ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টিপু হত্যা : ৮ জনকে ফাঁসি ১১ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ২২:৪২, ২৩ আগস্ট ২০১৭

টিপু হত্যা : ৮ জনকে ফাঁসি ১১ জনের যাবজ্জীবন

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রনালয়ে কর্মরত এক উপ-সচিব এবং আমেরিকা বাংলাদেশ হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারী আপন ছোট ভাই রেদোয়ান মহসীন ওরফে টিপুকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করার চাঞ্চল্যকর এই মামলার রায়ে প্রধান আসামী সুধাংশু সুত্রধর ও তার ভাই সুভাষ সুত্রধরসহ ৮ জনকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত এবং ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছে আদালত। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্তরা অন্য ৬ জন হলেন, জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন মনতলা গ্রামের বাসিন্দা এরশাদ আলী, আব্দুল মালেক ওরফে মালু, আতাউর রহমান, আবুল কাশেম, আবু লাল ও মোশারফ মিয়া। এছাড়া যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তরা হলেন, হরমুজ মিয়া, মোস্তাক মিয়া, জানু মিয়া, সানু ভূইয়া, জাবেদ মিয়া, জহির মিয়া, বকুল মিয়া, আমির হোসেন, দুলাল মিয়া, ছায়েদ মিয়া ও কামাল মিয়া। অন্যদিকে সংশ্লিস্ট মামলায় আসামী হিসেবে অভিযুক্ত ৩ জনের অপরাধ প্রমানিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দিয়েছে আদালত। খালাসপ্রাপ্তরা হলেন, শাহ নুরুল গণি, আবু মিয়া ও আব্দুল মজিদ। বুধবার দুপুরে এক জনাকীর্ণ আদালতে ওই রায় ঘোষনা করেন হবিগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মাফরোজা পারভীন। মামলায় রাস্ট্রপক্ষে ছিলেন, স্পেশাল পিপি ও জেলা বারের সাধারন সম্পাদক এডভোকেট লুৎফুর রহমান তালুকদার এবং বিবাদী পক্ষে ছিলেন প্রবীন আইনজীবি এডভোকেট খালেকুজ্জামান, এডভোকেট আশরাফুল বারী নোমান ও এডভোকেট মনোয়ার হোসেন। এই মামলার হত্যাকান্ডের শিকার টিপু’র বড় ভাই মো. ইমরুল মহসীন বর্তমানে সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ে উপ-সচিব হিসেবে কর্মরত। এছাড়াও স্বরাস্ট্র মন্ত্রনালয়ে সাবেক কর্মরত উপ-সচিব এবং বর্তমানে আমেরিকা হাই কমিশনের ফাস্ট সেক্রেটারী হচ্ছেন নিহত টিপুর ভাই আশরাফুল ইসলাম নোমান ও অপর আরেক ভাই মো. ইকবাল মহসীন কক্সবাজারে অবস্থিত একটি স্বনামধন্য হোটেলেল জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। এদিকে, এই রায় ঘোষনাকালে সংশ্লিষ্ট আদালতের কাঠগড়ায় ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত উক্ত আসামীদের মধ্যে উপস্থিত ছিল প্রধান আসামী সুধাংশু সুত্রধর, সুভাষ সুত্রধর ও আব্দুল মালেক ওরফে মালু। ফাঁসির অন্য দন্ডপ্রাপ্তরা এখনও পলাতক। এছাড়া যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে ছায়েদ মিয়া কাঠগড়ায় উপস্থিত থাকলেও বাকী ১০ জন এখনও পলাতক রয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত ওই ৩ জনের মধ্যে কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন একমাত্র শাহ নুরুল গণি। মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরনে প্রকাশ, জমি সংক্রান্ত বিরোধকে কেন্দ্র করে বিগত ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারী রাত অনুমান ১ টার দিকে মনতলা গ্রামের বাসিন্দা ও সংশ্লিষ্ট এলাকাস্থ রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মহসীন মিয়ার বাড়ীতে সুধাংশু ও তার ভাই সুভাষের নের্তৃত্বে ২০/২৩ জনের একটি সশস্ত্র দল প্রবেশ করে শয়ন কক্ষে রেদোয়ান মহসীন টিপুকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। শুধু তাই নয়, এসময় তার বাবা ওই স্টেশন মাষ্টার মহসিন মিয়া এবং মাকেও বেদম মারপিট করে সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে টিপু মাটিয়ে লুটিয়ে পড়লে মৃত অবস্থায় তাকে ফেলে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। তার কিছুক্ষনের মধ্যেই টিপু মৃত্যুর কুলে ঢলে পড়েন। এ ঘটনায় স্বামী হত্যার বিচার চেয়ে টিপুর স্ত্রী হাসিনা আক্তার বাদী হয়ে ২৩ জনকে আসামী করে একই সালের ৯ জানুয়ারী মাধবপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে পুলিশ তদন্ত করলেও পরবর্তীতে তা সিআইডি’র হাতে ন্যাস্ত হয়। এরই প্রেক্ষিতে সিআইডির অফিসার মো. কামরুজ্জামান দীর্ঘ তদন্ত এবং স্বাক্ষীদের স্বাক্ষ্য গ্রহন করে বিজ্ঞ আদালতে ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর উক্ত সকল আসামীদের অভিযুক্ত করে চার্জশীট প্রদান করেন। এদিকে, এই মামলার দীর্ঘ শুনানী ও স্বাক্ষ্য প্রমানের ভিত্তিত্বে উক্ত বিজ্ঞ বিচারক ওই রায় ঘোষনা করেন। এই মামলার রায়ে রাস্ট্রপক্ষের আইনজীবি স্পেশাল পিপি এডভোকেট লুৎফুর হমান তালুকদার জনকণ্ঠকে দেয়া এক প্রক্রিয়ায় বলেন, আমিসহ নির্মম হত্যার শিকার টিপুর পরিবারের সকল সদস্যরা এই রায়ে বেজায় খুশী। তারা চান এই রায় দ্রুত বাস্তবায়ন হউক। অন্যদিকে বিবাদী পক্ষের আইনজীবিদের একজন জানিয়েছেন, তারা এই রায়ে তেমন খুশী নন। তবে সংশ্লিস্ট এই রায় পর্যালোচনা শেষে তাদের মক্কেলের পক্ষে আপীল করার প্রয়োজন রয়েছে কি না তা ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে ।
×