ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদে ঘরে ফেরা সড়কের বেহাল দশা নিয়ে দুশ্চিন্তা

৩০ আগস্টের টিকেটের জন্য কমলাপুরে উপচেপড়া ভিড়

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২২ আগস্ট ২০১৭

৩০ আগস্টের টিকেটের জন্য কমলাপুরে উপচেপড়া ভিড়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কোরবানির ঈদ সামনে রেখে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির চতুর্থ দিন টিকেট প্রত্যাশীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে। টিকেট সংগ্রহে অনেকেই ২০ থেকে ২২ ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। চাহিদা বেশি থাকায় সবাই টিকেট পাননি। যারা পেয়েছেন তারা হাসিমুখে বাড়ি ফিরেছেন আর যারা পাননি তাদের খালিহাতেই ফিরতে হয়েছে। এদিকে লঞ্চের অগ্রিম টিকেট সংগ্রহেও সদরঘাট টার্মিনালে প্রচুর ভিড় দেখা গেছে। দ্বিতীয় দিনের লঞ্চের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর কেবিনের টিকেট দেয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ৮টা থেকে কমলাপুর স্টেশনের তেইশটি কাউন্টার থেকে একসঙ্গে টিকেট বিক্রি শুরু হয়। দিনভর বিক্রি হয়েছে ৩০ আগস্ট ঈদযাত্রার অগ্রিম টিকেট। আজ শেষ দিনে দেয়া হবে ৩১ আগস্টের অগ্রিম টিকেট। কমলাপুর রেলস্টেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২ সেপ্টেম্বর ঈদ ধরে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ ১ থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারী ছুটি। তাই ৩০ ও ৩১ আগস্টের টিকেটের চাহিদা বেশি। আজ মঙ্গলবার ট্রেনের টিকেট প্রত্যাশীর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রবিবার ৩১টি আন্তঃনগর ট্রেনের বিভিন্ন গন্তব্যের ২২ হাজার ৪৯৬টি টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে। ৩৫ ভাগ কোটার জন্য রেখে বাকি টিকেট কাউন্টার থেকে পাচ্ছেন যাত্রীরা। এছাড়া ঈদের বিশেষ ট্রেনের দুই হাজার ৬০৬টি টিকেটও কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হচ্ছে। ৩০ আগস্টের টিকেটের জন্য রবিবার ভোরে কমলাপুর স্টেশনের কাউন্টারের সামনে আসেন রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের পুলিশ সদস্য আইয়ুব আলী। অপেক্ষমাণদের লাইনে তিনি ছিলেন সবার আগে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর পদ্মা এক্সপ্রেসের টিকেট পেয়েছেন তিনি। বললেন, কাল সারাদিন, সারারাত ছিলাম। খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট, ঘুমাতে পারিনি। গোসল তো দূরের কথা, এখনও চোখ জ্বালা করছে। শুধু পরিবারের মুখের দিকে তাকিয়ে এ কষ্ট সহ্য করেছি। এখন ভালয় ভালয়ে যেতে পারব বলে আশা করি। আইয়ুবের ঠিক পেছনেই ছিলেন কাদের মিয়া। তিনি জানালেন, রাস্তাঘাটের অবস্থা খুব খারাপ। এ কারণে ট্রেনে যেতে চায় সবাই। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। খাবার পানির খুব কষ্ট হয়েছে, খাবারও খেতে পারিনি। তারপরও টিকেট পেলে এসব কষ্ট আর থাকে না। জামালপুরের অগ্নিবীণা ট্রেনের টিকেটের জন্য রবিবার দুপুরে এসেছিলেন সোলাইমান হোসেন নামে একজন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর টিকেট পেয়েছেন তিনি। অনলাইনে আরও বেশি টিকেট দেয়া হলে মানুষের কষ্ট কিছুটা কমবে বলে তার ধারণা। নারীদের জন্য সংরক্ষিত দুটি কাউন্টারেও যথেষ্ট ভিড় দেখা গেছে। সকালে কমলাপুর গিয়ে দেখা গেছে নারী-পুরুষের লাইন প্ল্যাটফর্ম ছাড়িয়ে মূল সড়কের কাছাকাছি আসে। নারী লাইনের টিকেট পেয়ে খুশিতে যেন আত্মহারা দিনার। জানালেন, যাবেন দিনাজপুর। তাই ভোরে টিকেট কাটতে আসেন। এসি টিকেট না পেয়ে শেষ পর্যন্ত নন-এসি চেয়ার কেটেছেন। জানালেন, টিকেট পেয়েছি এটাই বড় শান্তি। জেসমিন জানালেন, এসি টিকেটের জন্য সিøপ নেয়া হলেও ১০ জনের পর কাউন্টার থেকে টিকেট না থাকার কথা বলা হচ্ছে। তাই চট্টগ্রামের ট্রেনের টিকেট না পেয়ে খালিহাতে বাড়ি ফিরতে হয়েছে তাকে। দেড় বছরের ছেলে আলিফ আর ননদকে নিয়ে রবিবার রাত ৮টা থেকে নারীদের কাউন্টারের সামনে ছিলেন এলিফ্যান্ট রোডের বাসিন্দা রহিমা বানু। সোমবার সকাল সোয়া ৮টায় জামালপুর যাওয়ার তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি এসি টিকেট কিনতে পেরেছেন তিনি। বললেন, আমাদের এলাকার সড়ক যোগাযোগ খুব খারাপ, রাস্তার অবস্থা ভাল নয়। এ কারণে বাচ্চা নিয়ে এখানে আসতে হয়েছে। এখন টিকেট পেয়েছি, খুবই খুশি লাগছে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরার টিকেট নিয়ে সোমবারও অভিযোগ করেছেন টিকেট প্রত্যাশীরা। খুলনার সুন্দরবন এক্সপ্রেসের এসি টিকেটের জন্য সকালে কমলাপুরে আসা রাজউকের উপ-পরিচালক হামিদুল ইসলাম জানান, আগের দিনও লোক পাঠিয়েছিলেন, এসি টিকেট পাননি। আমার সিরিয়াল ১১ নম্বরে। অথচ এসি টিকেট নাকি শেষ। তাদের সঙ্গে তো ঝগড়া করে পারব না। তাহলে এত অপেক্ষা করে লাভটা কী হলো!
×