ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনেকে উধাও, অনেকে ফের জঙ্গী তৎপরতায়

চলতি বছরের ৮ মাসে দুই শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চলতি বছরের ৮ মাসে দুই শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্ত

শংকর কুমার দে ॥ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে চলতি বছরের ৮ মাসেই ২ শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। গত আগস্ট মাসে জামিনে মুক্তি পেয়েছে ২০ জঙ্গী। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে একের পর এক জঙ্গী জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। জামিনে মুক্তি পাওয়া জঙ্গীদের অনেকেই এখন উধাও। আবার জামিনে মুক্তি পাওয়া জঙ্গীদের অনেকেই মুক্ত জীবনে এসে জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত হওয়ার মতো তথ্য রয়েছে। একের পর এক জঙ্গী মুক্তি পেয়ে যাওয়ার ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জঙ্গী তদন্তকারীদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। জঙ্গী গোষ্ঠীর সদস্যদের জামিনে মুক্তি পাওয়া নিয়ে এক সংস্থা আরেক সংস্থার ওপর দায় চাপিয়ে দিচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কারাগার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, একজন জঙ্গীকে ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন কোন ইউনিটকে কয়েক মাস ধরে কাজ করতে হয়। সোর্স নিয়োগ, রেকি করা, নজরদারি ও অভিযান পরিচালনার পর একজন বা একাধিক জঙ্গী ধরা পড়ে। অথচ এসব জঙ্গীরা সহজেই জামিনে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এই ধরনের অবস্থা চলতে থাকলে দেশ থেকে জঙ্গীনির্মূল করা কোনভাবেই সম্ভব হবে না। জামিনে মুক্তি পাওয়া জঙ্গীরা জামিনে মুক্ত হয়ে আগের মতো পালিয়ে যাবে, নয়তো আত্মগোপনে থেকে নতুন করে জঙ্গীকার্যক্রমে জড়িয়ে পড়বে এটাই স্বাভাবিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও কারাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কেবলমাত্র কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে ১৪৮ জঙ্গী। জুলাই ও আগস্ট মাসের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গত ২ মাসে আরও অন্তত অর্ধ শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্ত হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তথ্য রয়েছে। শুধুমাত্র গত আগস্ট মাসেই জামিনে মুক্তি পেয়েছে ২০ জঙ্গী। সব মিলিয়ে চলতি বছরের ৮ মাসে ২ শতাধিক জঙ্গী জামিনে মুক্তি পেয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি। এত জঙ্গীর জামিনে মুক্তি পাওয়া নিয়ে বিস্ময়ে হতবাক খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারাই। কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে অন্তত ২০ জঙ্গী জামিনে মুক্তি পেয়েছে। আদালত থেকে জামিনের আদেশ এলেই মুক্তির প্রক্রিয়া শুরু করে কারাগার কর্তৃপক্ষ। তবে নিষিদ্ধঘোষিত কোন সংগঠন কিংবা আলোচিত সন্ত্রাসীদের জামিনে মুক্তি দেয়ার আগে আইনশৃঙ্খলার কথা চিন্তা করেই তা সবগুলো গোয়েন্দা সংস্থাকে জানানো হয়। জামিনে মুক্তি দেয়ার বিষয়ে আদেশ আসলে কারা কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। আসামি যত বড় সন্ত্রাসী বা জঙ্গীই হোক, আদালতের আদেশে জামিন পেলে তাদের ছেড়ে দিতে হবেই। অন্যথায় উল্টা কারাগার কর্তৃপক্ষকেই আদালত অবমাননার সম্মুখীন হতে হবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৩০ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পায় আমিনুল ইসলাম নামে এক জেএমবি সদস্য। শেরপুরের নালিতাবাড়ি নিশ্চিন্তপুর এলাকায় তার বাড়ি। আমিনুলের বিরুদ্ধে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা রয়েছে। একই দিনে জামিনে মুক্তি পায় আরেক জঙ্গীসদস্য মনির হোসেন। তার বাড়ি ভোলার লালমোহনের বাদরপুরে। টঙ্গী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
×