ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জাস্টিন গোমেজ

বন্ধ করুন ক্ষমতার দাপট

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ আগস্ট ২০১৭

বন্ধ করুন ক্ষমতার দাপট

খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান ও প্রাকৃতিক জলধার সংরক্ষণ আইন ২০০০-এর ধারা অনুযায়ী, খেলার মাঠ অন্য কোনভাবে ব্যবহার বা অনুরূপ ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। আর এই আইন লঙ্ঘনে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদ- বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদ- বা উভয় সাজার বিধান রয়েছে। এই আইনের কোন গুরুত্ব না দিয়ে প্রতিনিয়তই খেলার মাঠগুলোতে বছর ধরে ছোটবড় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে মেলার মাধ্যমে মাঠ ব্যবহার করে কিছু লোক কোটি-কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে। আর মেলাগুলো হয়ে উঠেছে টাকার মেলা। শুধু মেলার কারণেই নয়, ক্রমাগত বেদখল হয়ে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠগুলো। খোলা জায়গায় বস্তি গড়ে ওঠায় শিশু-কিশোরদের খেলার সুযোগ ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাচ্ছে। নগর সভ্যতার দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। আর এই মাঠ হারিয়ে যাওয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। জনসংখ্যার চাপের সঙ্গে সঙ্গে দালানকোঠা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিত নগরায়ণে বাংলাদেশের প্রধান প্রধান শহরগুলো পরিণত হচ্ছে কংক্রিটের শহরে। গত কয়েক দশকের অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে নগরীর উন্মুক্ত স্থানগুলো। খেলাধুলার পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে ছেলেমেয়েরা হয়ে পড়ছে ঘরমুখী। মাঠের খেলা ছেড়ে তারা এখন টিভি কিংবা মাল্টিমিডিয়া নিয়ে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। দখলের আগ্রাসনেও এগিয়ে খেলার মাঠ। নগরীর বেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কোন মাঠ নেই। আর হাতেগোনা যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ রয়েছে তাও বেশিরভাগ খেলার অনুপযোগী। বাইরে খেলার সুযোগ না থাকায় ঘরোয়া পরিবেশেই চার-দেয়ালে সময় কাটাতে হচ্ছে। ঢাকা শহরের কথা আর কি বলব! দেড় কোটি মানুষের এই মহানগরীতে খেলার মাঠ একেবারেই নগণ্য। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী, শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা। আর রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নীতিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার প্রতিটি সেক্টরে একটি করে খেলার মাঠ রাখার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন ক্ষেত্রেই এই নিয়ম মানা হচ্ছে না। রাজধানীতে একসময় প্রতিটি ওয়ার্ডে একাধিক খেলার মাঠ থাকলেও এখন অবস্থা একেবারেই বেহাল। ডিসিসির খেলার মাঠ ছাড়া পাড়া-মহল্লার মাঠগুলো ঘাসের অভাব ও বাউন্ডারি না থাকা, তদারকির অভাব, মেলার জন্য স্টল বরাদ্দের কারণে শিশু-কিশোররা এসব মাঠে খেলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়। ফলে মাঠে খেলা ছাড়াই বড় হচ্ছে ঢাকার শিশুরা। শিশুদের বাড়ির ছাদ, গ্যারেজ কিংবা বারান্দাতেই খেলতে হচ্ছে। এতে করে কিন্তু মানসিক সুষ্ঠু বিকাশ হচ্ছে না। বরং বিক্রিত মনমানসিকতার অধিকারী হচ্ছে। শিশুর দৈহিক, মানসিক ও সামাজিক বিকাশের জন্য খেলাধুলার চর্চা অত্যন্ত জরুরী। মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য খেলাধুলা তথা নির্মল চিত্তবিনোদোনের একান্ত প্রয়োজন। কেননা এর মাধ্যমে মগজে রক্ত সঞ্চালন ভাল হয়। শৈশবে খেলার চর্চা না থাকলে শিশুদের আত্মবিশ^াসের অভাব থেকে যায়। এ থেকে সহজেই তাদের পরাজয়বরণের মানসিকতা তৈরি হয়। ইতোমধ্যে রোবটের মতো যান্ত্রিকভাবে বড় হয়ে উঠছে তারা। সুষ্ঠু বিনোদনের ব্যবস্থা না থাকায় বিপদগামী হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক হারে। নটর ডেম কলেজ, ঢাকা থেকে
×