ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মায় ডুবে যাওয়া তিন লঞ্চ ও নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি এখনও

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পদ্মায় ডুবে যাওয়া তিন লঞ্চ ও নিখোঁজদের সন্ধান মেলেনি এখনও

নিজস্ব সংবাদদাতা, শরীয়তপুর, ১২ সেপ্টেম্বর ॥ পদ্মার ভাঙ্গন ও তীব্র স্রোতের তোড়ের মুখে নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদার চেয়ারম্যান লঞ্চঘাটে ডুবে যাওয়া ৩টি লঞ্চের কোনটিই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বা কোন লাশের সন্ধান মেলেনি। পদ্মার তীব্র স্রোতে উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয়ের নোঙ্গর ছিঁড়ে গেছে। সোমবার রাতে লঞ্চ ডুবির ঘটনাস্থল থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে পদ্মায় কাঁচিকাটার কাছে ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমভি মৌচাকের সন্ধান পায় নৌবাহিনীর ডুবুরি দল। এরপর খুলনা থেকে আসা নৌবাহিনীর ডুবুরি দল, ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বিআইডব্লিউটিএর লোকজন সম্মিলিতভাবে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয় নিয়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমভি মৌচাক উদ্ধারের জন্য হুক লাগিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা চালায়। কিন্তু পদ্মার প্রবল স্রোতের তোড়ে উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয়ের নোঙ্গর ও বয়া ছিঁড়ে গেলে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। ঘটনাস্থলে আসা নৌবাহিনী ডুবুরি দলের প্রধান লে. কমান্ডার কাওসার বলেন, ডুবে যাওয়া লঞ্চ এমভি মৌচাকের সন্ধান পেয়ে নৌবাহিনী, বিআইডব্লিউটিএ এবং ফায়ার সার্ভিসের লোকজন যৌথভাবে মিলে সারাদিন উদ্ধারের চেষ্টা চালায়। তবে পদ্মায় প্রচ- স্রোত থাকায় এবং উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয়ের নোঙ্গর ছিঁড়ে যাওয়ায় আমরা মৌচাক লঞ্চটি উদ্ধার করতে পারিনি। আমরা এখন ডুবে যাওয়া অন্য লঞ্চ দুটি উদ্ধারের চেষ্টা চালাব। কোন লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি বলে তিনি জানান। ফরিদপুর অঞ্চলের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক এবিএম মমতাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সম্পূর্ণ উদ্ধার কাজ শেষ না হবে ততদিন পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাবে তারা। উদ্ধার কাজে পদ্মার স্রোত ব্যতীত অন্য কোন বাধা নেই বলেও তিনি জানান। এদিকে লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নিহতদের লাশের অপেক্ষায় নড়িয়ার সুরেশ^র পদ্মা পাড়ে স্বজনদের ভিড় জমেছে। লাশের অপেক্ষায় আহাজারি করছে তারা। নিখোঁজদের ছবি বুকে ধারণ করে আহাজারি করছে স্বজনরা। সোমবার থেকেই তারা লাশের অপেক্ষায় অবস্থান করছে সুরেশ^রের পদ্মা পাড়ে। মঙ্গলবার সকালে সুরেশ^রের পদ্মা নদীতে একটি লাশের খবর পেয়ে লঞ্চ ডুবিতে নিহতদের স্বজনরা ভিড় করে। পরে পুলিশ জানায় এটা লঞ্চ ডুবির ঘটনায় নিহত হওয়ার লাশ নয়। তখন নিরাশ হয় তারা। এদিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজদের উদ্ধার কাজ ধীরগতিতে চলছে বলে নিখোঁজ স্বজনরা অভিযোগ করেছেন। স্বজনরা জানান, ডুবে যাওয়া লঞ্চ ও নিখোঁজ ব্যক্তিদের গত ২ দিনেও কোন সন্ধান দিতে পারেনি উদ্ধার কর্মীরা। লঞ্চে এসে নিখোঁজ হওয়া যাত্রী ভোজেশ^র এলাকার ব্যবসায়ী রিপন দাসের ছবি বুকে নিয়ে পদ্মা পাড়ে এসে তার লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছেন তার ভাই দিলীপ দাস। দিলীপ দাস বলেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে রিপন দাস রাতে এমভি নড়িয়া-২ লঞ্চে ওঠে। এরপর লঞ্চ ডুবে যাওয়ার পর থেকে তার কোন খোঁজ নাই। ডুবে যাওয়া লঞ্চের স্টাফ নিখোঁজ নড়িয়া উপজেলার হালইসার গ্রামের মানিক মাদবরের ছবি নিয়ে লাশের অপেক্ষায় পদ্মা পাড়ে আহাজারি করছেন তার স্ত্রী ছালমা বেগম। ছালমা বেগম বলেন, আমি আমার স্বামীর লাশটি পেতে চাই। সোমবার ভোরে নড়িয়া উপজেলার ওয়াপদা চেয়ারম্যান ঘাটে পদ্মার ভাঙ্গন ও তীব্র স্রোতে নোঙ্গরকরা ৩টি লঞ্চ ডুবে যায়। ডুবে যাওয়া লঞ্চ তিনটির মধ্যে এমভি মহানগর ও এমভি মৌচাক ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে নড়িয়ার ওয়াপদা ঘাটের উদ্দেশে রাতে ছেড়ে আসে। নড়িয়া-২ লঞ্চটি ঘাটে বাধা ছিল। এতে ১২ জন লঞ্চের স্টাফসহ কয়েকজন যাত্রী নিখোঁজ হয়।
×