ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অস্ত্র গুলি জঙ্গীবাদী বই ও লিফলেট উদ্ধার

না’গঞ্জে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ৩ জঙ্গী গ্রেফতার

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৩ আগস্ট ২০১৭

না’গঞ্জে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ৩ জঙ্গী  গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তিন জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১১ সদস্যরা। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি বিদেশী পিস্তল, ৩ রাউন্ড গুলি, একটি চাপাতি, একটি চাকু এবং বেশকিছু জঙ্গীবাদী বই ও লিফলেট। সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে অবস্থিত র‌্যাব-১১-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল কামরুল হাসান এ তথ্য জানান। এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেনÑ র‌্যাব-১১-এর উপঅধিনায়ক মেজর আশিক বিল্লাহ ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মশিউর রহমান ও সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আলেপউদ্দিন। গ্রেফতারকৃতরা হলোÑ ঢাকার কেরানীগঞ্জের আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান (৩২), ময়মনসিংহ জেলার সদর থানার সৈয়দ রায়হানুল আহসান ওরফে নাফিস (৩২) ও চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু উমামা আল বাহিরী (২৭)। র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, সোনারগাঁয়ে একটি জঙ্গী সংগঠনের বেশকিছু সদস্য নাশকতার পরিকল্পনা নিয়ে গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বন্দর ও রূপগঞ্জে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত সদস্যরা স্বীকার করে, তারা নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির (সারোয়ার-তামিম গ্রুপের) সক্রিয় সদস্য এবং তারা সাংগঠনিক কর্মকা-ের সমন্বয় ও নাশকতার পরিকল্পনার জন্য গোপন বৈঠকে মিলিত হয়েছিল। সিও জানায়, গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান ওরফে রুবেল ওরফে সুফিয়ান ২০০২ সালে তানজিম আল ইসলাম নামক মৌলবাদী সংগঠনের মাধ্যমে জিহাদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং ২০০৪ সালে তার পিতার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দাউদের মাধ্যমে হানাফি মতাদর্শ থেকে সালাফি মতাদর্শে মতান্তরিত হয়। ২০০৬ সালে এক ‘স্যার’-এর মাধ্যমে সে জেএমবিতে যোগদান করে দাওয়াতী কাজ করতে থাকে। সে জসিম উদ্দিন রাহমানির জঙ্গী সংক্রান্ত কর্মকা-ের একান্ত সহকারী হিসেবে প্রায় চার বছর কাজ করেছে এবং জসিম উদ্দিন রাহমানি গ্রেফতার হওয়ার পর সে মাওলানা আবদুল হাকিমের সহকারী হিসেবে এক বছর কাজ করেছে। মূলত, মাওলানা আবদুল হাকিম গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে ইমরান আহমেদের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করে আসছিল। আবদুর রহমান ২০০৬ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রায় এগার বছর মূল জেএমবির সদস্য হয়ে কাজ করে জেএমবির সদস্য সদস্য সংগ্রহ করেছে। পরবর্তীতে সে ২০১৬ সালে তার গুরু কথিত ‘স্যার’-এর মাধ্যমে জেএমবির (সারোয়ার-তামিম) গ্রুপে যোগদান করে দাওয়াতী শাখা থেকে সামরিক শাখায় আত্মপ্রকাশ করে। আবদুর রহমান ইতোপূর্বে র‌্যাব-১১ কর্তৃক গ্রেফতারকৃত শূরা সদস্য ইমরান আহমেদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করার কাজ হাতে নিয়েছিল। সিও আরও জানান, গ্রেফতারকৃত সৈয়দ রায়হানুল আহসান নাফিস সে চাকরির পাশাপাশি মূল জেএমবি ও পরবর্তী জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের দাওয়াতী, আইটি ও গবেষণা শাখার একজন সক্রিয় সদস্য। ২০০৭ সালে ‘স্যার’-এর মাধ্যমে জেএমবিতে সক্রিয় হয় এবং দাওয়াতী কাজ শুরু করে। কম্পিউটারের ওপর দক্ষতার কারণে জেএমবির শীর্ষ পর্যায়ের অনেক সদস্যদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠাতা বৃদ্ধি পায়। ২০০৭-২০১৫ সাল পর্যন্ত সে মূল জেএমবির হয়ে ঢাকা অঞ্চলের দাওয়াতী ও সাংগঠনিক কাজ পরিচালনা করত। ২০১৫ সালের শেষদিকে সে কথিত ‘স্যার’-এর মাধ্যমে জেএমবির (সারোয়ার-তামিম) গ্রুপে যোগদান করে। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ ইমাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু উমামা আল বাহিনী সে হুজির পক্ষে কিছুদিন দাওয়াতী কাজ করেছে। পরবর্তীতে সারোয়ার-তামিম গ্রুপে যোগদান করে এবং জঙ্গী হামলা সংক্রান্ত বিভিন্ন কলাকৌশল ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করে সদস্যদের মাঝে প্রচারের কাজ করত। গ্রেফতারকৃত আবদুর রহমান ও মোহাম্মদ ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে রূপগঞ্জ ও ফতুল্লা থানায় দুটি মামলা রয়েছে। এছাড়াও গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও র‌্যাব জানায়। গাজীপুরে জেএমবির চার সদস্য গ্রেফতার স্টাফ রিপোর্টার গাজীপুর থেকে জানান, জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নিষিদ্ধ জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। তারা নাশকতামূলক কর্মকা- করার উদ্দেশে গাজীপুরে অবস্থান করছিল বলে মঙ্গলবার বিকেলে র‌্যাব জানিয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- চাঁদপুর জেলার মতলব (উত্তর) থানার খাগুরিয়া দক্ষিণপাড়া এলাকার শাহজালালের ছেলে মোঃ জুয়েল হোসেন (২৫), শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতি থানার বাগেরভিটা এলাকার মোঃ সালেহ তালুকদারের ছেলে মোঃ আব্দুল হালিম (৩২), জেলার জয়দেবপুর থানার নান্দুয়াইন এলাকার মৃত নুরুল ইসলাম ম-লের ছেলে আফজাল হোসেন (৩৮) এবং একই এলাকার মোঃ আবু সাইদ ম-লের ছেলে মোঃ জহিরুল হক ওরফে জহির (৩৪)।
×