ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও অসংখ্য ভুল

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৩ আগস্ট ২০১৭

এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও অসংখ্য ভুল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এসএসসির মতো এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ফলে অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পুনর্নিরীক্ষণে বিভিন্ন বিষয়ে নম্বর বৃদ্ধি ছাড়াও পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। আগের ফলে ফেল হলেও তাদের অনেকেই পাস করেছে। আগে জিপিএ-৫ না পেলেও পুনর্নিরীক্ষণে পেয়েছে জিপিএ-৫। সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা বোর্ডে, যেখানে এক হাজার ৪৫ জনের জিপিএ পরিবর্তন ছাড়াও আগে ফেল করা ১৬৯ জন শিক্ষার্থী নতুন করে পাস করেছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৪ জন শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড পৃথক পৃথকভাবে তাদের পুনর্নিরীক্ষণকারী শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করেছে। এর আগে চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতেও অনেক শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছিল। এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনের ফল প্রকাশ শেষেও দেখা যায়, পরিবর্তনের চিত্র প্রায় একই। শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব-স্ব বোর্ডে গিয়ে নিজেদের ফল জানতে পারছেন। কিন্তু কেন ফলে বিশাল এই সংখ্যার পরিবর্তন? এ প্রশ্নের উত্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সকলেই বলছেন, দ্রুত ফল প্রকাশের কারণে তাড়াহুড়াই এই অবস্থার মূল কারণ। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়ছে। এক. কিছু খাতায় নম্বরের যোগফল ঠিক ছিল না। দুই. কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করা হয়নি। আর তিন. ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও বেশ কিছু ভুল পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। প্রক্রিয়া সহজ, হয়রানিমুক্ত ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় এসএসসির মতো ব্যাপক সাড়া পড়েছিল এইচএসসির খাতা পুনর্নিরীক্ষণেও। পুনর্নিরীক্ষণে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ফলে সবচেয়ে বেশি ভুল ধরা পড়েছে। যদিও এ বোর্ডে শিক্ষার্থীর সংখ্যাও বেশি। এসএসসিতে কেবল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডেই এক হাজার ৬৭৯ জন শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছিল। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৭০ জন শিক্ষার্থী। এইচএসসিতে দেখা গেছে, এ বোর্ডে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৪ জন। মূল ফলাফল প্রকাশের পর ৪৭ হাজার ৭৩৫ জন পরীক্ষার্থী ১৩টি বিষয়ে তাদের এক লাখ ৩৩ হাজার ৬২২টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল। ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে চট্টগ্রাম বোর্ডে এসএসসিতে ফেল থেকে পাস করেছিল ৫২ শিক্ষার্থী। ৬৮৭ শিক্ষার্থীর ফল বা গ্রেড পরিবর্তন হয়েছিল। এর মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৬৭ জন। মঙ্গলবার এসএসিতে গিয়ে দেখা গেল, পুনর্নিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস করেছে ৫০ শিক্ষার্থী, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৩ জন। পুনর্নিরীক্ষণে গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৩৩২ জন পরীক্ষার্থীর। অন্যদিকে ফেল করা ২৩ জনের গ্রেড বাড়লেও তারা পাস করতে পারেনি। এ বোর্ডে ১৪ হাজার ৯৪৯ জন পরীক্ষার্থী ১৩টি বিষয়ে তাদের ৪৭ হাজার ৭৯০টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল। সিলেট শিক্ষা বোর্ডেও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক গোলাম কবির তপাদার জানিয়েছেন, এ বোর্ডে নম্বর পরিবর্তন হয়েছে ১১৩ জনের। ৩৯ জনের ফল বা গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। ফেল থেকে পাস করেছে ১৩ জন। এছাড়া নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক জন শিক্ষার্থী। যশোর শিক্ষা বোর্ডে ফল পরিবর্তন হয়েছে ১১৬ জনের। ফেল থেকে পাস করেছে ৩৮ জন এবং নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৪ জন। এছাড়া আগে ফেল বলা হলেও এখন তাদের একজন জিপিএ-৫ পেয়েছে। কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডেও ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে অনেকের। চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আবদুল খালেক জানিয়েছেন, তাদের বোর্ডে পরিবর্তন হয়েছে ২৩৩ জনের নম্বর। ফেল থেকে পাস করেছে ৮৩ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে একজন। এদিকে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম পরীক্ষাতে পরিবর্তন হয়েছে ১৭৩ জনের ফল। ফেল থেকে পাস করেছে ১০৪ জন পরীক্ষার্থী। এছাড়া নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৮ জন শিক্ষার্থী। জানা গেছে, এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলের পর ইংরেজী খাতা চ্যালেঞ্জ করেছিল রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী। ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজী বিষয়ে এবার ৫৫ হাজারের বেশি আবেদন পড়ে। প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী তিন লাখ বিষয়ে নম্বর পরিবর্তনের আশায় পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিলেন। গত বছরের তুলনায় এবার আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়ে ২৫ হাজার। আর পত্রের সংখ্যা বেড়েছে ৪৩ হাজারের বেশি। আবেদন মূল্যায়ন করে দেখা গেছে, প্রতিবছরের মতো এবারও সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছিল ঢাকা বোর্ডে। এই বোর্ডে ৪৭ হাজার ৭০০ শিক্ষার্থী এক লাখ ৩৩ হাজার ২০০ খাতার ফল পরিবর্তন করার আবেদন করে। এ বোর্ডেও সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়ে ইংরেজীতে। ইংরেজী দুটি পত্রের আবেদনের সংখ্যা ১২ হাজার ৩২৫টি। এরপর রয়েছে চট্টগ্রাম। ১৪ হাজার ৯৪৯ পরীক্ষার্থী ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে এখানে। ১৩টি বিষয়ে ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য এসব পরীক্ষার্থী আবেদন করে। এর মধ্যে ইংরেজী প্রথমপত্রে সর্বোচ্চ ছয় হাজার ৪৮৮টি খাতা পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন জমা পড়েছিল। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ছয় হাজার ১২৬ জন আবেদনকারী ১৭ হাজার ৬৯৪টি পত্রের ফল পরিবর্তন করতে আবেদন করেছিল। বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ১২ হাজার ৩১৪ জন আবেদনকারী ৩৬ হাজার ৪১৩টি পত্রের জন্য আবেদন করে। রাজশাহীতে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছিল ১২ হাজার ২৭০ জন, যশোর বোর্ডে ২৩ হাজার ৪৬৬টি পত্রের নম্বর বদলের জন্য আবেদন করেছে ১১ হাজার ২৩১ জন শিক্ষার্থী। দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে ১০ হাজার ৪৬ জন শিক্ষার্থী। এবার সবচেয়ে খারাপ ফল করা কুমিল্লা বোর্ডে আবেদনের হিড়িক পড়েছিল। পুনর্নিরীক্ষণের জন্য এই বোর্ডে আবেদন করে ১২ হাজার ৭০ জন শিক্ষার্থী। মোট ৩৩ হাজার ৭৩৩টি পত্রের আবেদন জমা পড়ে। এই বোর্ডে ইংরেজীতে আবেদন পড়ে ১২ হাজার ৯৭০টি। আইসিটিতে দুই হাজার ৮১৫টি। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে মোট ১৪ হাজার ৯১৭ জন আবেদনকারী ৪৮ হাজারের বেশি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করে। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ১০ হাজার ২৪৩ জন আবেদনকারী ২১ হাজারের বেশি পত্রের ফল পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিল।
×