ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাওয়ায় আমরা খুশি ॥ ফখরুল

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের প্রধানমন্ত্রী দেখতে যাওয়ায় আমরা খুশি ॥ ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন তিনি রোহিঙ্গাদের দেখতে যাওয়ায় আমরা খুশি। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে যুবদল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। সরকারকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে হবে। আর এ জন্য কূটনৈতিক তৎপরতাসহ যা যা করা প্রয়োজন তাই করতে হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা সঙ্কটকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীন সরকার রাজনীতি করতে চায়। সে জন্যই তারা প্রস্তাব দিচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আর বাংলাদেশের বিজিবি যৌথভাবে টহল দিয়ে অভিযান চালাবে। কিন্তু কোথায় এবং কার বিরুদ্ধে এ যৌথ অভিযান চালানো হবে? যাদের হত্যা, ধর্ষণ করা হচ্ছে, যাদের শিশুদের মেরে ফেলা হচ্ছে, যেখানে গ্রামের পর গ্রাম আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে? পুরোপুরি নতজানু হয়ে গেলে ও নিজস্বতা না থাকলে এবং অন্যের ওপর নির্ভর করে চলতে থাকলে সাধারণত এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মির্জা ফখরুল বলেন, রোহিঙ্গাদের দেখতে প্রধানমন্ত্রী যাওয়ার আগেই সেখানে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্টলেডি রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেছেন। সারা পৃথিবী যখন সোচ্চার তখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর টনক নড়েছে দেরিতে। তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদকে চিঠি দিয়ে পরিষ্কারভাবে বলেছেন, মিয়ানমারে যা হচ্ছে, সেটা স্পষ্টতই জাতিগত নিধনের শামিল। এটা গণহত্যা, এটা বন্ধ করতে হবে। শান্তিতে নোবেলজয়ী ৯ জন বিশ্বনেতাও মিয়ানমারের নিন্দা জানিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশ সরকার দোষারোপের রাজনীতি করছেন। মির্জা ফখরুল বলেন, সোমবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাব আনা হয়েছে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমারকে চাপ দিতে হবে। কিন্তু মিয়ানমারে গণহত্যার বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়নি। এর প্রতিবাদে আমরা ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করছি। ফখরুল, বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সারা বিশ্ব প্রতিবাদে সোচ্চার হলেও সরকার এখনও দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে। তবে দেরিতে হলেও প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের দেখতে এবং ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে গেছেন। তিনি বলেন, আমরা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের এই গণহত্যার নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। সেই সঙ্গে মিয়ানমার সরকারকে বলছি অবিলম্বে তারা যেন রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা বন্ধ করে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সহায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সরকারকে উদ্দেশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের কথা খুব স্পষ্ট, আপনারা সংবিধান পরিবর্তন করেছেন। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দিয়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে তিনটি নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার পরও শুধু ক্ষমতায় থাকার জন্য দেশকে অশান্তি, অস্থিতিশীলতা ও অনিশ্চয়তার দিকে টেলে দিচ্ছেন। ফখরুল বলেন, দেশে আজ যত সংঘাত-সমস্যা তৈরি হচ্ছে তার মূলে রয়েছে নির্বাচন। আশা করি, আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সহায়ক সরকারের যে প্রস্তাব আমরা দিতে যাচ্ছি সে প্রস্তাব মোতাবেক একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। অন্যথায় ইতিহাস এবং জনগণের কাছে আপনারা দায়ী থাকবেন, জনগণ আপনাদের ক্ষমা করবে না। আর ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন এ দেশের মানুষ আর মেনে নেবে না। যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নিরবের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লাহ বুলু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোর্তজুল করিম বাদরু, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন প্রমুখ। ৫ জানুয়ারির মতো একতরফা নির্বাচন করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই- গয়েশ্বর ॥ বিএনপি আন্দোলন না করে চুপ করে থাকলেও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর একতরফা নির্বাচন করার ক্ষমতা আওয়ামী লীগের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার ১০ম কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে মহিলা দল আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। গয়েশ্বর বলেন, সুপ্রীমকোর্টের এক রায়েই আওয়ামী সরকারের চিকুনগুনিয়া হয়ে গেছে। এরপরও আরেকটা আদালত আছে, জনগণের আদালত। সে আদালতেই তাদের বিচার হবে। দেশের ৯০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগকে পছন্দ করে না। আওয়ামী লীগ থেকে এখন পচা দুর্গন্ধ বেরুচ্ছে। এ অবস্থায় যদি সাধারণ জনগণের মতো সিনিয়র নেতাসহ আমরা সবাই জিয়ার নেতৃত্বে আস্থাশীল থাকি তাহলে দেশে গণতন্ত্র ফিরবেই। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে গয়েশ্বর বলেন, ‘কত কথা বলেরে’ মনে হয় তিনি কোথাও আটকে গেছেন। যে কারণে সকালে এক কথা বলেন, আর বিকেলে বলেন আরেক কথা। রাতে পথচারীরা ভয় কাটাতে যেমন জোরে জোরে গান করে, ওবায়দুল কাদেরও এমন করে কথা বলছেন। আসলে তাদের মধ্যে মসনদ হারানোর ভয় ঢুকে গেছে। তাদের নৌকা চরে আটকে গেছে। ইচ্ছা করলেও আর পারাপার হবে না। গয়েশ্বর বলেন, ভিশন-২০৩০-এর আলোকে খালেদা জিয়ার সংস্কার প্রস্তাবই হচ্ছে আসল সংস্কার। মান্নান ভূঁইয়ারা যে সংস্কার কাজ করতে চেয়েছিলেন তা ছিল কুসংস্কার। মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ আরও ক‘জন আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন।
×