ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবতার ডাকে অবিরাম ছুটে চলা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

মানবতার ডাকে অবিরাম ছুটে চলা

ওয়াজেদ হীরা ॥ ভ্রাদ্র মাস। যখন তখন বৃষ্টি হয়। এর আগে টানা বৃষ্টিতে উত্তর জনপদের মানুষের ভোগান্তি চরমে। হাটু থেকে কোমড় পানি কোথাও আরো বেশি হওয়ার কারণে বাড়ি ঘড় ছেড়ে উচু জায়গায়-মহাসড়কে অবস্থান নিলো উত্তর জনপদের মানুষ। এরা সংগ্রাম করেই বাঁচে। শীতের সাথে গরমের সাথে আর বৃষ্টির সাথেও। অভাবতো আছেই। তাইতো মেঘলা আকাশ দেখলেও এখন আর ভয় ধরে না উত্তরের মানুষের মনে। সংগ্রামী জীবনে কখনো কখনো বড় বেশি বিপর্যয় নেমে আসে। এবছরও আসলো। পানিতে ভাসলো গোটা উত্তরবঙ্গ, ভাসলো বাংলাদেশও। আর সংগ্রামী মানুষের চরম দুর্ভোগ গণমাধ্যম আর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল সারা বিশ্বেও। সারা দেশের নানা প্রান্ত থেকে এমনকি বিদেশ থেকেও মানবতার পাশে দাঁড়ানোর জন্য চেষ্টা আপ্রাণ। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোই তখন মানবতা। তাদের পাশে একটু সাহায্য, ত্রাণ নিয়ে যাওয়াই তখন অন্যতম দায়িত্ব। এই লেখা যখন লিখছি তখনও মানবতার ডাকে অসংখ্য মানুষ ছুটছে। আর এবারের মানবতা বন্যার্ত মানুষ নয় এরা রোহিঙ্গা। মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার থেকে একটু বাঁচার আশায় পালিয়ে এসেছে বাংলাদেশে। খাবার, পানি, বাসস্থান কতকিছুর অভাব এই রোহিঙ্গাদের। আর বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে আপামর সাধারণ মানুষও মানবতার ডাকে পাশে দাঁড়াচ্ছে। মানবিক বিপর্যয়ে সব সময়ই অগ্রভাগে থাকে তরুণ প্রজন্ম। এরাই আশা দেখায়, ছুটে যায় সবার আগে। তরুনরা নানভাবে অর্থ সংগ্রহ করে অভাবগ্রস্ত ক্ষতিগ্রস্থদের মাজে বিতরণের উদ্যোগ নেয়। তারা সফলও হয়। তারুণ্যের কাজে কেউ লুটেপুটে খেতে পারে না। তরুণ তথা বর্তমান সময়ের নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের সাথে সফর করেছিলাম বন্যার্ত এলাকায়। তরুণদের মধ্যে সবসময় একটা ভালো কিছু করার প্রত্যয় থাকে। আর যারা ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত হয় তাদের মধ্যে সেই প্রবণতা আরো একটু বেশিই মনে হয় আমার কাছে। বানভাসি মানুষের দুঃখ দেখতে তাদের পাশে একটু সহায়তার হাত বাড়াতে গত ২৪ আগস্ট বৃহস্পতিবার গিয়েছিলাম লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলায়। একটি দুটো মানুষ নয় সাধ্যমতো চেষ্টা ছিলো যতো বেশি মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়। সাধ্য অনুযায়ি আমরা ২১০০ পরিবারের পাশে একটু হলেও মানবিক দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। এই কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত প্রত্যেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে এই ভেবে, কিছুটা দায়িত্ব আমারও নিতে পারি। কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাটে আমরাও ভূমিকা রাখতে পারি। অসহায় আর বনার্ত মানুষের মুখের সেই হাসিতে হেসেছিল গোটা টিম। বলে রাখা ভালো, এই টিমের মোট সদস্য ছিল ৫০ জন। এরা বর্তমান সময়ের তরুন প্রজন্ম একই সাথে ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত। মুজিবের আর্দশের সৈনিক এরা। এরা ছাত্রলীগের নেতা ও কর্মী। শুধু ছাত্রলীগের দোষই খুঁজব, একটু গুণ দেখব না, তা একপেশে হয়ে যাবে। ভুল করলে শুধরাতে সমালোচনা করা যায়। তবে ভালো কিছু করলে তা প্রচার করে দেশের নানা প্রান্তে ছড়োনো অন্য সকল নেতা কর্মীদেরও উৎসাহ দিতে হবে। দেশের নানা প্রান্তে অসংখ্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাঁশের সাকো তৈরি করছে। নিজেদের জন্য নয় এটা সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য। ভাঙা রাস্তা মেরামত করে দিয়েছে। অনেক সামাজিক কাজও করছে যা অনেক সময়ই আড়ালে থেকে যায়। মুজিব আর্দশের সৈনিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গাজীপুর মহানগর শাখার ৫০ জন নেতাকর্মীর যাত্রা ছিলো উত্তরবঙ্গে। উদ্দেশ্যে ভানবাসি মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দলটির নেতৃত্ব দেন মহানগরের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম দ্বীপ। সবচেয়ে চরম সত্য এটাই এই দলে যারা ছিলো এবং যারা ২১০০ পরিবারকে সাহায্যের জন্য চেষ্টা করেছে সবাই নিজেদের টাকাই জমা করে একত্র করেছে। কারো কাছে সাহায্যের জন্য যেতে হয়নি। কয়েকজন নেতাকর্মী খোলা মনে বলেছে, এবারের ঈদের কেনাকাটা না করে সেই টাকাটা বনার্তদের দিয়ে দিয়েছি। যেখানে আর সপ্তাহ শেষে ঈদ। অথচ ঈদের কেনাকাটার চেয়েও বেশি খুশি সে টাকাটা বনার্তদের সাহায্যে দিতে পেরে। রাত প্রায় দশটা। গাজীপুর বোর্ড বাজার থেকে লালমানিরহাটের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু। ৫০ জনের এই বহরে সবার নাম নাইবা লিখলাম। তবে দু’একটি নাম না লিখলেই নয়। এর মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক মো. ফরহাদুজ্জামান মনির। সদা হাসৌজ্জল ব্যক্তি এই মনির। বাড়ি কুড়িগ্রাম হওয়ার সফরটা আরো সহজ হয়ে গেলো। মহানগরের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোক্তার হোসেন, দেওয়ান মনির। সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল আলম পলাশ (দাদা পলাশ)। সকলের দাদা ভাই। দাদা হওয়ার কাহিনীটাও বেশ মজার। সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী, আইন বিষয়ক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন শামিম, কর্মসুচি ও পরিকল্পনা বিয়ক সম্পাদক মুরাদ কবির আন্না, সমাজ সেবা সম্পাদক পারভেজ মোল্লা, কার্য নিবার্হী সদস্য শেখ মাসুদ রানা, পুবাইল থানা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক ফরিদ শিখদার অয়ন, কাশিমপুর থানা ছাত্রলীগ সাধারন সম্পাদক সোহেল রানা ও অন্যান্য নেতাকর্মীসহ তরুণের ঝাঁক সাথে সবার প্রিয় খোরশেদ কাকা। যানজট এড়াতে ভালুকা থেকে সখীপুর উপজেলা হয়ে টাঙ্গাইল পৌঁছালাম। সেখানে রাতের খাবারের যাত্রা বিরতি। হাইওয়ের পাশে ‘মায়া হোটেল’। নামেই মায়া! হোটেলে আগে থেকেই আমাদের জন্য ‍অপেক্ষায় ছিলেন টাঙ্গাইল জেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান সোহেলসহ একাধিক নেতাকর্মী। রাতের খাবার ও বিদায় পর্ব শেষে রাত বারটা পার হয়েছে। ঈদের আগে তাই এক রাস্তায় যেমন গরুর ট্রাক ঢাকামুখি অন্য রাস্তায়ও মানুষের ফেরার ঢল। যানজটের এই মাত্রা টাঙ্গাইল থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত নিয়ে গেলো। যমুনার পানি রাতের বেলায় চিক চিক করছিল। আর ভয়ঙ্কর স্রোতের শো শো শব্দ মনে করিয়ে দিচ্ছিল এই পানিইতো ভারত থেকে নেমে উত্তর জনপদ ডু্বিয়েছে। আর তিস্তা, ধরলা ধরে এসে যমুনায়। রাত বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে আমাদের যাত্রা। খোরশেদ কাকা একটু পর পর পান খাচ্ছেন আর আপন গতিতে চালাচ্ছেন গাড়ি। বেশ মজার মানুষ তিনি। রসে টইটম্বুর। মাজে মাজে নানা গল্প করেন। সকলেই তাকে অনেক ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। খোশ মেজাজে বড় আল্লাদে সুরে বলতে থাকেন, ‘কিছু ভাতিজা পেয়েছিলাম....’। রাতের মহাসড়ক কখনো বাকা মনে হয় না। বার বার মনে হচ্ছিল রাস্তাটা বেশ সোজা। কিন্তু বাস্তবে তা মোটেও নয়। বহরের অনেক গাড়িই বিচ্ছিন হয়ে পড়েছিল। আমরা যখন বগুড়া পৌছালাম তখন রাত ৩টা। একটু চা পান করে আবার যাত্রা শুরু। রাত শেষ হতে চলছে তবে ঘুম নেই কারো চোখেই। কেউ চোখ বুজে ঘুমের ভান ধরার চেষ্টা করলেও ঘুম যেন আড়ি দিয়েছে চোখের সাথে। বগুড়া পার হওয়ার পর দেখতে পেলাম মহাস্থান স্থানে ব্রীজ ভাঙার কারণে রাস্তার দুপাশেই যানজট। বুঝতে পারলাম ঈদে উত্তর এলাকার চরমস ভোগান্তির কারণ হবে এটি। একপাশের গাড়ি আটকে রেখে অন্যপাশ থেকে অল্প অল্প করে গাড়ি ছাড়তে হয়। আমাদের পাশে গাড়ি কম থাকায় খুব অল্প সময়েই পাড় হয়ে গেলাম। তবে অপর পাশে তখনো প্রায় হাজার খানেক গাড়ি আকটে গেছে। বেশির ভাগই ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান। ট্রাকগুলোতে গরু দেখা যাচ্ছিল। হাইওয়ে পুলিশের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, একপাশে ব্রীজ ভেঙে এমন পরিস্তিতির সৃষ্টি হয়েছে। রংপুর পেড়িয়ে গাড়ি চলছে অবিরাম। এর মধ্যে খোঁজ রাখার চেষ্টা করছি আমাদের ত্রাণের গাড়ি কোথায়। মানবতার ডাকে ছুটে চলার স্বপ্নইতো সেই গাড়ি। যার মধ্যে ২১শত পরিবারের খাবার। ভোরের সূর্য উঠছে ততক্ষণে আমরা তিস্তা ব্রীজের উপর। ইচ্ছে হচ্ছিল নেমে একটু হাটি। ভোরের সূর্য আর প্রকৃতি একটু উপভোগ করি। ব্রীজ শেষেই দেখতে পেলাম জেলা প্রশাসনের বড় অক্ষরে লেখা ‘লালমনিরহাট জেলায় স্বাগতম’। ভোরের আলোর তেজ বাড়তে শুরু করলো। সেই সাথে আশপাশে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতিও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। আমরা গাড়িতে বসেই ভাবছিলাম এখনো এই অবস্থা আর কিছুদিন পূর্বে না জানি কি করুন অবস্থাই হয়েছিল। রাজধানীর ইট পাথরের ভেতরে থেকে যতটুকু জেনেছিলাম বন্যায় কেড়ে নিয়েছে সব। পানি বাড়ার কারণে ঘরবাড়ি ছাড়তে হয়েছে অসংখ্য বাসিন্দাদের। খেয়ে না খেয়ে, একবেলা খেয়ে জীবনের সাথে যুদ্ধ চালিয়েছে বানভাসিরা। এই যুদ্ধ বেঁচে থাকার। আর সেই দৃশ্যই কিছুটা স্ব চক্ষে দেখছি। ত্রাণের গাড়ি কিছুটা পেছনে পরেছে। যদিও আমাদের যাত্রার প্রায় চার ঘন্টা পূর্বে এই গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। আমরা দ্রুত গিয়েও কোন উপকার হবে না যতক্ষণ ত্রাণের গাড়ি না আসে। লালমনিরহাট থেকে আমাদের সকালের খাব‍ার বিরতি দেওয়া হলো শিমুলতলিতে। সকালের গরম পরাটা সাথে ডিম ভাজি। এখান থেকে মনিরভাই বিদায় নিলেন। কুড়িগ্রামের কোথায় কোথায় ত্রাণ দিবো তার দেখভাল করতে। আমাদের গাড়ি চললো লালমনিরহাট সদরের দিকে। সদরে গিয়েও ৫ মিনিটের সৌজন্য সাক্ষাতের বিরতি দিতে হলো। এক কাকা এখানে চাকুরি করেন সে সুবাদে একটু দেখা করা মাত্র। গাড়ি চললো হাতীবান্ধার উদ্দেশ্যে। বিরল জেলাই বলতে হয় লালমনিরহাটকে। সবগুলো উপজেলাই একই রাস্তায়। পুরো আড়াই ঘন্টা পর পৌছালাম উপজেলার ডাক বাংলোতে। তখন সকাল সাড়ে নয়টা। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম ত্রানের গাড়ি আসতে সময় লাগবে প্রায় তিন ঘন্টা। সবাই রাতের ক্লান্তি কাটাতে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। যদিও বহরের মাত্র দুটো গাড়ি ঐ সময়ে পৌছাতে পেরেছি। বাকি আরো পাঁচটি এবং ত্রাণের গাড়ি রাস্তায়ই ছিলো। ক্লান্ত শরীর একটু জুরিয়ে নিতে গিয়ে সবাই লাফিয়ে উঠলো! একি এখানে ফ্যানতো ঘুরছেই না। ফ্যানের এক চক্কর খেতে প্রায় এক মিনিট লেগে যাচ্ছে। গরমে সবাই অস্থির হয়ে পরলো। ডাক বাংলোর দায়িত্বরত ব্যক্তি জানালেন এখানে বিদ্যুতের ভোল্টেজ কম থাকে। সবাই একটু ফ্রেস হয়ে এদিক সেদিক ঘুরে দেখতে লাগলো। জেলা ছাত্রলীগ উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর‍া আসলো কথা হলো। সময় গড়ানোর সাথে সাথে এ পৌছালো প্রত্যেক সদস্যও। সেই সাথে ত্রাণের গাড়িও। শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করে খাওয়ার পর আর দেড়ি নয় যাত্রা শুরু। তিস্তা নদীতে বাহন ইঞ্জিন চালিত স্যালো নৌকা। একটি নৌকায় পূর্বেই ত্রান নেওয়া হয়েছিল। ডাওয়াবাড়ি ইউনিয়নে ত্রাণ বিতরণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সার্বিক সাহায্য করেছে হাতিবান্ধার নেতৃবৃন্ধ এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। আমরা কোন চরে নৌকা ভেড়ানোর আগেই ত্রান নিতে ‍আসা মানুষের ভিড় লেগে যাচ্ছে। মানুষগুলো বেশ সহজ সরল। জীবন যাপনও সাধারণ। শিক্ষার পরিবেশ আছে। সন্তাদের স্কুলে পাঠায়। তবে সারা বছরই কাজের চিন্তায় থাকতে হয়। এখানের মানুষের মতো সহজ সরল নয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মেম্বাররা। আমাদের ত্রানগুলো লুটে খাওয়ার আশায় কতোটা চেষ্টাই করেছে। কিন্তু আমরাও অপারগ নিজেরাই সবার হাতে হাতে দিতে চাই। হাত বাড়াতে চাই সাহায্যের, হাত বাড়াতে চাই ভালোবাসার। শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ‍মানুষের হাতে হাতেই তা দিতে পেরেছি। চারটি চরে গিয়ে আমরা বলেছি ভয়ের কোন কারণ নেই। এই সোনার বাংলায় কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না। আমারা আছি, আছে গোটা বাংলাদেশ আপনাদের সাথে। পুরুষ কিংবা নারী সবাই ত্রাণ পেয়ে আদর স্নেহমাখা পরশ বুলিয়ে দিয়েছে আমাদের। ভাটির স্রোতে যেতে সময় লেগেছে দেড় ঘন্টা। আর যখন ফিরছি তখন উজানের স্রোতে সময় চার ঘন্টা। রাতের অন্ধকারে দূর থেকেই দেখা যাচ্ছিল তিস্তা ব্যারেজ। নদীর বুক চিরে যাচ্ছে আমাদের নৌকা সাথে ভট ভট শব্দ। হাতীবান্ধা উপেজেলায় যখন আসলাম তখন রাত নয়টারও বেশি। রাতের খাওয়া পর্ব শেষে উপস্থিত স্থানীয় সকল শোভাকাঙ্খিদের বিদায় জানিয়ে রাত দশটার পর যাত্রা শুরু করলাম কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে। তখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি। রাত দশটা রাজধানীতে সন্ধ্যাই মনে হয় কিন্তু প্রতন্ত অঞ্চলে সবাই গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। রাতের নিরবতায় যখন সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন তখন আমরা ছুটছি মানবতার ডাকে নতুন জেলায়। শুরুতেই লিখেছি মানবতার ডাকে এখনো ছুটছে তরুণরা। ভবিষ্যতেও ছুটবেই। তারুণ্য মানে কোন বারন আর পায়না কোন ভয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদক বিভিন্ন বিপর্যয়ে ‍মানবতায় ডাকে সংগঠনের নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তারা নিজেরাও ছুটে যান বন্যার্তদের ত্রাণ দিতে, ছুটে যান অসহায় রোগীর পাশে দাঁড়াতে, ছুটে যান মৃত্যুর ভয় পাওয়া রোহিঙ্গা শিশুটির কাছে আদরের পরশ বুলিয়ে দিতে। এই ছুটে চলা চলছেই। একটি জেলার কাজ শেষে অন্য জেলায় ছুটে যাচ্ছি প্রত্যেকের মধ্যে তখন একটা অনুভূতির আনন্দ কাজ করছে। প্রত্যেকেই ভুলে গেছে তারা নির্ঘুম রাত কাটিয়ে শত শত মাইল ছুটে চলার কথা। সবার চোখে মুখেই তৃপ্তির হাসি। কারন একটাই, অসংখ্য মানুষের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে ত্রান দিতে পেরে। একটু ভালোবাসার হাত বাড়াতে পেরে। কিছু হোক না হোক সাহসের সাথে এটা বলতে পেরে ‘আমরা আছি’ সবার পাশে। রাতের অন্ধকার ভেদ করে চলছে ছুটে চলা...। শুধু ছাত্রসংগঠনের তরুণরাই নয়, দেশের জন্য, মানবতার জন্য সকল তরুনরা আরো বেশি ভূমিকা রাখবে এটা আমাদের বিশ্বাস। সাবাশ তারুণ্যে, জয় হোক মানবতার।
×