ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে প্রশাসনের নামমাত্র ত্রাণ বিতরণে ক্ষোভ বানভাসীদের

প্রকাশিত: ২২:১৯, ২২ আগস্ট ২০১৭

টাঙ্গাইলে প্রশাসনের নামমাত্র ত্রাণ বিতরণে ক্ষোভ বানভাসীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ প্রশাসন থেকে বারবার পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুদের কথা বলা হলেও বাস্তবে এর কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যায় কবলিত ও ক্ষতিগ্রস্থ হলেও প্রশাসন থেকে মানমাত্র ত্রাণ বরাদ্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ বানভাসিদের। যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নামমাত্র ত্রাণ পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বন্যার্তরা। এদিকে বন্যার পানি কমলেও নাগরপুর উপজেলায় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়ে রয়েছে। জানা গেছে, ভূঞাপুর উপজেলায় এবারের বন্যায় লক্ষাধিক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়ে। এছাড়াও অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ এখনও ত্রাণ সহায়তা পায়নি। উপজেলা প্রশাসন থেকে চারটি ইউনিয়নে নামমাত্র ৫ কেজি করে চাল বিতরণ করেছে। এতে বন্যার্তদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। আবার অনেকেই ত্রাণ বিতরণের কথা জানেন না বলে জানান। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কষ্টাপাড়া গ্রামের রতন চন্দ্র জানান, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ত্রাণ দিচ্ছে এমন কথা শুনিনি। পানির উপর বাস করছি। এক বেলা খেয়ে দু-বেলা না খেয়ে থাকছি। ত্রাণ নিতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, মাত্র ৫ কেজি চাল দিয়ে কি করমু। নামমাত্র চাল নিতে পানিতে ভিজে আসতে হয়েছে। আগে জানলে আসতাম না। অনেক বন্যার্ত পরিবার ত্রাণ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যান। ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন পৃথকভাবে নগদ টাকা ও চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। অজূর্না, গোবিন্দাসী, গাবসারা ও নিকরাইল ইউনিয়নে ১৪শ’ পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল ও ১৫০জনকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে। গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু জানান, বন্যার্ত ৪শ’ পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে। অজূর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী মোল্লা জানান, ইউনিয়নের এক হাজার পরিবারকে ৫ কেজি করে চাল ও ১৫০জনকে শুকনা খাবার দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বন্যার পানি কমলেও টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে উপজেলার শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্লাবিত হয়েছে। এরপরও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠদান বন্ধ থাকলেও ছুটি ঘোষনা করা হয়নি। শিক্ষকেরা হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমর পানি ভেঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গেলেও সেখানে শিক্ষার্থী উপস্থিতি নেই বললেই চলে। কোমর পানি ভেঙ্গে বাঁচ্চাদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে অভিভাবকরা রাজি নন। এবারের বন্যায় উপজেলার কাঠুরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কান্দাপাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শান্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নয়াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আলোকদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পংবড়টিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলমাইদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কামুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৫৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৮০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বন্যায় উপজেলার বনগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়, মামুদনগর উচ্চ বিদ্যালয়, পচাঁসারুটিয়া মেহের আলী খান উচ্চ বিদ্যালয়, জনতা ডিগ্রী কলেজ, নাগরপুর সরকারি কলেজসহ ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার কান্দাপাচুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম জানান, প্রবল বন্যায় শ্রেণিকক্ষগুলোতে কোমর পানি উঠায় আমি কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ আমাকে স্কুল ছুটির বিষয়ে সঠিক কোন নির্দেশনা দেয়নি। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী না আসলেও আমরা প্রতিদিন কষ্ট করে এসে ফিরে যাচ্ছি। এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ করার কোন নির্দেশনা নেই। কারণ অনেক জায়গায় বন্যার্ত মানুষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিচ্ছে। তবে পানি না কমা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার প্রয়োজন নেই। শিক্ষকেরা প্রতিষ্ঠানে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করবেন।
×