ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ২১:৩৯, ২৪ আগস্ট ২০১৭

বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে বিত্তবানদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

অনলাইন ডেস্ক ॥ বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে সমাজের বিত্তশালীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আশা করি, আমাদের বিত্তশালীরা এই দুর্গত মানুষের সেবায় পাশে দাঁড়াবে।’ চলমান বন্যায় দুই সপ্তাহে দেশের ৩২ জেলার প্রায় পৌনে এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ৩২ জেলার ক্ষতিগ্রস্ত ৭৪ লাখ ৮২ হাজার ৬৩৭ জনের মধ্যে ২০ জেলায় ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলার ২০১টি উপজেলা ও ৫১টি পৌরসভা বন্যা কবলিত হয়েছে। চলমান বন্যার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফসলের বেশ ক্ষতি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেঙে যাচ্ছে। নদী ভাঙায় অনেক মানুষ নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। বন্যায় সর্বশান্ত জনগণকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের জমিজমা চলে যাচ্ছে, ঘরবাড়ি চলে যাচ্ছে, তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেওয়া.. তাদেরকে আবার পুনর্বাসন করা এবং পানিটা নামার সাথে সাথে তারা যেন চাষাবাদ করতে পারে; সে ব্যবস্থা করা…সব ধরনের উদ্যোগ আমরা নিয়েছি, সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি, ত্রাণ পাঠাচ্ছি। এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সর্বস্ব হারিয়েছেন দুই লাখ ৯৬ হাজার ২৭৯ জন। আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৭১ লাখ ৮৬ হাজার ৩৫৮ জন। ৭৫ হাজার ৩৩১টি ঘর সম্পূর্ণ এবং ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৮২৫টি ঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর ফসলি জমি সম্পূর্ণ এবং ৬ লাখ ৫৮৭ হেক্টর জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্গত জেলাগুলোতে অন্তত ৬২ হাজার ২০৮টি টিউবওয়েল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদের দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমাদের বাঁচতে হবে। বন্যা, ক্ষরা, জলোচ্ছ্বাস.. এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করা, জানমালের ক্ষতিটা যাতে কম হয়, সেদিকে ব্যবস্থা নেওয়া- এ ব্যাপারে আমাদের সরকার যথেষ্ট সজাগ, সকল প্রস্তুতি আমাদের নেওয়া আছে। ৩২ জেলার বন্যা দুর্গতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৪০ হাজার টাকা নগদ, ২০ হাজার ৭১৮ মেট্রিক টন চাল এবং ৫৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সিলেটের আতিয়া মহলে জঙ্গি হামলায় নিহতদের স্বজনদের চেক প্রদান এবং সরকার প্রধানের ত্রাণ তহবিলে আর্থিক অনুদান গ্রহণ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আতিয়া মহলে জঙ্গি হামলায় নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদের স্ত্রী মোসাম্মৎ সুরাইয়া সুলতানা ও মা সাদেয়া করিম, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মনিরুল ইসলামের স্ত্রী বেগম ফারভীন আক্তার ও মা বেগম ফিরোজা খাতুন, পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী মোহাম্মদ আবু কয়ছরের স্ত্রী ছায়রা ফারহানা চৌধুরী এবং ছাত্রলীগ কর্মী ওয়াহিদুলের মা সুলতানা আক্তার ও জান্নাতুল ফাহিমের বাবা কামাল আহমদ কাবুল প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে চেক গ্রহণ করেন। নিহতদের স্বজনদের সান্ত্বনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার সান্ত্বনা দেবার ভাষা নাই। যা হারিয়েছে, সেটাও দিতে পারব না ফেরত। তাদের ছোট ছোট বাচ্চা আছে, তারা যেন ভবিষ্যতে মানুষ হতে পারে, পরিবারগুলো যেন চলতে পারে। যতটুকু পারি, আমি সাহায্য করে থাকি, চেষ্টা করি। পঁচাত্তরের ১৫ অগাস্টের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হারানোর বেদনা যে কত কঠিন, কত নির্মম; সেটা আমার থেকে ভালো কেউ বোঝে না। সেজন্যই আমি সব সময় চেষ্টা করি; যারা স্বজন হারায়, আপনজন হারায় তাদের পাশে দাঁড়াতে। আমি এটুকু বলব যে, আমি আছি, আমি দেখব। কারো কোনো অসুবিধা যেন না হয়; সেটা আমরা চেষ্টা করব। অন্যদিকে অনুষ্ঠানে বন্যা দুর্গতদের সহায়তায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে সরকারের বিদ্যুৎ বিভাগ এবং অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের একদিনের বেতন জমা দেন। এছাড়া শিপার্স কাউন্সিল, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড, বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান দিয়েছে। ত্রাণ তহবিলে অনুদান দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অনুদান দুর্গত মানুষের সহায়তায় কাজে লাগবে। সূত্র:বিডিনিউজ
×