ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও এগিয়ে চলছে আকাশপথের বাণিজ্য

পশ্চিমা দেশে দু’বছরে পণ্য রফতানি বেড়েছে আশাতীত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পশ্চিমা দেশে দু’বছরে পণ্য রফতানি বেড়েছে আশাতীত

আজাদ সুলায়মান ॥ প্রায় দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে সরাসরি কার্গো রফতানি। একযুগেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে ঢাকা থেকে সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লাইট। তুচ্ছ অজুহাত ও নিরাপত্তার দোহাইয়ে এ রকম জটিলতার মুখে রয়েছে দেশের এভিয়েশন খাত। এ প্রতিবন্ধকতার পরও এগিয়ে চলছে আকাশপথের বাণিজ্য। গত দু’বছরের শুধু কার্গোর পরিসংখ্যান থেকেই দেখা যায়, ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য পশ্চিমা দেশে পণ্য রফতানি বেড়েছে আশাতীত। বেড়েছে রাজস্ব। নতুন নতুন রুটে যাত্রী পরিবহনের এয়ারসার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে। বিমান ও সিভিল এভিয়েশন সূত্র জানিয়েছে, বছর দুয়েক আগে নিরাপত্তার অজুহাতে ঢাকা থেকে সরাসরি কার্গো রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুুক্তরাজ্য। তার দেখাদেখি অস্ট্রেলিয়া ও জার্মানসহ আরও কয়েকটি দেশ একই অবস্থান নেয়। এতে ঢাকা থেকে বিমানের কার্গো পরিবহন কিছুটা হ্রাস পায়। কিন্তু ছয়মাসের মাথায় তাতে গতি আসে। বাড়তে থাকে কার্গোর পরিমাণ। অন্যদেশে মাধ্যমে কার্গো স্ক্যানিং করে রফতানির পরও আগের বছরের তুলনায় রফতানির পরিমাণ ও রাজস্ব বুদ্ধি পেয়েছে গত দুবছর। উল্লেখ্য, পর্যাপ্ত নিরাপত্তার অভাব রয়েছে এমন অজুহাতে গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশের সঙ্গে আকাশপথে সরাসরি কার্গো (বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে পণ্য পরিবহন) পরিবহন স্থগিত করে যুক্তরাজ্য। পরে ওই বছরের ২১ মার্চ পরামর্শ, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা ও জনবলের প্রশিক্ষণের জন্য দেশটির বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডলাইন এ্যাসিউরড সিকিউরিটির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করে সিভিল এভিয়েশন। যদিও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বলছে, রেডলাইনের পরামর্শে নিরাপত্তাসংশিষ্ট বেশকিছু যন্ত্র কেনা হয়েছে। এসব যন্ত্রের মধ্যে রয়েছেÑ উড়োজাহাজের হোল্ডে রাখার মতো ভারি ব্যাগ তল্লাশিতে আটটি ডুয়াল ভিউ এক্স-রে স্ক্যানিং মেশিন, হ্যান্ডব্যাগ তল্লাশির জন্য ১৪টি ডুয়াল ভিউ স্ক্যানিং মেশিন, ছয়টি লিক্যুইড এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (এলইডিএস), নয়টি আন্ডার ভেহিকল স্ক্যানিং সিস্টেম (ইউভিএসএস), চারটি ফ্যাপ বেরিয়ার গেট উইথ কার্ড রিডার, পাঁচটি বেরিয়ার গেট উইথ আরএফআইডি কার্ড রিডার, দুটি এক্সপ্লোসিভ ডিটেকশন সিস্টেম (ইডিএস) ও চারটি এক্সপ্লোসিভ ট্রেস ডিটেকশন (ইটিডি)। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বেবিচকের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের এসব যন্ত্র পরিচালনার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এ বিষয়ে বিমানের পরিচালক আলী আহসান বাবু জানান, সরাসরি পণ্য রফতানি বন্ধের মাঝেও বিমানের কর্মকা-ে তেমন প্রভাব পড়েনি। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বিমানের কার্গো রফতানি। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে তা বেড়েছে। তবে সরাসরি রফতানি আবার চালু হলে এটা আরও বাড়বে। এদিকে পশ্চিমা দেশগুলো তুচ্ছ অজুহাতে সরাসরি রফতানি বন্ধ রাখলেও ঢাকার সঙ্গে আরও কয়েকটি দেশ নতুন করে বিমান চলাচলে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এদের মধ্যে কয়েকটি দেশ নতুন করে এয়ার সার্ভিস চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে। সম্প্রতি রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের এয়ার সার্ভিস চুক্তি (এএসএ) হালনাগাদ করা হয়েছে। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালাতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইন্দোনেশিয়া, ব্রুনাই, মালদ্বীপ, কানাডা ও অস্ট্রিয়াও। শীঘ্রই এসব দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর মধ্যে আগামী মাসেই ব্রুনাইয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ স্থাপন হলে দুই দেশের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদারেরও যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। এ ছাড়া ফ্লাইট কার্যক্রম চলমান থাকলেও চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে নতুন করে আরও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন। এরই ধারাবাহিকতায় দেশগুলোর সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি হালনাগাদ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে সিভিল এভিয়েশন। জানতে চাইলে বিমান ও পযটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন, সম্প্রতি কয়েকটি দেশের সঙ্গে এসব চুক্তি নবায়ন ও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালানোর বিষয়ে অনেক দেশই আগ্রহ দেখাচ্ছে। এছাড়া কিছু দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি নবায়ন করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নতুন করে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। এসবই কিন্তু দেশের এভিয়েশন খাত সম্প্রসারণের ইঙ্গিত বহন করে। নতুন করে এয়ার সার্ভিস চুক্তি করতে যাওয়া দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য সম্ভাবনা রয়েছে পর্যটন খ্যাত ইন্দোনেশিয়ার অথচ এ দেশটার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় ঢাকা থেকে ইন্দোনেশিয়া যেতে যাত্রীরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে এয়ার এশিয়া ও মালিন্দো এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ব্যবহার করছেন। পাশাপাশি পরিবহন হচ্ছে বেশকিছু পণ্য। এ অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা যাচাই করেছে এবং রুটটিকে সম্ভাবনাময় মনে করছে। কার্গো ও যাত্রী পরিবহন উভয়ক্ষেত্রেই রয়েছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। এদিকে বছরে পর বছর ধরে কার্যক্রমে থাকার পরও নতুন করে আরও ফ্রিকোয়েন্সি বাড়াতে চায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, থাইল্যান্ড, ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন। এসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন গভীর হচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশী শ্রমিকেরও চাহিদা রয়েছে। সেক্ষেত্রে উভয় দেশের স্বার্থেই কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার ব্যাপারে সরাসরি ফ্লাইট চলাচল ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানোর বিষয়ে চুক্তি করতে আগামী মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের কথা রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বেবিচক প্রতিনিধি দলের। সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, গত মাসে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি পণ্য পরিবহনের পরিসর বাড়াতে ঢাকার সঙ্গে এয়ার সার্ভিস চুক্তি হালনাগাদ করেছে মস্কো। হালনাগাদ চুক্তিতে দুই দেশের সাপ্তাহিক ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি তিনটি থেকে বাড়িয়ে ১৪টি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেবিচকের অনুমোদিত বৈমানিক লাইসেন্স, এয়ারওয়ার্দিনেস ইন্সপেক্টর, কেবিন ক্রুসহ আনুষঙ্গিক সব সনদকেও স্বীকৃতি দেবে এবং গ্রহণ করবে রাশিয়া। এতে বাংলাদেশের এভিয়েশন খাত দীর্ঘমেয়াদে লাভবান হবে। এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের একজন পরিচালক জনকণ্ঠকে বলেন, রাশিয়ার চেয়েও বেশি মনোযোগ দেয়া দরকার মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বাণিজ্য সম্ভাবনার দেশ আরব আমিরাতের ওপর। দেশটি একতরফা ঢাকা থেকে প্রতিদিন একাধিক ফ্লাইট অপারেট করলেও বিমান সে তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে। সংযুক্ত আমিরাতের ভিসা বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। এ কারণে ঢাকা থেকে শ্রমিক ও ব্যবসায়ী সেখানে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স।
×