ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব

ঘূর্ণিঝড়, পাহাড় ধস, বন্যা ॥ দুর্যোগ পিছু ছাড়ছে না

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ আগস্ট ২০১৭

ঘূর্ণিঝড়, পাহাড় ধস, বন্যা ॥ দুর্যোগ পিছু ছাড়ছে না

শাহীন রহমান ॥ এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। আবহমানকাল থেকে এ দেশের মানুষ বন্যা প্লাবন ঝড়-ঝঞ্ঝা, ঘূর্ণিঝড় সাইক্লোনের সঙ্গে পরিচিত। তবে এবার সবগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগই মহামারী হয়ে দেখা দিয়েছে। বছরের শুরুতে বৈচিত্র্যহীন শীত ঋতু দিয়ে যার শুরু। এরপর একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত করেই চলেছে। ভারি বৃষ্টিপাত, হাওড়ে আকস্মিক বন্যা, পাহাড়ধসের মতো ঘটনা এবং ঘূর্ণিঝড় মোরার ভয়াবহ আঘাত ইতোমধ্যে সহ্য করতে হয়েছে। প্রথম দফায় বন্যার শেষে দ্বিতীয় দফায় বন্যা পুরো উত্তরাঞ্চল বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে বর্তমানে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ দেশের ভূপ্রাকৃতিক গঠন এবং অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ হলেও এবার সবগুলোই যেন একসঙ্গে দেখা দিয়েছে। অতীতে যা লক্ষ করা যায়নি। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে এবারের শীত ঋতু ছিল একেবারে বৈচিত্র্যহীন। ভরা মৌসুমে শীতের দেখা না পেলেও পুরো মার্চ মাসজুড়ে শীতের আবহ ছিল। শীত চলে যেতেই দেশের ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। বৃষ্টিপাতের আধিক্য বছরের শুরু থেকেই ছিল। কিন্তু গত এপ্রিল, জুন, জুলাই এবং চলতি আগস্ট মাসে বৃষ্টিপাতের যে হিসাব তা অতীতের যে কোন বছরের তুলনায় বেশি। এপ্রিল মাসের বৃষ্টিপাত প্রায় চার দশকের রেকর্ড অতিক্রম করেছে। জুন, জুলাই, আগস্টের কয়েক দফা ভারি বৃষ্টিপাতে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং সিলেট জেলা কয়েকবার পানির নিচে তলিয়ে যায়। হাওড়ের অকাল বন্যায় ১১ লাখ ৩৪ হাজার পরিবার ক্ষতির শিকার হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ৭৫ ভাগ ফসল। পাহাড়ধসে মৃতের সংখ্যা রেকর্ড অতিক্রম করে ১৬০ জনে দাঁড়ায়। ঘূর্ণিঝড় মোরা উপকূলীয় এলাকা ল-ভ- করে দেয়। গত ২ আগস্ট ৩ ঘণ্টায় রেকর্ড ২১২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে চলছে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। যার আঘাতে সরকারী হিসেবে এখন পর্যন্ত অর্ধকোটি মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমান তার ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ বইয়ে উল্লেখ করেন ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও অবস্থানের কারণেই বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সবচেয়ে বেশি আঘাত হানছে এখানে। আবহমানকাল থেকেই প্রাকৃতিক বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগের শিকার হচ্ছে। প্রতিবছর যেসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয় তা বিশ্বের কোথাও হয় না। তিন প্রধান নদী নিম্ন অববাহিকায় অবস্থানের ফলে এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্য উঁচুতে অবস্থানের কারণেই এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানছে। বন্যা প্লাবন, জলোচ্ছ্বাস, ঝড়-ঝঞ্ঝা সাইক্লোনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে বহুকাল থেকেই মানুষ পরিচিত। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় নদীভাঙ্গনের শিকার বেশি হচ্ছে। পাহাড়ধসে রেকর্ড মৃত্যু অতীতে একাধিকবার পাহাড়ধসের রেকর্ড থাকলেও এবারের পাহাড়ধসের কারণে মানুষের মৃত্যু মিছিলে পরিণত হয়। গত জুন মাসের ১২ এবং ১৩ তারিখ পরবর্তী আরও কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতে একাধিকবার পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা ১৬০ ছাড়িয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে পাহাড়ধসে এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম তার গবেষণায় দেখান বিগত চার দশকের মধ্যে এবারের পাহাড়ধস ভয়াবহ দুর্যোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়। তিনি বলেন, এর আগে ২০০৭ সালে পাহাড়ধসের ঘটনায় ১২৭ জনের মৃত্যু ঘটে। এবারে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়ধস ছিল বিধংসী। তবে এটাকে বিশেষজ্ঞরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। হাওড়ে অকাল বন্যা হাওড়ের অকাল বন্যা এবার ভয়াল রূপ ধারণ করে। গত এপ্রিল মাসে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে হাওড়ের ৭ জেলার মানুষ ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়ে। এখন পর্যন্ত এর রেশ কাটেনি। বেসরকারী সংগঠন পরিবেশ এবং হাওড় উন্নয়ন সংস্থার তথ্য মতে, হাওড়ে বন্যায় ৭৫ ভাগ ফসল তলিয়ে যায়। মানুষ যখন ফসল ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল তখনি এই অকাল বন্যা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়ে হাওড়ের জনগণ। বেসরকারী ওই সংস্থার হিসাব মতে, ২২ লাখ টন ধান উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ১১ লাখ ৩৪ হাজার ৬০০ পরিবারের এই বন্যায় ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। কারও ঘরববাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি সবকিছুই পানিতে মরে পচে এলাকার পরিবেশ ভারি করে তোলে। হাওড়ের জীবন করে তোলে দুর্বিষহ। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিবছর হাওড়ে অকাল বন্যা দেখা দিলেও এবারের মতো ভয়াবহতা আগে কখনও দেখা যায়নি। ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাত ভূপ্রাকৃতিক অবস্থানগত কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। ল-ভ- করে দেয় উপকূলের জীবনযাত্রা। গত ৩০ মে দেশের উপকূলে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’। যদিও আগে থেকে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে এবারের ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের জীবনহানি হয়নি। তবু এবারের ঘূর্ণিঝড় ছিল অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে অধিক শক্তিশালী। ফলে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে ঘূর্ণিঝড়ে ১০ নম্বর সিগন্যাল টানিয়ে দেয়া হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ১০ নম্বর বিপদ সঙ্কেতের মানে হলো শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আঘাত হানার অপেক্ষায় রয়েছে। তারা জানায়, বন্দর প্রচ- বা সর্বোচ্চ তীব্রতার ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়ে। যেখানে বাতাসের সর্বোচ্চ একটানা গতিবেগ থাকে ৮৯ কিলোমিটার বা তার উর্ধে। ঘূর্ণিঝড় এর চেয়ে বেশি শক্তিশালী হলে যে সতর্ক সঙ্কেত দেয়া হয় তার মানে হলো সঙ্কেত প্রদানকারী কেন্দ্রের সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। তাদের মতে, এবার ঘূর্ণিঝড় মোরা ছিল অনেকটা সেই ধরনের। সরকারের পক্ষ থেকে উপকূলীয় লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হলেও শক্তিশালী এই ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৮ জনের মৃত্যুর পাশাপাশি উপকূলীয় জীবনযাত্রা ল-ভ- হয়ে যায়। রেকর্ড বৃষ্টিপাত আবহাওয়া অফিস জানায়, এবারে শুরু থেকে বৃষ্টিপাতের আধিক্য অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। মার্চেই কয়েক দফা বৃষ্টিপাত হলেও এপ্রিলে এসে শুরু হয় রেকর্ড বৃষ্টিপাত। তারা জানায়, এ বছর এপ্রিলে যে বৃষ্টিপাত হয়েছে ৮১ সালের পর এই মাসে এত বৃষ্টিপাত আর হয়নি। তারা জানায়, একদিনের বৃষ্টিপাতের রেকর্ডের পাশাপাশি ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিপাতেও রেকর্ড হয়েছে এ বছর। গত ২ আগস্ট রাজধানীতে তিন ঘণ্টায় ১২১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের যে রেকর্ড করা হয়েছে তা অতীতে কখনও হয়নি। তারা জানায়, ২০০৩ সাল থেকে আবহাওয়া অফিস ৩ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আসছে। কিন্তু এর আগে এত কম সময়ে অধিক বৃষ্টিপাতের রেকর্ড তারা পায়নি। শুধু রেকর্ড বৃষ্টিপাত নয়। বৃষ্টিপাতে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট রাজশাহী শহর একাধিবার পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে প্রশ্ন ওঠে নগরের ড্রেনেজ সিস্টেম নিয়ে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিúাতের এমন ধরন বদলাচ্ছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণেই এ ধরনের বৃষ্টিপাত দেখা দিচ্ছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পানি সম্পদ প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর মোস্তফা আলীর মতে, জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে সামনের দিনগুলোতে অল্প সময়ে বৃষ্টিপাত বেশি হবে, আবার খরার সময়কালও বেড়ে যাবে এমন আভাস পাওয়া যাচ্ছে। ফলে পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণ করতে হবে এখন থেকেই। উত্তরে দুই দফা বন্যা এদিকে দুই দফার বন্যায় এলোমেলো হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর- পূর্বাঞ্চলের জনজীবন। সরকারী হিসেবেই বলা হয়েছে, এবারের বন্যায় প্রায় অর্ধকোটি মানুষের ক্ষতি হয়েছে। পানিতে ক্ষতি হয়েছে ৬ লাখ হেক্টরের বেশি ফসলের। বন্যায় সাধারণ জনগণের বসতভিটা, কাঁচাপাকা রাস্তা, প্রধান সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দাবি এ বছর যে বন্যা হয়েছে তা অতীতে কেউ প্রত্যক্ষ করেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, এবারের বন্যায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার যে লেবেল অতিক্রম করেছে তা অতীতের যে কোন সময়ে বন্যার চেয়ে বেশি ছিল। এখন বন্যার কবলে রয়েছে উত্তরের জীবন। নদী এবং পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হকের মতে, তিস্তা এবং যমুনা নদীর পানি একসঙ্গে ধাক্কা খাওয়ায় পানি বেশি পরিমাণ ফুলে উঠেই বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় দেশের বাইরের পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা, অসম, অরুনাচল বিহারে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে এসব অঞ্চলের পানি একসঙ্গে নেমে আসার কারণে দেশে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। যদিও ভারত এ বন্যার জন্য চীনকে দায়ী করেছে। তাদের অভিযোগ বন্যার আগাম কোন তথ্য চীন ভারতকে দেয়নি। ফলে জনগণ প্রচ- ভোগান্তিতে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সম্প্রতি এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত হয়ে পড়ছে জলবায়ুর পরিবর্তন। আর এর প্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে প্রাকৃতিক এসব দুর্যোগ। সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রাণহানির সংখ্যা কমলেও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছেই। বিশেষজ্ঞদের হিসেবে দেখা গেছে, আগে ১৫ কিংবা ২০ বছর পর পর বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে ২ থেকে ৩ বছর পরপরই বড় ধরনের দুর্যোগ হানা দিচ্ছে। ব্রিটিশ গবেষণা সংস্থা ম্যাপলক্র্যাফটের তালিকায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ ১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সবার আগে। আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা জার্মান ওয়াচের প্রতিবেদন (২০১০) অনুযায়ী, ১৯৯০ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দেশে বড় ধরনের ২৫৪টি দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বন্যা এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা প্রতিবছরই দেশের ওপর আঘাত হানে। তবে বন্যা একদিকে যেমন আশীর্বাদ অন্যদিকে অভিশাপও। কারণ, প্রতিটি বন্যার পর মাটির উর্বরতা ও খাদ্যশস্য উৎপাদন বাড়ে। প্রতিবছর গড়ে দেশে ২৬ হাজার বর্গকিলোমিটার বা ১৮ শতাংশ ভূখ- বন্যায় ডুবে যায়। ৫৫ শতাংশের অধিক ভূখ- বন্যার প্রকোপে পড়ে। মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশে তিন প্রধান নদী দিয়ে প্রতিবছর ৮ লাখ ৪৪ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়। এটি বার্ষিক মোট প্রবাহের ৯৫ শতাংশ। বৃষ্টির কারণে দেশে অভ্যন্তরে ১ লাখ ৮৭ হাজার কিউবিক মিটার নদী প্রবাহ সৃষ্টি হয়। দেশে মূলত তিন ধরনের বন্যার সম্মুখীন হচ্ছে। মৌসুমি বন্যা, আকস্মিক বন্যা, জোয়ার-ভাটার বন্যা। এছাড়াও উপকূলীয় অঞ্চলে অনিয়মিত ও আকস্মিক জলোচ্ছ্বাসের শিকার হচ্ছে। অতীতে ১৮৭০ সাল থেকে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বন্যার পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, দেশে গড়ে প্রতি দুই বছরের একবার এবং ভয়াবহ বন্যা গড়ে ছয়, সাত বছরে একবার সংঘটিত হয়। ১৯২৭ সালের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয় দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক বন্যা প্রতি সাত বছরে একবার এবং মহাপ্রলয়ঙ্করী বন্যা প্রতি ৩৩ বছর থেকে ৫০ বছরে একবার সংঘটিত হয়। ১৯৫৪ সালের আগস্টের বন্যায় ঢাকা শহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়। পরের বছর ঢাকায় ৩০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। ৫৪ সালে বুড়িগঙ্গা তার সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে প্রবাহিত হয়। ১৯৮৭ সলে দেশের ৪০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। পরের বছরই দেশে বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। দেশে প্রায় ৮২ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের বন্যা মূলত ৫০ থেকে ১০০ বছরে একবার করে দেখা দেয়। ১৯৯৮ সালের বন্যা ছিল দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে স্থায়ী বন্যা। সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট এ্যান্ড কো-অপারেশনের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় দেশের ৬০ শতাংশ জমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সর্বোচ্চ ৬ মিটার উঁচু। ফলে বর্ষায় ২০ শতাংশ জমি প্লাবিত হয়। এ প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙ্গনের পরেই বন্যার স্থান। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের বন্যাকে বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুর্যোগ হিসেবে উল্লেখ করা য়েছে। অনেকের কাছে এটা একটা হেরে যাওয়া যুদ্ধের মতোই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র এই তিন বড় নদী অববাহিকার সর্বনিম্নে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ার কারণে এবং দেশে বিশাল অংশ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সামান্য ওপরে অবস্থিত হওয়ার কারণে অন্যান্য দুর্যোগের মতো বন্যার প্রকোপ অনেক বেশি।
×