ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিএফডিসিতে নায়ক রাজকে শ্রদ্ধা নিবেদন

প্রকাশিত: ২১:২৩, ২২ আগস্ট ২০১৭

বিএফডিসিতে নায়ক রাজকে শ্রদ্ধা নিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এফডিসির প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ভেতরের চত্বর পর্যন্ত লোকে লোকারন্য। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া মুসলধারে বৃষ্টির পর রৌদ্রের প্রচন্ড প্রখরতা, এর কোন কিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি কাউকে। চলচ্চিত্রাঙ্গনের ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি উৎসুক মানুষের ভিড়ে পুরো এলাকাজুড়ে তিল ধারনের জায়গা নেই বললে চলে। সবাই প্রিয় অভিনেতা, প্রিয় মানুষ, নায়ক রাজ রাজ্জাককে এক নজর শেষ দেখার জন্য যেন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। সবার মুখে বিষন্নতার ছাপ। অনেকের চোখের কোনায় পানি দেখে মনে হলো নিরবে কাঁদছেন প্রিয় অভিনেতার বিয়োগ ব্যথায়। পুরো এলাকাজুড়ে পুলিশি নিরাপত্তার বেষ্টনি। অনেকে প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতে না পেরে বাইরে অবস্থান করছে। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে প্রয়াত নায়কের মরদেহ বহনকারী গাড়ী এসে চত্বর প্রাঙ্গনে তৈরি বেদির পাশে অবস্থান করে। সঙ্গে ছিলেন প্রয়াত রাজ্জাকের বড় ছেলে চিত্রনায়ক বাপ্পা রাজ ও সম্রাট। সেখানে গাড়ীর খোলা দরজার ফাক দিয়েই এক নজর দেখা এবং একে একে শ্রদ্ধা জানায় বিভিন্ন সংগঠন ও ব্যক্তিবর্গ। শ্রদ্ধা জানায় তথ্য মন্ত্রনালয়, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি, চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিবার, সিনেম্যাক্স মুভি পরিবার, বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক লীগ, বাংলাদেশ ফিল্ম ক্লাব, চলচ্চিত্র গ্রাহক সংস্থা, চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি, সিনে স্থির চিত্র গ্রাহক সমিতি, জাসাসসহ বিভিন্ন সংগঠন। রাজ্জাককে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, চলচ্চিত্র প্রযোজক, পরিচালক ও গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার, অভিনেতা আলমগীর, চিত্রনায়িকা ববিতা, শাবনূর, নায়ক শাকিব খান, অবিনেতা সুব্রত, আলীরাজ, রুবেল, ফেরদৌস, অহম্মদ শরিফ, ওমার সানি, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি অভিনেতা মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক নায়ক জায়েদ খানসহ আরও অনেকে। প্রিয় অভিনেতকো শ্রদ্ধা জানানোর পর সবাই সারিবদ্ধ হয়ে প্রথম নামাজে জানাজায় শরিখ হয়। এর আগে সবার উদ্দেশ্যে রাজ্জাকের বড় ছেলে বাপ্পারাজ বলেন, আমার আব্বা সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন। তার আত্মা যেন শান্তিতে থাকে। আমার আব্বার ব্যবহারে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে তাকে মাফ করবেন। যদি আব্বার কাছে কারও কোন লেন-দেন থাকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে তথ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের পথিকৃৎ রাজ্জাক ভাইয়ের অবদান ভাষায় ব্যক্ত করা যাবে না। শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি চলচ্চিত্র নিয়ে ভেবেছেন। আমরা সরকারিভাবে তার এই কর্মকান্ডকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব। যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম তার থেকে শিক্ষা নিতে পারে। আমি তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ববিতা বলে, হঠাৎ এই সংবাদটা শোনার পর কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তার সঙ্গে অনেকগুলো ছবিতে জুটিবদ্ধ হয়ে কাজ করেছি। সব স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে একে একে। আমি কিছুতেই মানতে পারছি না নায়করাজ আর নেই। আল্লাহ তাকে বেহেশত নসিব করুন। আলমগীর বলেন, আমার বলার কিছুই নাই। পিতা হারালে সন্তানের যেমন লাগে আমারও তেমন লাগছে। গাজী মাজহরুল আনোয়ার বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যদি কোনদিন বিশ্বের দরবারে স্থান করে নিতে পারে তাহলে, সত্যিকার অর্থে রাজ্জাক ভাইয়ের স্বপ্ন সার্থক হবে, তার আত্মা শান্তি পাবে। আহম্মদ শরিফ বলেন, আমরা একজন অভিভাবক হারালাম। এ শূন্যতা পুরণ হবার নয়। রুবেল বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের যে শূভ সুচনা হয়েছিল তার একটি অধ্যায়ের অবসান হলো। শাকিব খান বলেন, এখনকার প্রজন্ম এবং আগামী যত প্রজন্ম আসবে তাদের কাছে নায়ক রাজ রাজ্জাক প্রেরণা হয়ে থাকবে। আমরা একজন আইডল হারালাম। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। ওমর সানী বলেন, নায়ক রাজ রাজ্জাককে আমরা অনেক অবেলায় হারালাম। তার আরো অনেক কিছু দেয়ার ছিলো চলচ্চিত্রকে। তরুণ প্রজন্মের আইডল হিসেবে তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করি। শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কফিন নেয়া হবে গুলশানের আজাদ মসজিদে। সেখানে বেলা আড়াইটার দিকে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে নায়ককে। নায়করাজ রাজ্জাক গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
×