ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৬-২৪ সেপ্টেম্বর ৭২তম সাধারণ পরিষদের সভা

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

জাতিসংঘে রোহিঙ্গা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ পরিষদে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। তবে সাধারণ অধিবেশন শুরুর আগেই রোহিঙ্গা সঙ্কটকে মানবিক বিবেচনায় নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এক বৈঠক করেছে। এদিকে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইনের রোহিঙ্গা সঙ্কট ঘিরে আসন্ন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে উত্তাপ ছড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ১৬-২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করবে বাংলাদেশ। এবারের সাধারণ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সঙ্কটকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি দেশও রোহিঙ্গা সঙ্কটকে সাধারণ পরিষদে আলোচনায় প্রাধান্য দেবে। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি আলোচনায় তুলবেন বলে জানা গেছে। তবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আগেই রোহিঙ্গাদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে সংস্থাটি। রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিতে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। সহায়তার অপেক্ষায় থাকা বিপন্ন ওই মানুষদের রক্ষায় রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব এ্যান্তোনিও গুয়েতেরেজ। এছাড়া বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তাও দেবে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৫ আগস্টের পর তিন লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা করছে স্থানীয় লোকজন। নতুনদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের কাছে সহায়তা চেয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য দুইটি চার্টার্ড বিমানে করে বাংলাদেশে ত্রাণ পৌঁছে দেয়ার কথা জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের সহায়তায় পাঠানো প্রথম বিমানে রয়েছে স্লিপিং ম্যাট, বাড়ি তৈরির জিনিসপত্রসহ আরও কিছু জিনিসপত্র। বিমানটি বাংলাদেশে পৌঁছেছেও। দ্বিতীয় বিমানটি সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে বাংলাদেশে আসছে। সেখানে ২ হাজার তাঁবু রয়েছে। এই ত্রাণে ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে সহায়তা করা সম্ভব হবে। এছাড়া আরও ত্রাণ আসছে যা দিয়ে ১ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গাকে সাহায্য করা সম্ভব। এদিকে মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক সহায়তা দেয়া সংস্থাগুলোর মধ্যে জাতিসংঘসহ অন্যান্য বেশিরভাগই তাদের কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বাধ্য হয়েছে। রেড ক্রস ও সরকার কিছুটা কার্যক্রম চালাতে পারছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘ ও তার সহযোগী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের সাহায্য করার ব্যাপারে নিজেদের আগ্রহের কথা জানিয়ে আসছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় যতদ্রুত সম্ভব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বিত ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে চায় জাতিসংঘ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ ও নিন্দা মিয়ানমারে সহিংসতা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউজের প্রেস সেক্রেটারি সারাহ স্যান্ডার্স এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বার্মার (মিয়ানমার) উত্তরাঞ্চলে রাখাইন রাজ্যে চলমান সঙ্কটে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, যেখানে ২৫ আগস্ট বার্মার নিরাপত্তা পোস্টগুলোতে হামলার জের ধরে কমপক্ষে তিন লাখ মানুষ বাসস্থান ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা আবারও নিন্দা জানাচ্ছি এসব হামলার যা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে। বুধবার ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে সারাহ স্যান্ডার্স উল্লেখ করা হয়েছে, বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা নৃগোষ্ঠী ও অন্যান্য সংখ্যালঘু মানুষের ব্যাপকহারে আবাসস্থল থেকে উচ্ছেদ হওয়া ও তাদের ওপর নির্যাতন এটিই প্রমাণ করে যে, বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীগুলো বেসামরিক মানুষদের রক্ষা করছে না। নিরাপত্তা বাহিনী এবং তাদের নির্দেশে কাজ করা বেসামরিক নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-, গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া, গণহারে হত্যাকা- এবং ধর্ষণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে আমরা শঙ্কিত। আমরা বার্মা কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানাই আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে, সহিংসতা বন্ধ করতে ও কোন সম্প্রদায়ের বেসামরিক জনগণকে তাদের বাসস্থান থেকে উচ্ছেদ না করতে। রাখাইন কমিশনের প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়ন করতে আমরা বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীকে অনুরোধ করছি সে দেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করতে। বিবৃতিতে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব মানবিক সহায়তা ভুক্তভোগীদের কাছে পৌঁছানোর জন্য বার্মা সরকারের প্রতিজ্ঞাকে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা সরকারকে অনুরোধ করছি আক্রান্ত এলাকায় গণমাধ্যমকে প্রবেশের অনুমতি দিতে। সহিংসতার কারণে উচ্ছেদ হওয়া রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে এবং আমরা বাংলাদেশ সরকারের মানবিক সহায়তা প্রদানের উল্লেখযোগ্য উদ্যোগের ভূয়সী প্রশংসা করি। নিরাপত্তা পরিষদে জরুরী বৈঠক রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে বুধবার বাংলাদেশ সময় রাতে জরুরী বৈঠক হয়েছে। সংস্থাটির মানবাধিকার কমিশন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ তোলার পর এই বৈঠক আহ্বান করে নিরাপত্তা পরিষদ। মানবিক সঙ্কট বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের উদ্যোগে সঙ্কট নিরসনের এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একই ইস্যুতে গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের ওপর আলোচনার জন্য যুক্তরাজ্য ও সুইডেন নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকে বসার অনুরোধ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই বুধবার এই বৈঠক হয়। তবে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নিরাপত্তার পরিষদের বৈঠক চলছিল। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা ও প্রায় তিন লাখ ৭০ হাজার নিপীড়িত রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আসায় সৃষ্ট মানবিক সঙ্কটের ওপর আলোচনা হয় বৈঠকে। মানবিক সহায়তা দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অতিরিক্ত মানবিক সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। বুধবার সংস্থাটি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ইইউ কমিশন ঘোষণা দিয়েছে, মিয়ানমার থেকে অধিকসংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থী আসার কারণে তারা অতিরিক্ত ৩০ লাখ ইউরো মানবিক সহায়তা দেবে। ইইউ কমিশনের মানবিক সাহায্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিশনার ক্রিসটোস স্টাইলিয়ানিডেস মে মাসে রাখাইন সফরের সময়ে ১২ লাখ ডলারের সহায়তা ঘোষণা দিয়েছিল। এই ৩০ লাখ ইউরো সাহায্য আগের সহায়তার অতিরিক্ত। ক্রিসটোস স্টাইলিয়ানিডেস বলেন, ইইউ থেকে বরাদ্দ দেয়া এই অর্থে নতুন আসার শরণার্থীদের জরুরী ভিত্তিতে বাসস্থান, পানি, খাদ্য ও স্বাস্থ্য সহায়তা দেয়ার কাজে ব্যবহার হবে। তিনি শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
×