ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্ঠুর নিন্দনীয় অপরাধ

প্রকাশিত: ০৩:৩১, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

নিষ্ঠুর নিন্দনীয় অপরাধ

সমাজে নারীরা নানাভাবে নির্যাতিত হচ্ছে, তন্মধ্যে চলন্ত বাসে নারী নির্যাতন একটা অতীব অমানবিক, নিন্দনীয়, নিষ্ঠুর আর লোমহর্ষক ঘটনা। ২০১২ সালে দিল্লীতে চলন্ত বাসে নির্ভয়াকে হত্যা করা হলো। আর এই সেইদিন বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে রূপা খাতুনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হলো। পৃথিবীর অনেক দেশ আর অনেক স্থানে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। অনুন্নত এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও অপরাধের ধরন মোটামুটিভাবে একই রকম। একদিন ছিল নারীরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল বলে গৃহবন্দী হয়ে থাকতেন, কিন্তু এখন দিন বদলেছে, নারীরা এখন আর গৃহবন্দী নন। কর্মের জন্য নারীকে এখন ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে হচ্ছে, রাত বিরাতে একাকী ঘরের বাইরে চলাফেরা করতে হচ্ছে। প্রগতিশীল দুনিয়ায় একটি দেশ আজ অপর একটি দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে। উপমহাদেশের প্রতিটি দেশ আজ একে অন্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতে নারীরাও পিছিয়ে নেই। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা আজ ঘর থেকে বেরিয়ে স্ব-স্ব বিদ্যাপীঠে গিয়ে পড়াশোনা করছে। আজ তারা একা একাই স্ব স্ব বিদ্যাপীঠে গিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক নারীকে চাকরির জন্য ঘরের বাইরে একা একা চলাফেরা করতে হচ্ছে। বাস, ট্রেন, ট্যাক্সি, বেবি ট্যাক্সিতে রাত-বিরাতে তাদের অনেক সময় একা একা চলাফেরা করতে হচ্ছে। একা চলতে গিয়ে তারা যে সব অনাকাক্সিক্ষত বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে তার প্রতিকারের জন্য আমাদের কি কিছুই করণীয় নেই? সমাজ কি এসব অবস্থা দেখেও চুপচাপ বসে থাকবে? সমাজের প্রতিটি মানুষের কি উচিত নয় এই সব অন্যায় অপরাধের প্রতিবাদ করা আর এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া? প্রত্যেক দেশেই অপরাধ দমনের জন্য সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে। শুধু আইন প্রণয়ন করে চুপচাপ বসে থাকলে চলবে না- ঐ সব আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে, তবেই সেই সব অপরাধ একেবারেই সংঘটিত হবে না এ কথা বলা যাবে না, তবে অপরাধ যে কমবে তাতে কোন ভুল নেই। একটি মেয়ে চাকরি করতে গিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে একাকী বাসে চলতে গিয়ে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হলো, এমনকি ধর্ষণের পর তাকে হত্যা পর্যন্ত করা হলো, এর চেয়ে জঘন্যতম অপরাধ আর কি হতে পারে? কোন সভ্য দেশে এ ধরনের ঘটনা ঘটা উচিত নয়। কিছু মানুষ দিন দিন তার বিবেক বুদ্ধি হারাচ্ছে, উপযুক্ত শাস্তি দিয়ে এই সব নরপশুদের বিবেক-বুদ্ধির দ্বার উন্মোচিত করতে হবে। এখন বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ নারীরা পরিচালনা করছেন, নারীরা যখন রাষ্ট্রপ্রধান এমনকি সরকারপ্রধানের দায়িত্বে নিয়োজিত। আসল কথা হলো নারী পুরুষ নির্বিশেষে মিলে আইনের শাসন বলবৎ করতে হবে, আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হলে প্রকাশ্যে নারী নির্যাতন, নারী ধর্ষণ আর নারী হত্যার মতো জঘন্য অপরাধ অনেক কমে যাবে এ কথা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। এ কাজের জন্য দেশের প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সকলকে সবিশেষ তৎপর হতে হবে। আমরা সমাজের যে যেখানে আছি সকলকেই এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে হবে। রাজনীতিবিদ, সমাজ সেবক, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষক, শ্রমিক, আইনজীবীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে সমবেতভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে, বিশেষ করে সরকারকে কঠোর আইন প্রণয়ন করে অনতিবিলম্বে তা প্রয়োগ করে এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধ বন্ধ করতে হবে, তবেই দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। কলাবাগান, ঢাকা থেকে
×