ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্বরতার কাহিনী শুনে প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা কাঁদলেন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বর্বরতার কাহিনী শুনে প্রধানমন্ত্রী ও শেখ রেহানা কাঁদলেন

চট্টগ্রাম অফিস/কক্সবাজার প্রতিনিধি ॥ মিয়ানমারের সামরিক জান্তার নিপীড়ন নির্যাতন গণহত্যায় টিকতে না পেরে বাংলাদেশে ইতোমধ্যে চার লক্ষাধিক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। রোহিঙ্গা ঢল সামাল দিতে স্থানীয় প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে লাখো রোহিঙ্গা। ঘরবাড়ি, সহায় সম্বল ও স্বজন হারিয়ে তারা কাঁদছে। তাদের দেশ নেই, আজ তারা সর্বহারা। এ অবস্থায় বাংলাদেশ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আশ্রয় দিয়েছে। ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছে। অস্থায়ীভাবে থাকার পরিবেশ করতে তৎপরতা চালাচ্ছে। এমনিতর পরিবেশে বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সরকারের কয়েকমন্ত্রী ও উর্ধতন কর্মকর্তাদের নিয়ে রোহিঙ্গাদের পাশে উপস্থিত হন। প্রধানমন্ত্রী আগমনের কথা আগে থেকেই রোহিঙ্গা শিবিরে চাউর হয়েছিল। তারা অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখতে এবং তাদের ব্যাপারে তাঁর মুখ থেকে কথা শুনতে। কিন্তু তার আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে তাদের ওপর মিয়ানমারের যে অবর্ণনীয় বর্বরতার ঘটনা ঘটেছে তার নানা কাহিনী শুনলেন। একেক রোহিঙ্গা নরনারী তাঁকে যখন তাদের ওপর ঘটে যাওয়া মিয়ানমার বাহিনীর হিংস্র ছোবলের বর্ণনা শুনছিলেন তখন তিনি অশ্রুসংবরণ করতে পারেননি। সঙ্গে শেখ রেহানাও। এমনকি তাঁর সফরসঙ্গীদের অনেকে চোখ মুছতে থাকলেন। অশ্রুসজল পরিবেশ। নির্যাতনের বর্ণনা এতই অমানবিক যে তা কোন সুস্থ মানুষের পক্ষে সহ্য করার মতো নয়। এ যেন একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালী নিধনের ঘটনার আরেক রূপ। প্রধানমন্ত্রী যখন রোহিঙ্গা নরনারীদের একে একে জড়িয়ে ধরছিলেন তখন তাদের অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল সারা শরীরে। তারা বাংলাদেশের নেত্রীকে তাদের দুর্দশার চরম ক্রান্তিলগ্নে কাছে পেয়ে রীতিমতো বিস্মিত। মিয়ানমার সরকারের যে যন্ত্রণা তারা পেয়েছে এদেশে এসে দেখল তার উল্টো পরিবেশ। ওপারে বর্বরতা এপারে মানবিকতা। নোবেল জয়ী যে নেত্রীর নির্দেশে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী তাদের ওপর যে হিংস্র ছোবল হেনেছে, রক্তে রঞ্জিত করেছে রাখাইন জনপদ, প্রাণ রক্ষার্থে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে তারা প্রত্যক্ষ করছে মানবিক আচরণ কাকে বলে। কক্সবাজার অঞ্চলের মানুষসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার সঙ্গে সরকার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচাতে যেন হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। এ ঘটনা তাদের কাছে অবিশ্বাস্য। কেননা, রাখাইন রাজ্যে তারা শুধু দেখেছে অমানবিকতা, বর্বরতার চরম পরাকাষ্ঠা। ওপারে হত্যা, এপারে আশ্রয়। কী বৈপরীত্য। তাদের কাছে এ যেন রূপকথার কাহিনীর মতো মনে হচ্ছে। অনেক রোহিঙ্গার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে তারা বাংলাদেশে এভাবে আশ্রয়ের সুযোগ পাবে তা না আসার আগে ভাবতেও পারেনি। কারণ, শুনেছিল এদেশের সীমান্তরক্ষী ও পুলিশ তাদের আটকে দেবে। পুনরায় রক্তপিপাসুদের মুখে ঠেলে দেবে। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে ভিন্ন। অন্তত প্রাণটুকু নিয়ে তারা সীমান্ত গলিয়ে এদেশে এসেছে এবং আশ্রয়ও পেয়েছে। শুধু তাই নয়, ত্রাণ সহায়তাও পাচ্ছে, যদিও তা এখনও পরিপূর্ণভাবে শুরু করা যায়নি। কিন্তু তাতে কি? প্রাণে তো তারা বেঁচে আছে। আর যারা এখনও রাখাইন রাজ্যে টিকে থাকার লড়াইয়ে আছে তাদের অবস্থা কি তা নিয়ে ভাবতেই তারা অশ্রু ধরে রাখতে পারছে না। এমনিতর পরিবেশে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের কাছে ভিন্নরূপে আবির্ভূত হয়েছেন। যা নিজেরাই সচক্ষে প্রত্যক্ষ করছে। প্রধানমন্ত্রীর মঙ্গলবারের উখিয়ার সমাবেশটি ছিল রোহিঙ্গাদের নিয়ে জনাকীর্ণ। প্রধানমন্ত্রী তাদের পাশে এসে দাঁড়ানোর ঘটনায় তারা উচ্ছসিত এবং বেঁচে থাকার নবপ্রেরণায় উজ্জীবিত। কেননা, সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, যতদিন তারা নিজ দেশে ফিরে যেতে না পারবেন, ততদিন তাদের এদেশে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। সঙ্গে আসবে ত্রাণ সহায়তা ও বেঁচে থাকার নানা উপাদান। ফলে তারা এখন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছে।
×