ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে ৭ খুন

খুনীদের মৃত্যুদন্ড-বহাল চান স্বজনরা

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২২ আগস্ট ২০১৭

খুনীদের মৃত্যুদন্ড-বহাল চান স্বজনরা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুন মামলায় নিম্ন আদালতে নূর হোসেন, র‌্যাব-১১ চাকরিচ্যুত অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তারেক সাঈদ, মেজর আরিফ হোসেন, কমান্ডার এমএম রানাসহ ২৬ আসামির নিম্ন আদালতে দেয়া ফাঁসির দ- আপীল বিভাগের ডেথ রেফান্সেও বহাল থাকার প্রত্যাশা করেছেন নিহতের আত্মীয়স্বজনরা। আজ মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করা হবে। সোমবার বিকেলে এ বিষয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় নিহত নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও সাত খুন মামলার বাদী সেলিনা ইসলাম বিউটি বলেছেন, নূর হোসেন ও র‌্যাবের তিন কর্মকর্তাসহ নিম্ন আদালতে যে ২৬ জনের ফাঁসির রায় দেয়া হয়েছে উচ্চ আদালতের ডেথ রেফারেন্স ও আপীলের রায়েও যেন আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড- বহাল থাকে এ আশাই করি। উচ্চ আদালতও যেন আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- দেয় যা সারাদেশের মানুষ দেখুক। এ রায়ের মাধ্যমে বাংলাদেশে সাত খুনের মতো এ নৃশংস হত্যাকা- যেন আর না ঘটে। আর রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর করা হয় এটাই আমরা চাই। আমরা চাই আর কোন নূর হোসেন যেন সিদ্ধিরগঞ্জে সৃষ্টি না হয়। তিনি বলেন, সাত খুন ছিল পরিকল্পিত। আমরা নিহতের স্বজনরা প্রিয়জনকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছি। তিনি আরও বলেন, আমার স্বামীসহ ৭ জনকে অপহরণ করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৭ খুন, ৭ জন মানুষকে হত্যা করা হয়নি, ৭টি পরিবারকে শেষ করে দেয়া হয়েছে। নিহত চন্দন সরকারের গাড়ির চালক ইব্রাহিমের স্ত্রী হনুফা বেগম বলেন, সাত খুনের মামলা নিম্ন আদালতে আসামিদেরমৃত্যুদন্ডর রায় দেয়া হয়েছে। উচ্চ আদালতেও যেন এ রায় বহাল থাকে এ আশাই করি। এ রায়টা যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। আমরা চার বছর ধরে কষ্ট করছি। আমার মতো আর কেউ যেন স্বামী হারা না হয়। টাকার অভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি না। টাকার অভাবে রায় শুনতে ঢাকাতে যেতে পারব না। রায় শোনার জন্য টিভির পর্দার সামনে বসে থাকব। নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের গাড়িচালক নিহত জাহাঙ্গীরের স্ত্রী সামসুন নাহার নুপুর বলেন, নৃশংস মৃত্যুদন্ড পুরো দেশ এ রায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি করতে কেউ সাহস পাবে না। নুপুর, নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তাসহ নিম্ন আদালতের দেয়া ২৬ জনের ফাঁসির রায় বহাল রাখার দাবি জানান। নিহত মনিরুজ্জামান স্বপনের ছোট ভাই মিজানুর রহমান রিপন জানান, আমরা আমাদের ভাই হারিয়েছি। আমরা চাই খুনীদের ফাঁসি হোক। নিহত তাজুল ইসলামের বাবা আবুল খায়ের জানান, আমাদের একটাই প্রত্যাশা। আমাদের প্রত্যাশা হলোÑ সন্ত্রাসীদের বিচার হোক। নি¤œ আদালতে যে রায় হয়েছে উচ্চ আদালতে যেন এ রায়টি বহাল থাকে এটাই আমাদের আশা এবং এটাই আমাদের শেষ ভরসা। তিনি আরও জানান, এ রায়টি যেন দ্রুত কার্যকর করা হয়। যে সকল আসামিরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে তাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দ্রুত গ্রেফতার করে তাদের সাজা কার্যকর করার ব্যবস্থা করবে এটাই আমাদের চাওয়া। সাত খুনে নিহত ৫ পরিবারের মানবেতন জীবনযাপন সাত খুনে নিহত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, সিনিয়র আইনজীবী চন্দন সরকার, তার বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, নজরুলের সহযোগী ৭নং ওয়ার্ড যুবলীগের কর্মী মনিরুজ্জামান স্বপন, জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম, স্বপনের প্রাইভেটকার চালক জাহাঙ্গীর ও চন্দন সরকারের প্রাইভেটকার চালক ইব্রাহিম। এদের মধ্যে নিহত দুই প্রাইভেটাকার চালক জাহাঙ্গীর ও ইব্রাহিম, নজরুলের বন্ধু সিরাজুল ইসলাম লিটন, সহযোগী তাজুল ইসলাম ও যুবলীগ নেতা মনিরুজ্জামান স্বপনের পরিবার এখন অর্থকষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছে। ৫টি পরিবার তাদের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তিদের হারিয়ে পরিবারগুলো এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ছেলেমেয়েদের টাকার অভাবে লেখাপড়া করাতে পারছে না। উল্লেখ্য, গত ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণের তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদী থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে চাঞ্চল্যকর ৭ খুন মামলার রায়ে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ এনায়েত হোসেন নূর হোসেন ও র‌্যাবের সাবেক তিন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদ- ও ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। নিহতদের পরিবারের প্রত্যাশা মঙ্গলবার উচ্চ আদালতে ডেথ রেফান্সে আপীল রায়ের দিন ধার্য রয়েছে।
×