মায় (বর্তমানে মিয়ানমার) সবকিছু ওলটপালট হয়ে যায়। নে উইন তাদের দমনের জন্য প্রায় বিশ বছর সামরিক অভিযান চালায়। তার মধ্যে ১৯৭৮ সালে পরিচালিত ‘কিং ড্রাগন অপারেশন’ ছিল উল্লেখযোগ্য। ফলে, ১৯৭৮ সালে প্রায় দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। ১৯৮২ সালে ২৮ মার্চ মিয়ানমারের মিনবিয়া এবং ম্রক-ইউ শহরে রাখাইন জাতীয়তাবাদী ও কারেনপন্থীরা প্রায় পাঁচ হাজার মুসলমান হত্যা করে। রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চলেও প্রায় বিশ হাজার মুসলমানকে হত্যা করা হয়। ১৯৯১-৯২ সালে নতুন করে দাঙ্গা হলে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। এছাড়া, নে উইনের ক্ষমতা দখলের পর নানা অত্যাচারে জর্জরিত রোহিঙ্গাদের জন্য শুরু হয় দুর্ভোগ্যের আরেক নতুন অধ্যায়। সামরিক শাসকরা ওদের বিদেশী হিসেবে চিহ্নিত করতে শুরু করে। ভোটাধিকার, ধর্মীয় ও বিয়ে করার অধিকারসহ সব নাগরিক অধিকার কেড়ে নেয়া হয়। সন্তান হলেও নিবন্ধন করার অধিকার থাকে না ওদের। রোহিঙ্গাদের সংখ্যা যাতে বৃদ্ধি না পায় সেজন্য আরোপ করা হয় একের পর এক বিধিনিষেধ। মিয়ানমার সরকার এবং তাদের পেটোয়া সামরিক বাহিনী যে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে তাতে বিশ্ব বিবেকও স্তম্ভিত। ইতোমধ্যে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছেন। তুরস্কের ফার্স্টলেডি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্র ঘুরে দেখে গেছেন। গত ৭ সেপ্টেম্বর শান্তিতে নোবেলজয়ী ডেসমন্ট টুটু রোহিঙ্গাদের চরম দুর্ভোগ-দুর্দশার জন্য শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী আউং সান সুচির ভুমিকার নিন্দা করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদবিরোধী এই ধর্মযাজক এক খোলা চিঠিতে সুচিকে রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ন্যায়ের পক্ষে কথা বলারও আহ্বান জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের সুরক্ষার জন্য সর্বকালের কনিষ্ঠতম শান্তিতে নোবেলবিজয়ী মালালা ইউসুফ জাইও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মিয়ানমার সফরকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদানের জন্য মিয়ানমারের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। মিয়ানমারের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ব প্রদানসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে প্রতিশ্রুতি প্রদান করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুই হয়নি। বিশ্ববিবেক রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সোচ্চার হলেও নোবেলজয়ী আউং সান সুচি এ ব্যাপারে একবারেই নির্বিকার। অথচ কারাবন্দী সুচিকে মুক্ত করতে মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে আন্দোলনের সময় রোহিঙ্গা মুসলমানরাও বেশ তৎপর ছিল। মিয়ানমারের ২০টি জেলায় বসবাসরত রোহিঙ্গারা প্রতিনিয়তই নির্যাতনের শিকার হয়েই চলেছে। তাই স্রেফ জীবন বাঁচানোর জন্য চরম ঝুঁকি নিয়ে ওরা দুর্গম সমুদ্রের অথৈ পানি পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর বাংলাদেশ তো ওদের পাশেই। চেহারা, শারীরিক গঠন ও কথাবার্তা বলার ধরন কক্সবাজার অঞ্চলের লোকজনের মতো হওয়ায় ওদের রোহিঙ্গা বলে শনাক্ত করাও মুশকিল। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে এদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ওরা সহজেই বিদেশে পাড়ি দিতে পারছে। বর্বর বার্মিজরা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব প্রদান দূরের কথা ওদের মানুষ বলেই মনে করছে না। মিয়ানমার সরকারকে দুর্ভাগা রোহিঙ্গাদের উচ্ছেদ এবং বঞ্চিত করার এই কুৎসিত মানসিকতা অবশ্যই বদলাতে হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোকে সেজন্য মিয়ানমারের বিপন্ন মানবতাকে রক্ষার্থে চাপ সৃষ্টি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন বন্ধ হয় এবং ওদের নাগরিকত্ব দিতে বাধ্য হয় মিয়ানমার সরকার। লেখক : জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক
×