ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

চমেকে ভর্তি হলো আরও চার গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

চমেকে ভর্তি হলো আরও চার গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়ছে আহত রোহিঙ্গাদের চাপ। মঙ্গলবারও ভর্তি হয়েছে আরও ৪ গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গা। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ভর্তি হয়েছে ৯৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২ জন এবং সুস্থ হয়ে রিলিজ পেয়েছে ১৫ জন। তবে একজন পালিয়েছে। সবমিলে এখন চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গার সংখ্যা ৮১ জন। আহতদের মধ্যে বেশিরভাগই গুলিবিদ্ধ। এছাড়া কয়েকজন দগ্ধ ও মাইন বিস্ফোরণে গুরুতর আহত রোগী রয়েছেন। চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জালাল উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, সুস্থদের ছেড়ে দেয়ার পর এখন চিকিৎসাধীন ৮১ জনের মধ্যে ২ জন অসুস্থ। তারা লিভার ক্যান্সার এবং হেপাটাইসিস রোগে আক্রান্ত। যারা সুস্থ হয়েছে তাদের পুলিশের জিম্মায় তুলে দেয়া হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্সরা সর্বোচ্চ আন্তরিকতা দিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এখন যারা চিকিৎসাধীন তাদের সকলেই সুস্থ হওয়ার পথে। তবে হাত-পায়ে গুলিবিদ্ধ এবং দগ্ধদের দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং রোগী কল্যাণ সমিতির আর্থিক সহায়তায় এদের চিকিৎসা চলছে। সিএমপির উপকমিশনার (উত্তর) আবদুল ওয়ারিশ জানান, সুস্থ ১৫ জনকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে গ্রহণ করে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রিফিউজি ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া যারা চিকিৎসাধীন আছে তারাও পুলিশের তদারকির মধ্যে রয়েছে। চমেক হাসপাতালের ২৬ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আহত রোহিঙ্গা শরণার্থী জাহাঙ্গীর (২২) জানান, তার বাড়ি রাখাইন প্রদেশের মংডুর বলিবাজার এলাকায়। মিয়ানমার মিলিটারির গাড়ি আসায় আতঙ্কে অনেকের মতো তিনিও বাড়ি থেকে বেরিয়ে পালাচ্ছিলেন। এলোপাতাড়ি ছোড়া গুলির একটি এসে লাগে তার ডান পায়ে। এরপর তিনি গুরুতর আহত অবস্থায় অনেক কষ্ট করে সীমান্ত অতিক্রম করে উখিয়ার কুতুপালং রিফিউজি ক্যাম্পে আসেন। সেখান থেকে নিয়ে আসা হয় চট্টগ্রাম শহরে। এখন তিনি অনেক সুস্থ অনুভব করছেন। একই ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন আরাফাত (২৩) নামের আরেক রোহিঙ্গা। তিনিও গুলিবিদ্ধ। জানালেন, তারা চার বোন এক ভাই। তিনি একাই এসেছেন। বাবা, মা এবং ভাই বোনরা কোথায় কেমন আছে কিছুই জানেন না। কিশোর নঈমুল্লাহর বয়স পনের বছর। ঘর থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আর্মির গাড়ি দেখে আঁতকে উঠে এ কিশোর। দৌড়ে বাঁচতে চেয়েছিল সে। কিন্তুু একটি গুলি এসে লাগে তার কাঁধে। স্থানীয়দের সহায়তায় বহু কষ্টে আসতে সক্ষম হয় টেকনাফে। তারা ভাই-বোন সাতজন। অন্যদের খবর তার জানা নেই। আমানউল্লাহ (২৮) নামের আরেক আহত রোহিঙ্গা জানান, কোরবানির ঈদের আগের দিন তিনি গুলিবিদ্ধ হন। এরপর কোন দিকে যাবেন ঠিক করতে না পেরে চলে আসেন বাংলাদেশ সীমান্ত অতিক্রম করে। সে থেকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশে আসার পরে শুনতে পেরেছি যে, আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা ভাই বোন দশজন। কিন্তু কারও সঙ্গে কোন ধরনের যোগাযোগ এখন নেই। তারা রাখাইনে আছে, নাকি বাংলাদেশে চলে এসেছে তাও জানি না।
×