ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাষণ্ড সন্তান!

প্রকাশিত: ০৩:২৮, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পাষণ্ড সন্তান!

মা যে জন্মদাত্রী। যিনি সমস্ত কিছু উজাড় করে স্নেহ, মায়া-মমতায় তিল তিল করে শ্রমে-কর্মে গড়ে তোলেন নিজ সন্তানকে। মা অমূল্য মানবী। দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করেন যে সন্তান সেই সন্তানকে তিনিই লালনপালন করেন, আগলে রাখেন বুকের মাঝে। সেই সন্তানই যদি মাতৃহননের নান্দীপাঠে হয় মত্ত, তবে নরাধমের স্বভাব চরিত্রই প্রকট হয়। পিতা, মাতা, সন্তান, ভাইবোন এসব সম্পর্ক রক্তের বাঁধন। একই ধারা তাদের দেহে বহমান। মনুষ্য সমাজের দাবি এবং মানবিক গুণাবলী হচ্ছে রক্তের বন্ধন; যা প্রকৃতিগত। এঁদের প্রতি শ্রদ্ধা-ভালবাসা অকৃত্রিম এবং স্বভাবজাত। সে বাবা-মা হোক সমাজের অন্ত্যজ শ্রেণী, তাদের স্থানে অন্য কাউকেই বসানো সম্ভব নয়। সন্তান যত উঁচু পর্যায়েরই হোক না কেন, পিতা-মাতার কাছে সন্তান সন্তানই। এই বাবা-মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করা যায় না, যাতে ‘উহ্’ শব্দটি তাদের অন্তরনিঃসৃত হয়। তাদের সঙ্গে এমন আচরণ করা যায় না; যাতে তারা মনে সামান্যতম কষ্ট পান। তবে এর বিপরীত চিত্র যখন সমাজে দৃশ্যমান হয় আচরণের মাধ্যমে; পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়, এমনকি তাদের গায়ে হাত তোলার মতো জঘন্যতম অপরাধ সন্তান করে থাকে তখন ওই সমাজ নিয়ে কষ্ট হয়। আর ওই পাপিষ্ঠ নরাধম সন্তান যত বড়ই হোক না কেন, তাকে গ্রহণ করা দুরূহ। এই সমাজে এমন কিছু পাষণ্ড নরাধম সন্তান আছে যাদের দ্বারা বাবা-মা নির্যাতিত হন, নিগৃহীত হন। নীলফামারীর রণচ-ি ইউনিয়নের তিন অকাল কুষ্মা- রুদ্রমূর্তি ধারণ করে নিজ জননীকে পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দিয়েছে। অকল্পনীয় ব্যাপার হলেও এই কুলাঙ্গাররা বর্বরতা, অমানবিকতার ঘৃণিত উদাহরণ রেখেছে। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ভড়াভটা ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের আহত বিধবা বৃদ্ধ মা হাছনা বেগম উপজেলা হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তিন পুত্রের সঙ্গে তাদের দুই স্ত্রীও শাশুড়িকে পেটানোর মতো নির্মমতায় শামিল হয়ে জঘন্য আচরণের নিদর্শন রেখেছে। বৃদ্ধা হাছনা বেগমের স্বামী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে পিয়ন পদে চাকরিরত অবস্থায় ২০১৬ সালের পহেলা জুন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। সরকারী চাকরির এককালীন ষোলো লাখ টাকা উত্তোলন করে হাছনা বেগম চার পুত্রের মধ্যে আড়াই লাখ করে মোট দশ লাখ টাকা ভাগ করে দেন। চার লাখ টাকা একমাত্র মেয়ের বিয়েতে ব্যয় করেন। বাকি দুই লাখ টাকা নিজের নামে ব্যাংকে জমা রাখেন। বৃদ্ধা প্রতিমাসে স্বামীর পেনশনের সাত হাজার টাকা ব্যয় করে কলেজপড়ুয়া কনিষ্ঠ পুত্রসহ পৃথকভাবে দিনাতিপাত করেন। কারণ, তার বাকি তিন পুত্র মায়ের ভরণপোষণে অনীহা প্রকাশ করে। মাস দুয়েক আগে তৃতীয় পুত্র ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক কেনার নামে মায়ের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা ধার হিসেবে নেয়। কিন্তু বাইক না কিনে এই টাকা তিন ভাই ভাগ করে নিয়ে যায়। মা টাকা ফেরত চাইলে বচসার সৃষ্টি হয়। তিন পুত্র ও দুই পুত্রবধূ মিলে বৃদ্ধ মাকে চুলের মুঠি ধরে নির্যাতন করে ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে বাম পা ভেঙ্গে দেয়। কনিষ্ঠ পুত্র মাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও পেটানো হয়। এই কুলাঙ্গার সন্তানদের জন্মদাত্রী এখন হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এমন ঘটনা হৃদয়বিদারক। সভ্য সমাজে এমনটা কল্পনা করা যায় না। সন্তানরা যে অপরাধ করেছে, তা ক্ষমার অযোগ্য। বর্তমান সরকার সন্তানের জন্য বাধ্যতামূলক করেছে পিতা-মাতার ভরণপোষণ। দায়িত্ব পালন না করলে শাস্তির বিধানও রয়েছে। কিন্তু হাছনা বেগমের তিন সন্তান যা করেছে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঘটনাটি মানুষের বিবেককে নাড়া দিয়েছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক এটাই মানুষ দেখতে চায়।
×