ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিয়াম বিন আহমাদ

রুদ্ধ মাঠ ॥ তারুণ্যের অভিশাপ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭

রুদ্ধ মাঠ ॥ তারুণ্যের অভিশাপ

খেলাধুলা মানুষের সর্বোত্তম বিনোদন। সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য এর প্রয়োজনীয়তা সহজেই অনুমেয়। খেলাধুলা মন সতেজ রাখে, শরীরেও প্রশান্তি আনে। পরিচ্ছন্ন বিনোদন ও খেলাধুলায় বেড়ে ওঠা শিশু একজন সফল মানুষ হয়ে উঠবে এটাই তো স্বাভাবিক। আবার অপরিচ্ছন্ন বা কুয়াশাচ্ছন্ন বিনোদনে বেড়ে ওঠা শিশুর ভবিষ্যত বিপন্ন হবে এটাই স্বাভাবিক। অধুনা তথ্য প্রযুক্তির যুগে তরুণরা বিভিন্ন মাধ্যমে এগিয়ে গেলেও খেলাধুলায় কিন্তু অনেকটা পিছিয়ে গেছে এটা স্বীকার করে নিতেই হবে। একটা জরিপে দেখা গেছে প্রায় ৬৮% তরুণ যারা সারাদিন অহেতুক ফেসবুক, মেসেনজার, ইমো, টুইটার, হোয়াটস আপ ইত্যাদিতে লিপ্ত থাকে। কারণ আজ তরুণের বিনোদনের অভাব নেই। বিনোদনের জন্য হাতের মুঠোতেই সব পাচ্ছে তারা। যদিও হচ্ছে না শরীরের বিনোদন। সাম্প্রতিককালে এজন্য রোগ-ব্যাধিও জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। খেলাধুলা থেকে বিমুখ হয়ে তরুণরা আজ আড্ডা জমাচ্ছে মাদক আসরে। অনিচ্ছাকৃত হলেও আমাদের অনেকেই দেখে যেতে হচ্ছে তরুণদের এই ভয়াবহ পরিণতি। ২০০৭ সালে তরুণরা মাদকে আসক্ত ছিল শতকরা দশজনেরও কম। আজ ২০১৭ সালে এসে মাদক আসক্ত তরুণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে প্রায় আশি শতাংশে পৌঁছেছে। এর জন্য জন্য কি, আমরা অভিভাবকরা মোটেই দায়ী নই? অভিভাবকরা আজ টাকা পয়সার নেশায় ভুলতে বসেছে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যকে। সন্তানকে স্কুল, কলেজে পাঠিয়ে-ই মনে করছেন দায়িত্ব বুঝি শেষ। ক্লাসের বেতন, টিউশনি ফি, সেমিস্টার ফি ইত্যাদি পরিশোধ করাটাকেই শুধু নিজেদের কর্তব্য মনে বলে করছেন তারা। কিন্তু এটা বোঝা উচিত, সন্তানকে ভালবাসা, আদর, সোহাগ ইত্যাদি থেকে বঞ্চিত রাখলে এমনকি স্নেহ ভরানোর সময়টুকু অবধি না পেলে সন্তানরা অসৎ সঙ্গে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা খেলাধুলায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছি; সে তুলনায় কিন্তু সুযোগ-সুবিধা একদমই পাচ্ছে না আমাদের তরুণরা। খেলাধুলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ সামগ্রী ব্যবস্থা নেই। নেই উপযোগী মাঠ। দু’একটা মাঠ যদি থাকেও সেটা তরুণদের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল। তার পরেও সেই মাঠটা থাকে তাদের প্রতিকূলে। তাহলে কোথায় যাবে তরুণরা? আজ বৈশাখীমেলা, কাল বৃক্ষমেলা, পরশু বাণিজ্যমেলা আরও কত কি মেলা! মাসের পরে মাস কেটে যাচ্ছে হৈচৈ শুনে। এছাড়া তো শব্দ দূষণ আছেই। ধুলাবালি নাসিকায় প্রবেশ করছে, বাড়ছে রোগব্যাধির উপদ্রব। দূষিত পরিবেশের জন্য অনেক এলাকা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। খেলার মতো ফুরফুরে পরিবেশ না পেলে তরুণরা কি করবে। অবশ্যই অসৎ সঙ্গ, মাদক, ছিনতাই, রাহাজানিতে লিপ্ত হবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আজকের তরুণরাই তো আগামীর সম্ভাবনা। এই তরুণদের যদি আমরা নিজেরাই এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিই, কি হবে সমাজের অবস্থা? এজন্য সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য তরুণদের নিয়ে ভাবতে হবে। ওদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য আমাদের সকলের এগিয়ে আসতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ সুযোগ দিতে হবে ওদের। এই সুযোগটা আমাদেরই তৈরি করে দিতে হবে। খেলার উপযোগী পরিবেশ না পেয়ে তরুণরা যদি অসৎ কর্মে জড়িয়ে যায়, এজন্য সমাজই দায়ী থাকবে। তাই সকলের উচিত হবে, তরুণদের সম্ভাবনার কথা চিন্তা করে সকলের এদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা। যাতে করে কোনভাবেই খেলার মাঠে মেলা স্থাপন না করতে পারে। তরুণেরা যেন সেখানে ইচ্ছেমতো বিনোদন করতে পারে সর্বদা। তাহলেই তাদের শরীর-মন সুস্থ ও সুন্দর হবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে
×